রবিবার, ১ জুন, ২০১৪ ০০:০০ টা

বেপরোয়া ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল

হাইকোর্টের আদেশ উপেক্ষিত, নীরব শিক্ষা মন্ত্রণালয়

ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে সেশন ফি আদায় ও পুনঃভর্তি ফি বন্ধ রাখতে হাইকোর্ট আদেশ দিলেও তা অমান্য করে অতিরিক্ত বেতন ও সেশন ফি আদায়ের অভিযোগ উঠেছে বেশকিছু প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। এ প্রতিষ্ঠানগুলোর অন্যায় আচরণ এবং নিয়ন্ত্রণে এখনো পর্যন্ত কোনো নীতিমালা করতে পারেনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখার কর্মকর্তারা জানান, তিন বছর আগে নীতিমালা করার একটি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আর কোনো অগ্রগতি হয়নি। অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিদেশি প্রতিষ্ঠানের নাম দিয়ে বাংলাদেশে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত করছে বলে তারা হাইকোর্টের আদেশও অমান্য করছে।

এদিকে হাইকোর্টের আদেশ অমান্য করে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত বেতন ও সেশন ফি আদায়ের প্রতিবাদে সোমবার ধানমন্ডিতে সমাবেশ ও মানববন্ধন করেছেন ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা। তারা অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে অবিলম্বে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান। জানা গেছে, মেপ্ললিফ স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণিতে বেতন ৫ হাজার ১০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে এখন ৭ হাজার ২০০ টাকা করা হয়েছে। এর ওপর পুনঃভর্তি ফি ৩৭ হাজার টাকাও দিতে হচ্ছে। ধানমন্ডির সানিডেল স্কুলের এক শিক্ষার্থীর বাবা জানান, সানিডেল কর্তৃপক্ষ মাসিক বেতন চার হাজার টাকা করে বাড়িয়ে দিয়েছে। কেজি ওয়ানের বেতন পাঁচ হাজার ৭০০ থেকে বাড়িয়ে ৯ হাজার ৭০০ টাকা করা হয়েছে। তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীর বেতন ছয় হাজার ১০০ থেকে বাড়িয়ে ১০ হাজার ১০০ টাকা করা হয়েছে। ধানমন্ডির এক ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের শিক্ষার্থীর অভিভাবক শাহিনুর রহমান জানান, বেতনের সঙ্গে কৌশলে অতিরিক্ত সেশন ফিও আদায় করা হচ্ছে। অভিভাবকরা যাতে কোনো আপত্তি করতে না পারে সে জন্য সাদা কাগজে লিখিতও নেওয়া হয়েছে। ইউরোপিয়ান স্ট্যান্ডার্ড স্কুলের ওয়ারি শাখার এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক জানিয়েছেন, ইউরোপিয়ান স্ট্যান্ডার্ড স্কুল কর্তৃপক্ষও বেতন প্রায় দুই হাজার টাকার বেশি বাড়িয়ে দিয়েছেন। স্ট্যান্ডার্ড ওয়ানের বেতন যেখানে ৪ হাজার ৪০০ টাকা ছিল সেখানে করা হয়েছে ৬ হাজার ৪০০ টাকা। তৃতীয় শ্রেণির বেতন ৪ হাজার ৬০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬ হাজার ৪০০ টাকা করা হয়েছে। ওই প্রতিষ্ঠানের সেশন ফি ছিল ১৪ হাজার টাকা, কিন্তু এখন মাসিক বেতন ২২০০ টাকা বাড়িয়ে ২৪ হাজার টাকা আদায় করে নেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে ইউরোপিয়ান স্ট্যান্ডার্ড স্কুলের অধ্যক্ষের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন শাখার অতিরিক্ত সচিব এ এস মাহমুদ বলেন, ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলোকে একটি নীতিমালার আওতায় আনতে দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা চলছে। কিন্তু নীতিমালার কাজটি পড়ে আছে। বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা জানান, বেশ কয়েকটি স্কুল পুনঃভর্তি ও সেশন চার্জ জুনের মধ্যেই পরিশোধ করতে হবে বলে অভিভাবকদের জানিয়ে দিয়েছে। আবার কিছু কিছু স্কুল পুনঃভর্তি ফি না নেওয়ার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ৫০ শতাংশ বেতন বাড়িয়ে দিয়েছে। অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বেতন বৃদ্ধির হার দ্বিগুণেরও বেশি। তবে এ ব্যাপারে কোনো অভিভাবক স্বপরিচয়ে মুখ খুলতে রাজি হননি। তারা জানান, কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান বর্ধিত বেতন বৃদ্ধির ব্যাপারে আপত্তি নেই বলে অভিভাবকদের কাছ থেকে লিখিতও নিয়েছে। এখন মুখ খুললে সন্তানদের সমস্যা হবে বলে তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেন। অনেকে অভিযোগ করেন, এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় নীরব ভূমিকা পালন করছে। 'ফ্রি স্টাইলে চলছে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল' শিরোনামে গত বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ প্রতিদিনে প্রকাশিত সংবাদ যুক্ত করে এ রিট করেন আইনজীবী জে আর খান রবিন। রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল। চার সপ্তাহের মধ্যে শিক্ষা, আইন, স্বরাষ্ট্র এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালকসহ ইংরেজি মাধ্যমে শিক্ষাদানকারী ২৩টি বিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষকে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছিল। এরপরও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে আবারও চলছে সেশন ফির নামে বেপরোয়া ফি আদায়। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক শ্যামল কান্তি ঘোষ গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আদালত থেকে আমরা এখনো ইংরেজি মাধ্যম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা বা আদেশ পাইনি। আদেশ পেলেই আমরা তা বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

সর্বশেষ খবর