সাধ থাকলেও দাম বেশি হওয়ার কারণে সাধ্যে নেই ক্ষুদ্র মাছ ব্যবসায়ীদের। আর সেই কারণে বিক্রিতে মন্দা লেগেছে বাংলাদেশি ইলিশের।
স্বাদ ও গন্ধে পদ্মা পাড়ের দেশ বাংলাদেশি ইলিশের কোন তুলনাই হয় না। একটা সময় নিয়মিত ব্যবধানে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশের ইলিশ পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতবর্ষে ঢুকলেও সেই দিন আর নেই। যদিও গত কয়েক বছর ধরে কেবল মাত্র দুর্গাপূজার মৌসুমে খুব সামান্য পরিমাণ হলেও ইলিশ রপ্তানি করছে বাংলাদেশ।
আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে ভারতে ইলিশ রপ্তানীর অনুমতি দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। ৪৯ টি সংস্থাকে আগামী ১২ অক্টোবর পর্যন্ত এই মাছ রপ্তানির অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিকালের দিকে বেনাপোল-পেট্রাপোল স্থল সীমান্ত দিয়ে চলতি মৌসুমে ইলিশের প্রথম চালান এসে পৌঁছায় ভারতে। এদিন রপ্তানি হয় ১০ টি প্রতিষ্ঠানের ৫৪ মেট্রিক টন ইলিশ।
প্রতিটি ইলিশের ওজন ১ কেজির আশেপাশে। পরবর্তীতে ধাপে ধাপে বাকি ইলিশ ভারতে পৌঁছাবে। পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার পেট্রাপোল স্থলবন্দর থেকে এই ইলিশ সড়ক পথে চলে আসে হাওড়া, শিয়ালদহ, পাতিপুকুরসহ পাইকারি মাছ বাজারগুলিতে। বাংলাদেশি ইলিশ আসার খবরে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকেই চারদিকেই শোরগোল পড়ে যায়।
এদিন সকাল থেকেই রাজ্যটির সবচেয়ে বড় হাওড়ার পাইকারি মাছ বাজারে বাংলাদেশের ইলিশের বেচাকেনা শুরু হয়। কিন্তু মাছের চাহিদা থাকলেও দামের কারণে বিক্রিতে মন্দা। দামের কারণে অনেকেই কম পরিমাণ মাছ কিনেছেন। আর যেসব মাছ ব্যবসায়ীরা মাছ কিনেছেন তারাও স্বীকার করছেন খুচরা বাজারে তাদের এই মাছ বিক্রি করতে বেশ কিছুটা অসুবিধার মুখে পড়তে হতে পারে।
এদিন হাওড়া পাইকারি মাছ বাজারে ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। এমনিতেই বছরের প্রতিটা দিনই গমগম তাকে এই মাছের বাজার। কিন্তু বাংলাদেশে ইলিশের উপস্থিতির খবর পেয়ে অনেক খুচরা বিক্রেতারাই সাত সকালে উপস্থিত হন মাছ কিনতে। হাওড়ার পাইকারি বাজার থেকে ইলিশ মাছ কিনেই সেইসব ব্যবসায়ীরা স্থানীয় বাজারে বিক্রি শুরু করে দেন। ফলে আজ থেকেই বাঙালির পাতে পড়তে চলেছে এই ইলিশ।
মাছ ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, আজকে ইলিশের দাম অনেকটাই বেশি। তবে পরবর্তী ধাপে বাংলাদেশি ইলিশ ভারতে প্রবেশের সাথে সাথে মাছের দাম কিছুটা কমতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তারা।
সুকুমার মল্লিক নামে এক মাছ ব্যবসায়ী এদিন হাওড়া বাজারে মাছ কিনতে এসে জানান, 'এক কেজি ওজনের বেশি মাছের দাম কেজিপ্রতি ১৬০০ থেকে ১৭০০ রুপি বিক্রি হচ্ছে।' তিনি জানান, এক কেজি ওজনের মাছ কেজিপ্রতি ১৪০০ রুপি হলে আমরা ১৫০০ রুপি রুপিতে বিক্রি করতে পারতাম। ক্রেতারাও তাদের সাধ্যমত কিনতে পারতেন।'
বরুণ নামে অন্য এক মাছ ব্যবসায়ী জানালেন, 'এক কেজির বেশি ওজনের মাছের দাম ১৭০০ রুপি। বাংলাদেশের তুলনায় ভারতে স্থানীয় যে ইলিশ মাছ পাওয়া যায় সেগুলো আকারে ছোট।'
হাওড়া বাজারের এক পাইকারি মাছ ব্যবসায়ী শেখ বাবলু জানান, 'পাইকারি ব্যবসায়ীরা আসছে, কিন্তু দাম একটু বেশি হওয়ার কারণে তারা চলে যাচ্ছে। তিনি আরও জানান, 'এক কেজির বেশি ওজনের মাছের দাম ১৬০০ রুপি। ১ কেজির কম ওজনের মাছের দাম ১৫০০ রুপিতে বিক্রি হচ্ছে।'
হাওড়ার এই পাইকারি বাজার থেকেই কলকাতাসহ পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন বাজারে মাছ চলে যাবে। ফলে এক কেজি ওজনের মাছের দাম স্থানীয় খুচরা বাজারে প্রায় ২ হাজার রুপির কাছাকাছি হতে পারে। সেক্ষেত্রে এত দাম দিয়ে ক্রেতারা বাংলাদেশের ইলিশ কিনবেন কিনা সেটাই বড় প্রশ্ন। কারণ এর থেকেও কম দামে পশ্চিমবঙ্গের দীঘা, কোলাঘাট, গুজরাট কিংবা মিয়ানমারের ইলিশ স্থানীয় বাজারগুলোতে মিলছে।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন