মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর, ২০১৪ ০০:০০ টা

ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন কাজে ধীরগতি

দ্রুত বাস্তবায়নে যুক্ত হচ্ছে দেশি কোম্পানি

ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন মহাসড়কের কাজ সময়মতো শেষ করতে না পারায় বিদেশি কোম্পানিগুলোর ওপর আর ভরসা রাখতে পারছে না সরকার। সরকারের অগ্রাধিকারমূলক এই প্রকল্পটির পারিপার্শ্বিক কাজ দ্রুত শেষ করতে তাই নতুন দেশি কোম্পানি যুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে সড়ক পরিবহন ও সেতু বিভাগ। তবে কী প্রক্রিয়ায় দেশি ঠিকাদার কোম্পানি প্রকল্পে যুক্ত করা হবে সে সম্পর্কে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এদিকে দেশের গুরুত্বপূর্ণ এই প্রকল্পটির কাজ সময়মতো শেষ না হওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছে এ-সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটি ও ব্যবসায়ী নেতারা।
প্রকল্পের ১০টি প্যাকেজের মধ্যে সাতটির কাজ করছে চীনা প্রতিষ্ঠান সিনো হাইড্রো করপোরেশন। বাকি প্যাকেজের কাজ বাস্তবায়ন করছে দেশি প্রতিষ্ঠান রেজা কনস্ট্রাকশন ও তাহের ব্রাদার্স। দেশি কোম্পানিগুলোর কাজের অগ্রগতি থাকলেও বিদেশি কোম্পানির কাজ এখনো অনেক বাকি রয়ে গেছে বলে পরিদর্শনে উঠে এসেছে। সংসদীয় কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন মহাসড়ক প্রকল্পে চীনা কোম্পানি সিনো হাইড্রোর আওতাধীন প্যাকেজ ৫-এ বাতিশা থেকে মহীপাল পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার কাজের অগ্রগতি অত্যন্ত ধীর। এ অংশে মাটি ও কালভার্ট বসানোর কাজই এখনো শেষ হয়নি, যেটি অনেক আগেই করার কথা ছিল। প্যাকেজ ৩-এ কুমিল্লা বাইপাসের শুরু থেকে ২১ কিলোমিটার এবং চট্টগ্রাম সিটি গেট থেকে কুমিরা পর্যন্ত প্যাকেজ ১০-এর ১৫ দশমিক ২৮৯ কিলোমিটার সড়কের কাজেও তেমন অগ্রগতি দেখা যায়নি। ১৩ সেপ্টেম্বর সংসদীয় কমিটির সদস্যরা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ১০টি প্যাকেজের বাস্তবায়ন অগ্রগতি পরিদর্শন করেন। সূত্র জানায়, মার্চের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে বলে ঠিকাদার কোম্পানিগুলো আশ্বাস দিলেও এর ওপর ভরসা রাখতে পারছেন না সরকারের সংশ্লিষ্টরা। অন্যদিকে প্রকল্পের কাজ দ্রুত শেষ করার ব্যাপারে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের তাগিদ রয়েছে। এ ছাড়া মূল প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট পারিপার্শ্বিক অন্য কাজ বাস্তবায়নের (সড়ক মেরামত) যে দায়িত্ব নিয়েছিল সিনো হাইড্রো, সেটি তারা করতে পারবে কি না সে নিয়েও সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে বিকল্প কোম্পানি নিয়োগের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বুধবার সংসদীয় কমিটির বৈঠকে বলেন, চুক্তির শর্তে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান সিনো হাইড্রো কোম্পানির একটি সড়ক মেরামতের কথা থাকলেও তারা তা করেনি। তাই এ কাজে দেশি প্রতিষ্ঠানকে কাজে লাগানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বাস্তবায়ন ধীর, ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থার তাগিদ সংসদীয় কমিটির : চুক্তির শর্ত অনুযায়ী সময়মতো কাজ শেষ না করায় অভিযুক্ত বিদেশি কোম্পানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি। ১৫ অক্টোবর জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন মহাসড়ক প্রকল্পের বাস্তবায়ন অগ্রগতি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে সংসদীয় কমিটি এ ধরনের সুপারিশ জানায়। সংসদীয় কমিটির সভায় সংশ্লিষ্ট প্রকল্পে বিদেশি কোম্পানির কাজের ঢিলেমি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে সংসদীয় কমিটি জানায়, দুই দফায় চুক্তির মেয়াদ বাড়ানো সত্ত্বেও প্রকল্পের বাস্তবায়ন অগ্রগতি সন্তোষজনক নয়। বাকি কাজের বাস্তবায়ন অগ্রগতিও ধীর। বিদেশি কোম্পানির কাজের ধীরগতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের নিজেও। বৈঠকে তিনি বলেন, প্রকল্পের ১০টি প্যাকেজের মধ্যে সাতটির কাজ বিদেশি কোম্পানিকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত বাস্তবসম্মত ছিল না। বিদেশিদের কাজের গতি মন্থর। তুলনামূলকভাবে দেশি কোম্পানির কাজের মান ও গতি সন্তোষজনক। আর সে কারণেই সড়ক মেরামতের কাজ বাস্তবায়নে দেশি কোম্পানি নেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।
ব্যবসায়ীদের অসন্তোষ : ব্যবসা-বাণিজ্যের সমস্যা দূরীকরণে ব্যবসায়ী নেতাদের নিয়ে একটি বাণিজ্য পরামর্শক কমিটি গঠন করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ৮ জুলাই ওই কমিটির প্রথম সভার কার্যবিবরণী প্রকাশ করা হয়। সেখানে বৈঠকের যেসব সিদ্ধান্ত উল্লেখ করা হয়েছে এর মধ্যে একটি হচ্ছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মাধ্যমে পণ্য সরবরাহ দ্রুততর ও নির্বিঘ্ন করার লক্ষ্যে চলমান চার লেনের কাজ অবিলম্বে শেষ করার জন্য যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করা।
জানা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেনের কাজ বাস্তবায়নে ঠিকাদার কোম্পানিগুলোর ঢিলেমি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে ব্যবসায়ীরা বাণিজ্যমন্ত্রীকে জানান, যানজট আর রাস্তার বেহাল দশায় তারা চট্টগ্রামে সময়মতো রপ্তানিপণ্য সরবরাহ করতে পারছেন না। আমদানিকৃত কাঁচামাল ও অন্যান্য পণ্য ঢাকায় আনার ক্ষেত্রেও দেখা দিচ্ছে একই সমস্যা। দেশের আমদানি-রপ্তানির প্রধান যোগাযোগ মাধ্যম ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক সংস্কারে তাই যোগাযোগমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণের তাগিদ দেন ব্যবসায়ীরা।

সর্বশেষ খবর