শুক্রবার, ২৪ অক্টোবর, ২০১৪ ০০:০০ টা

ক্ষমতা হারাচ্ছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়

ক্ষমতা হারাচ্ছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়

অপকর্ম আর দুর্নীতির কারণে ক্ষমতা হারাতে যাচ্ছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠানটির অধীনে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের সরকারি কলেজগুলোকে অঞ্চলভিত্তিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ ছাড়াও কলেজগুলোর পরীক্ষার প্রশ্নপত্র প্রণয়ন এবং সনদ প্রদান থেকে শুরু করে প্রশাসনিক সব কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করবে বিশ্ববিদ্যালয়। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অবহিত করতে গত সপ্তাহে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে এ-সংক্রান্ত একটি চিঠি পাঠিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। চিঠিতে দ্রুত সময়ের মধ্যে মঞ্জুরি কমিশনের মতামত ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সিদ্ধান্ত জানাতে নির্দেশনা রয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, খাতায় নম্বর পরিবর্তন করে ফল প্রকাশ, সনদ জালিয়াতি, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাগার থেকে টাকা আÍসাৎ, প্রয়োজনের অতিরিক্ত ব্যয়সহ নানা অনিয়ম দুর্নীতির খবর বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমে প্রকাশ পায়। তা ছাড়া পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় খাতে বাজেটের অর্ধেকেরও বেশি পরিমাণ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে বরাদ্দ দেওয়া হলেও সেশনজট কমানোসহ কোনো উন্নয়ন করতে না পারায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
জানা যায়, চলতি বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পরিদর্শনকালে শিক্ষামন্ত্রী ও শিক্ষা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের এ সিদ্ধান্তের কথা জানান। এমনকি প্রধানমন্ত্রী এ সিদ্ধান্ত শীঘ্রই বাস্তবায়নের নির্দেশ দেন। গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় পরিদর্শনে গেলে বিষয়টি আবারও উত্থাপন করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাধ্যমিক উচ্চশিক্ষা অধিদফতরে বিভাগভিত্তিক সরকারি কলেজগুলোর তালিকা তৈরির নির্দেশনা দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ঢাকা বিভাগের সরকারি কলেজগুলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে, খুলনা বিভাগের সরকারি কলেজগুলো খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে, চট্টগ্রাম বিভাগের সরকারি কলেজগুলো চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে, বরিশাল বিভাগেরগুলো বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এবং সিলেট বিভাগেরগুলো সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নেওয়া হবে। তবে বৃহত্তর কুমিল্লা জেলার সরকারি কলেজগুলো কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নেওয়া হতে পারে। এসব বিষয়ে আলোচনা চলছে; কিন্তু এখনো সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি। এদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা কলেজের কাজ করে না বা প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনা করে না। বিষয়টি নিয়ে মাধ্যমিক উচ্চশিক্ষা অধিদফতর এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে মতামত পাঠানোর পর মন্ত্রণালয়ের ঊর্র্ধ্বতন পর্যায় থেকে একটি নির্দেশনা জারি করা হবে। সেটি বাস্তবায়ন করবে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয় শাখার কোনো ভূমিকা নেই। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বিভাগীয় শহরগুলোতে আঞ্চলিক কেন্দ্র স্থাপনের কার্যক্রম চলছে। আঞ্চলিক কেন্দ্র পরিচালনার জন্য চলতি বছর লোকবলও নিয়োগ করা হয়েছে। কিন্তু জমি ক্রয় ও ভবন নির্মাণের কাজ বন্ধ হয়ে আছে।
এদিকে সরকারি কলেজগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ন্যস্ত হলে বিষয়টি নিয়ে জটিলতা তৈরি হতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট অনেকে। এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমরা বিভিন্নভাবে কাজ করছি। ইতিমধ্যে ইউজিসিকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। শিক্ষার অগ্রগতির ও শিক্ষার্থীদের সুবিধার জন্য এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের কাজ শুরু করেছি।

সর্বশেষ খবর