প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বলতে গেলে এই বিজয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ বিশ্ব জয় করেছে। কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশন ও ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের এ বিজয়ে গণতন্ত্রের বিশ্ব আমরা জয় করেছি। বাংলাদেশকে এখন আর কেউ অবহেলা করতে পারবে না। করুণা করতে পারবে না। বাংলাদেশ এখন আপন মহিমায় বিশ্বে নিজের স্থান করে নিয়েছে।’ জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় গতকাল আয়োজিত ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও সাবের হোসেন চৌধুরী এমপির সংবর্ধনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশন-সিপিএর নির্বাহী কমিটির নবনির্বাচিত চেয়ারপারসন, জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়ন-আইপিইউর নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট সাবের হোসেন চৌধুরী এমপির সম্মানে জাতীয় সংসদ সচিবালয় এ সংবর্ধনা সভার আয়োজন করে। সংবর্ধনার শুরুতেই ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং সাবের হোসেন চৌধুরীকে ফুল ও ক্রেস্ট দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়। ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বি মিয়া ও চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ বিশ্বজয়ী দুই নেতার হাতে ফুল ও ক্রেস্ট তুলে দেন। একই সঙ্গে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ও এই বিজয়ের নেপথ্য কারিগর প্রধানমন্ত্রীকেও ফুল দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়। বিকাল সাড়ে ৪টায় পবিত্র কোরআন, গীতা ও বাইবেল পাঠের মধ্য দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতির পক্ষ থেকে পাঠানো অভিনন্দন বার্তা পাঠ করে শোনান ডেপুটি স্পিকার। সভায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বি মিয়া। বক্তব্য দেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, সাবের হোসেন চৌধুরী এমপি, বিরোধীদলীয় নেতা, জাতীয় পার্টির সিনিয়র প্রেসিডিয়াম মেম্বার বেগম রওশন এরশাদ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের পার্লামেন্টারি কমিটির নেতা, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, জাতীয় পার্টি (জেপি) চেয়ারম্যান, বন ও পরিবেশ মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা এমপি, স্বতন্ত্র সদস্য ডা. রুস্তম আলী ফরাজী ও সংসদ সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আশরাফুল মকবুল এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের ডেপুটি হাইকমিশনার সন্দ্বীপ চক্রবর্তী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এ বিজয় বাংলাদেশের জনগণের বিজয়। তাদের জন্যই এ বিজয় অর্জন সম্ভব হয়েছে। নির্বাচনে জনগণ যদি ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে সরকার গঠন করতে সহযোগিতা না করত তাহলে হয়তো এটি অর্জন করা সম্ভব হতো না। তিনি আরও বলেন, ‘দুটি পদের নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে অনেকে শঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। আমরা আশাবাদী ছিলাম। আÍবিশ্বাস ছিল জয়ের। সে আত্মবিশ্বাসেরই জয় হয়েছে।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে কোনো অর্জনের জন্য আত্মবিশ্বাসটাই অনেক বড় প্রয়োজন। আর সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। লক্ষ্য অটুট থাকলে অনেক বড় বিজয়ও যে অর্জন সম্ভব তা আজ প্রমাণ হয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বর্তমান সরকার শিক্ষাকে অধিক গুরুত্ব দিয়েছে। কারণ শিক্ষিত লোক ছাড়া দারিদ্র্য বিমোচন করে দেশের কাক্সিক্ষত উন্নয়ন সম্ভব নয়। নারী শিক্ষায় বর্তমান সরকারের পদক্ষেপ যুগান্তকারী। বিনা বেতনে লেখাপড়াই শুধু নয়, বিনামূল্যে যথাসময়ে তাদের হাতে বই পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। প্রাথমিক, মাধ্যমিক পর্যায়ে বৃত্তি ও উপবৃত্তি দেওয়া হচ্ছে। শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমান সরকার একটি লক্ষ্যকে সামনে রেখেই এগিয়ে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা গড়া এবং বিশ্বদরবারে দেশের জনগণ যাতে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে সেই প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। বাংলাদেশ এখন আপন মহিমায় বিশ্বদরবারে স্থান করে নিয়েছে। বিশ্বকে নেতৃত্ব দিচ্ছে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। কেউ দমাতে পারবে না। বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে দেশের ভাবমূর্তি ভালো হয়েছে। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী ও সাবের হোসেন চৌধুরীর আন্তর্জাতিক দুটি সংস্থার প্রধান পদে বিজয়ী হওয়া তা-ই প্রমাণ করে। এটি সম্ভব হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্য। তিনি দেশ স্বাধীন না করলে এটি সম্ভব হতো না। আর বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রবল আত্মবিশ্বাস ও তার সরকার পরিচালনার সাফল্যের বিষয়টিও রয়েছে। তিনি বলেন, ‘দেশ এখন শান্ত আছে। জনগণ শান্তিতে বসবাস করছে। বাংলাদেশের মাটিতে শিক্ষিত ও যোগ্য ব্যক্তি যে আছেন আন্তর্জাতিক দুটি পদে আমাদের বিজয় তা প্রমাণ হয়েছে। এ বিজয় দেশের ১৬ কোটি মানুষের বিজয়।’ প্রধানমন্ত্রীর সঠিক নেতৃত্বে বাংলাদেশ আরও এগিয়ে যাবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। সংবর্ধনার জবাব দিতে গিয়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশনের নয় দশকের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো নির্বাচিত নারী চেয়ারপারসন ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। নিজের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক দুটি সংগঠনের প্রধানের পদ বাংলাদেশ পাওয়ায় বিশেষ করে ১৬৬টি দেশের সমন্বয়ে গঠিত ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের (আইপিইউ) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার বিষয়টি বাংলাদেশকে নিয়ে গেছে এক অনন্য উচ্চতায়। এ বিজয় বাংলাদেশের জন্য বয়ে এনেছে অনন্য গৌরব। এ বিজয় বাংলাদেশের জনগণের বিজয়, বাংলাদেশের সংসদীয় গণতন্ত্রের বিজয়। স্পিকার বলেন, বাংলাদেশ এখন আর পৃথিবীর বুকে অবহেলিত একটি দেশ নয়। বাংলাদেশ এখন বিশ্বকে নেতৃত্ব দেওয়ার পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। অনেকে দুটি প্রধানের পদে একসঙ্গে বাংলাদেশের প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী ছিলেন আস্থায় অবিচল। তিনি দুটি পদেই নির্বাচন এবং বিজয় ছিনিয়ে আনার ব্যাপারে প্রচণ্ড আশাবাদী ছিলেন এবং হয়েছেও তাই। সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, সিপিএ চেয়ারপারসন হিসেবে স্পিকারের নির্বাচিত হওয়ার মাধ্যমে শুধু প্রথম বাঙালি কিংবা বাংলাদেশি নয়, প্রথমবারের মতো কোনো নারী এ পদে আসীন হলেন। এবার বিশ্বের অন্যতম দুটি বৃহৎ সংগঠনের প্রধানের পদ ছিনিয়ে আনা হয়েছে। সারা বিশ্বে বাংলাদেশের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা হয়েছে। এটি সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাস আর স্থির লক্ষ্যের কারণে। তিনি নির্বাচনে যাওয়ার আগেই জয়ের বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে যেভাবে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে স্বাধীনতার ৫০ বছরে বাংলাদেশ বিশ্বদরবারে উন্নয়নের মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে।
ভারতের ডেপুটি হাইকমিশনার সন্দ্বীপ চক্রবর্তী বলেন, ‘এ বিজয়ে প্রতিবেশী দেশ হিসেবে আমরাও গর্বিত। আমরা জানি কেন এটা সম্ভব হয়েছে। কারণ বিশ্ব বাংলাদেশের গণতন্ত্রচর্চার ধারাবাহিকতাকে মেনে নিয়েছে। এতে বাংলাদেশের যতই লাভ হোক, সফলতা হোক, আমাদের আনন্দ- আমরাও তাতে অংশগ্রহণ করেছি।’ তিনি বলেন, ‘আমি জানি এ বিজয়ের জন্য কত কষ্ট, কত সংগ্রাম করতে হয়েছে। এ নির্বাচনে বাংলাদেশ সরকার দৃঢ় বিশ্বাস ও সাহসের প্রকাশ ঘটিয়েছে।’ সভাপতির বক্তব্যে ডেপুটি স্পিকার বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কূটনৈতিক সফলতায় বাংলাদেশ একের পর এক অর্জন করেই চলেছে। এটি বাংলাদেশ ও গণতন্ত্রের বিজয়। এটি জাতীয় বিজয়। বিএনপিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, একটি বৃহৎ দল এ বিজয়ের পর কোনো শুভেচ্ছা জানায়নি। এটি তাদের হীনমন্যতা। তাদের আসাটা উচিত ছিল। রাজনৈতিক মতপার্থক্য থাকতে পারে কিন্তু দেশের অর্জন নিয়ে মতপার্থক্য থাকতে পারে না। অনুষ্ঠানে সংসদ উপনেতা সাজেদা চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত, জাপা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদসহ মন্ত্রিপরিষদের সদস্য ও সংসদ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। এরপর মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন আমন্ত্রিত অতিথিরা।