কলকাতার আরজি কর মেডিকেল কলেজ এবং হাসপাতালে এক পোস্ট গ্রাজুয়েট ট্রেইনির নৃশংস হত্যাকাণ্ডের সুবিচারের দাবিতে এখনো শহর কলকাতা ও রাজ্যটির একাধিক জেলায় চলছে প্রতিবাদ, মিছিল, বিক্ষোভ ও সমাবেশ।
আন্দোলনরত জুনিয়রদের পাশাপাশি নাগরিক সমাজ বলছে পুজো হোক, কিন্তু উৎসব নয়। অন্যদিকে রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বলছেন 'আন্দোলন অনেক হয়েছে। এবার উৎসবে ফিরুন।' এই আবহেই গোটা রাজ্যে চলছে দুর্গোৎসব। ইতোমধ্যেই মুখ্যমন্ত্রীর হাত ধরে কলকাতার বেশিরভাগ পুজোর উদ্বোধন হয়েছে।
পুজার শুরুর আগে আরজিকরের সেই তিলোত্তমার মা জানিয়েছিলেন 'যারা আমার মেয়েকে নিজের মেয়ে বলে মনে করেছেন। তারা উৎসবে ফিরলেও মণ্ডপে গিয়ে প্রতিবাদটা অন্তত করবেন।'
ফলে উৎসব প্রেমী মানুষও আর ঘরে বসে থাকতে রাজি নয়। মঙ্গলবার পঞ্চমী। কিন্তু সোমবার চতুর্থীর রাতেই কলকাতাসহ জেলার বড় বড় পূজা মণ্ডপগুলোতে ছিল উৎসাহী জনতা ভিড়। সুরুচি সংঘ, চেতলা অগ্রণী, একডালিয়া এভারগ্রীন, শ্রীভূমি স্পোর্টিং, বেহালা নতুন দল, বড়িশা ক্লাব, বাগবাজার, টালা প্রত্যয়, সন্তোষ মিত্র স্কোয়ার, বাবু বাগান, চালতা বাগান, আহিরীটোলা, কলেজ স্কয়ার, পানিহাটির শহীদ কলোনি প্রতিটি মন্ডপে মন্ডপে মানুষের ঢল।
অনেকেই জানান, পুজার প্রধান চার দিন (ষষ্ঠী, সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী) অতিরিক্ত ভিড় এড়াতেই তারা চতুর্থীর রাতে বেরিয়ে পড়েছেন প্রতিমা দর্শনে। পুজা উপলক্ষে কলকাতার রাজপথ থেকে অলিগলি সর্বত্র আলোকসজ্জা করা হয়েছে। মাইকে চলেছে মন মাতানো স্বর্ণযুগের গান।
দক্ষিণ কলকাতার চেতলা অগ্রণী ক্লাবে চতুর্থীর মাঝ রাতে গঙ্গার আরতি দেখতে উপচে পড়া ভিড় ছিল সাধারণ মানুষের। এ বছর তাদের থিম 'গঙ্গা দূষণ'। তাই প্রতিকী গঙ্গা তৈরি করে সেখানে মাঝরাতে আরতি গঙ্গা করা হয়। মানুষের ভিড় সামলাতে হিমশিম খেতে হয় বেসরকারি সংস্থার নিরাপত্তা রক্ষীদেরও। থিমের দিক থেকে গত কয়েক বছর ধরেই সুপরিচিত হয়ে উঠেছে চেতলা অগ্রণী। যেটি আবার কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমের পুজা বলেও পরিচিত।
ভিআইপি রোডের ধারে শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাবের পুজাতেও সেই ছিল সেই চেনা ভিড়। মহালয়ার দিন উদ্বোধনের পর থেকেই একটু একটু করে ভিড় বাড়তে শুরু করেছে ফায়ার সার্ভিস মন্ত্রী সুজিত বসুর পুজা বলে পরিচিত শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাবে। চতুর্থীর দিন বিকালের পর থেকেই কলকাতা ও শহরতলীর বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ আসতে শুরু করে এই ক্লাবের পুজা দেখতে। পানিহাটির শহীদ কলোনির সার্বজনীন দুর্গাপূজার এবারের থিম '৭৫-এ একশো'। অর্থাৎ ৭৫ বছরে তাদের ১০০ ফুট উচ্চতার প্রতিমা। আর সেই প্রতিভা দেখতে চতুর্থীর দিনেই তিল ধারণের জায়গা ছিল না পুজা প্যান্ডেলে।
মঙ্গলবার পঞ্চমীর সকালেও কলকাতার পুজা প্যান্ডেলগুলোতে ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। কলকাতার পার্শ্ববর্তী জেলাগুলি থেকে ট্রেনে করে কলকাতায় ঠাকুর দেখতে বেরিয়ে পড়েন পুজা প্রেমী মানুষ। প্রতিমা দর্শনের পাশাপাশি হাতিবাগান, গড়িয়াহাট, ধর্মতলা, রাসবিহারী, নিউমার্কেটসহ বিভিন্ন এলাকার শপিংমলগুলোতেও ছিল শেষ মুহূর্তের কেনাকাটার ভিড়।
বিডি প্রতিদিন/ মুসা