সোমবার, ২০ অক্টোবর, ২০১৪ ০০:০০ টা

দেড় ঘণ্টায় গাজীপুর টু কেরানীগঞ্জ

দেড় ঘণ্টায় গাজীপুর টু কেরানীগঞ্জ

প্রকল্পটি নির্মাণ হতে পারে এমন আদলেই -ফাইল ফটো

মাত্র দেড় ঘণ্টায় যাতায়াত করা যাবে গাজীপুর থেকে কেরানীগঞ্জ। কোনো ধরনের যানজট ছাড়াই যাওয়া যাবে একটি শহর থেকে আরেকটি শহরে। আর এমন তথ্য দিলেন বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) লাইন-৩ প্রকল্পের এক কর্মকর্তা। ওই কর্মকর্তা বলেন, প্রথমে বিমানবন্দর থেকে কেরানীগঞ্জ পর্যন্ত পরিকল্পনায় ছিল এ প্রকল্প এলাকা। পরবর্তী সময়ে তা বাড়িয়ে জয়দেবপুর পর্যন্ত করা হয়েছে। আর প্রকল্পটি ২০২০ সালের দিকে বাস্তবায়ন করা হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের গণসংযোগ কর্মকর্তা ওয়ালিদ আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, রাজধানীর উত্তর পাশের বৃহত্তর শহর গাজীপুরের সঙ্গে দক্ষিণের শহর কেরানীগঞ্জের যোগাযোগের জন্যই সরকার এ প্রকল্প হাতে নিয়েছে। আর এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে রাজধানী ঢাকাসহ আশপাশ এলাকার মানুষের যাতায়াতে আমূল পরিবর্তন হবে। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আড়াই হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) লাইন-৩ নামে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে কেরানীগঞ্জ থেকে ৫০ হাজার যাত্রীর বিমানবন্দর ও জয়দেবপুর যেতে সময় লাগবে মাত্র যথাক্রমে এক ও দেড় ঘণ্টা। যোগাযোগ ব্যবস্থা আধুনিকায়ন ও উন্নততর করতেই এ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। বিশ্বব্যাংক ২২ দশমিক ৪ কিলোমিটার দীর্ঘ প্রকল্পে অর্থায়নের বিষয়টি ইতিমধ্যে নিশ্চিত করেছে। চলতি অর্থবছরের শেষ মাস অর্থাৎ ২০১৫ সালের জুন মাসে ঋণচুক্তি সই হওয়ার কথা রয়েছে। রাজধানী ও পার্শ্ববর্তী এলাকার যানজট নিরসনে সরকার ২০ বছর মেয়াদি কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনার (এসটিপি) সুপারিশের আওতায় বিআরটি বাস্তবায়নের পরিকল্পনা নিয়েছে। রাজধানীর উত্তরা হয়ে বিমানবন্দর থেকে রাজউকের কেরানীগঞ্জ ঝিলমিল পর্যন্ত বিআরটি-৩-এর সম্ভাব্য যাচাই কাজ এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। সূত্র আরও জানায়, প্রকল্প বাস্তবায়নে আড়াই হাজার কোটি টাকার মধ্যে বিশ্বব্যাংক দুই হাজার কোটি টাকা ঋণ দেবে। অবশিষ্ট ৫০০ কোটি টাকার জোগান দেবে সরকার নিজস্ব তহবিল থেকে। দুই ধাপে বিআরটি-৩ বাস্তবায়ন করা হবে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে সড়ক ও জনপথ (সওজ) প্রথম অংশ, অর্থাৎ গাজীপুর থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত বাস্তবায়ন করবে। প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্ব বিমানবন্দর থেকে কেরানীগঞ্জ ঝিলমিল পর্যন্ত বাস্তবায়ন করবে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ)। প্রকল্পের নকশা প্রণয়নের কাজ শুরু হয়েছে। এ কাজ আগামী বছর জুন নাগাদ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। সম্ভাব্যতা যাচাই ও নকশা প্রণয়নেও ঋণ দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। বর্তমানে বিস্তারিত নকশা প্রণয়নের পাশাপাশি চলছে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) প্রণয়ন। শীঘ্রই তা অনুমোদনের জন্য একনেকে পাঠানো হবে। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রকল্প লাইন-৩ উত্তরা থেকে বিমানবন্দর সড়ক কুড়িল ইন্টারচেঞ্জের নিচ দিয়ে ও বনানী রেল ওভারপাসের ওপর দিয়ে মহাখালী। এরপর তেজগাঁও, সাতরাস্তা, মগবাজার চৌরাস্তা, কাকরাইল, পল্টন, গুলিস্তান, নয়াবাজার, বাবুবাজার দ্বিতীয় বুড়িগঙ্গা সেতু হয়ে কেরানীগঞ্জের ঝিলমিল পর্যন্ত গিয়ে শেষ হবে এটি। উত্তরা থেকে ঝিলমিল পর্যন্ত ১৬টি বাস স্টপেজ, দুটি বাস ডিপো ও দুটি ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হবে। বাস স্টপেজে প্রবেশ ও বের হওয়া এবং পথচারীদের পারাপারের জন্য ৩০টি আন্ডারপাস তৈরি করা হবে। ১৮ মিটার দীর্ঘ ১০০টি আর্টিকুলেটেড বাস চলাচল করবে এ পথে। বিআরটির মাধ্যমে ঘণ্টায় ৩০ হাজার যাত্রী কেরানীগঞ্জ থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত যাতায়াত করতে পারবে। বাসগুলোতে ভাড়া আদায়ের জন্য থাকবে ইলেকট্রনিক স্মার্টকার্ড সিস্টেম। এই কার্ড যে কোনো সময় সুবিধাজনক স্টোর থেকে রিচার্জ করা যাবে। সূত্র জানায়, এর আগে বিআরটি-৩-এর আগের রুট ছিল সদরঘাট থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে প্রকল্প লাইন-৩ গাজীপুর থেকে কেরানীগঞ্জ ঝিলমিল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে রাজধানীতে প্রায় ২০ শতাংশ যানবাহন চলাচল কমে যাবে। আর এর ইতিবাচক ফল হিসেবে যানজট অনেকটা সহনীয় পর্যায়ে চলে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর