শনিবার, ২৫ অক্টোবর, ২০১৪ ০০:০০ টা

ঢাকা-চট্টগ্রাম ডাবল লাইনের এক তৃতীয়াংশ কাজ শেষ জুনে

যুক্ত হবে ট্রান্স এশিয়ান রেললাইন

আগামী জুনের মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম ডাবল লাইন রেলপথের বেশির ভাগ (প্রায় এক তৃতীয়াংশ) অংশের কাজ শেষ হবে। লাকসাম-চিনকি আস্তানা পর্যন্ত ৬১ কিলোমিটার রেলপথ প্রায় শেষের পথে। ডিসেম্বরে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন আশা করা হচ্ছে। অন্যদিকে টঙ্গী-ভৈরব বাজার সেকশনে ডাবল লাইন নির্মাণ কাজও চলমান রয়েছে, যা শেষ হবে আগামী জুনে। আর লাকসাম থেকে আখাউড়া পর্যন্ত বাকি ৭২ কিলোমিটার সেকশনের কাজও প্রকল্পের আওতায় আনা হয়েছে। রেল মন্ত্রণালয় এসব তথ্য জানিয়েছে।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, রেলপথে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের দূরত্ব ৩২০ কিলোমিটার। এর মধ্যে ডাবল লাইন আছে ১২৪ কিলোমিটার। নির্মাণ করতে হচ্ছে আরও ১৯৬ কিমি.। টঙ্গী থেকে ভৈরব বাজার পর্যন্ত ৬৪ কিলোমিটার ও লাকসাম থেকে চিনকি আস্তানা পর্যন্ত ৬১ কিমি. মিলে মোট ১২৫ কিলোমিটার ডাবল লাইন নির্মাণকাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। আখাউড়া থেকে লাকসাম পর্যন্ত বাকি ৭২ কিলোমিটার ডাবল লাইন নির্মাণ প্রকল্পও সম্প্রতি গ্রহণ করা হয়েছে।
কর্মকর্তারা জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথ দেশের রেলওয়ে নেটওয়ার্কের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য দুদিক থেকেই এর উপযোগিতা সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। এটি পুরোপুরি বাস্তবায়ন হলে দেশের শিল্প-বাণিজ্যে গতি সঞ্চার হবে। একদিকে যেমন ঢাকা থেকে রপ্তানিপণ্য সহজে চট্টগ্রাম বন্দরে পাঠানো যাবে। অন্যদিকে বন্দরে খালাসকৃত শিল্পের কাঁচামালও স্বল্প সময়ে ঢাকায় আনা যাবে। উপরন্তু ডাবল লাইন হওয়ায় এই রুটে যাত্রী পরিবহনও বৃদ্ধি পাবে। কর্মকর্তারা আরও জানান, ঢাকা-চট্টগ্রামের এই সেকশনটি ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে এবং উপ-আঞ্চলিক করিডোরের একটি বড় অংশ। এই উপ-অঞ্চলে পরিবহন এবং ট্রান্সশিপমেন্টের কেন্দ্রবিন্দু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বাংলাদেশের। এর সীমান্তে রয়েছে ভারত, মিয়ানমার এবং ল্যান্ডলকড দেশ নেপাল ও ভুটান। এ ছাড়া যমুনা নদীর উপর বঙ্গবন্ধু সেতু এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলওয়ে করিডোর দিয়ে বাংলাদেশ তার প্রতিবেশী দেশগুলোকে চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে পণ্য পরিবহন সুবিধা দিতে পারে। আগরতলা-আখাউড়া রেল যোগাযোগ ডাবল লাইনে উন্নীত হলে বাংলাদেশ রেলওয়ে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে সংযুক্ত হবে, যার ফলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে এই রুট ও চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যকারিতা আরও বাড়বে।
টঙ্গী-ভৈরব বাজার সেকশনে ডাবল লাইন : সিগন্যালিংসহ টঙ্গী-ভৈরব বাজার পর্যন্ত ডাবল লাইন নির্মাণ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয় দুই হাজার ৩৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এক হাজার ৪০৫ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে। বাকি ৬৩২ কোটি টাকা সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে জোগান দেওয়া হচ্ছে। এ পর্যন্ত প্রকল্পটির বাস্তবায়ন অগ্রগতি হয়েছে ৭০ শতাংশ। ২০০৬ সালে প্রকল্পটি প্রথম অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। নির্ধারিত সময়ে শেষ করতে না পারায় ২০১৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এর মেয়াদ বাড়ানো হয়। জানা গেছে, এই প্রকল্পের আওতায় রেলপথে ব্লক সিগন্যালিং ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হবে। এতে লাইনে বেশিসংখ্যক ট্রেন চলাচল করতে পারবে।
লাকসাম-চিনকি আস্তানা সেকশন : জাইকার অর্থায়নে লাকসাম থেকে মিরসরাইয়ের চিনকি আস্তানা ডাবল লাইন নির্মাণে প্রকল্প নেওয়া হয় ২০০৭ সালের জুলাইয়ে। তবে কাজ শুরু হয় ২০১১ সালের নভেম্বরে। গত বছরের জুনে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। সর্বশেষ প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে ২০১৫ সালের জুন পর্যন্ত। প্রকল্পে ব্যয় হবে এক হাজার ৫২৫ কোটি ৩২ লাখ টাকা। মোট ৬১ কিলোমিটার ডাবল লাইনের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ায় লাকসাম থেকে ফেনী পর্যন্ত অংশ খুলে দেওয়ার কথা ছিল গত বছর। কিন্তু পরীক্ষামূলক ট্রেন চালানোর সময় ত্র“টি ধরা পড়ায় এই অংশ আর উদ্বোধন করা হয়নি। এই অংশে হাসানপুর থেকে গুণবতী অংশের মধ্যে একটি সেতু নির্মাণের কাজ চলছে। এ ছাড়া ফেনী থেকে চিনকি আস্তানা পর্যন্ত অংশে ফেনী ও মুহুরি সেতুর নির্মাণকাজ চলছে। ডিসেম্বরেই এই অংশের কাজ শেষ হবে বলে আশা প্রকাশ করছে রেলপথ বিভাগ। 
সর্বশেষ আখাউড়া-লাকসাম সেকশন : পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথ ডাবল লাইনে সম্পন্ন করার জন্য গত মাসে পাঁচ হাজার ৮৩৩ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প অনুমোদিত হয় একনেকে। আখাউড়া থেকে লাকসাম পর্যন্ত যে ৭২ কিলোমিটার রেলপথ বাকি আছে, সেই অংশটুকু ডাবল লাইনে রূপান্তর করা হবে এই প্রকল্পের মাধ্যমে। এর মধ্য দিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথ ডাবল লাইনে পূর্ণতা পাবে। এ ছাড়া এই অংশটুকু সম্পন্ন হলে ভারত, নেপাল ও ভুটান চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারের মাধ্যমে রেলপথ দিয়ে সহজেই তাদের পণ্য পরিবহণ করতে পারবে। জানা গেছে, এ প্রকল্পে অর্থায়ন করছে দাতা সংস্থা এডিবি ও ইউরোপিয়ান ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক। মোট প্রকল্প ব্যয়ের বেশির ভাগ টাকা অর্থাৎ চার হাজার ৮৬২ কোটি টাকা দিচ্ছে এ দুটি সংস্থা। আর সরকারি তহবিল থেকে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে ৯৭১ কোটি টাকা। চলতি বছর থেকে ২০২০ সাল মেয়াদে এর বাস্তবায়নকাল ধরা হয়েছে। অনুমোদিত প্রকল্পে ডাবল লাইন নির্মাণ ছাড়াও কম্পিউটার বেজড সিগন্যালিং সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে প্রচলিত রেলপথের সক্ষমতা বাড়ানো হবে।
রেলপথ বিভাগের মহাপরিচালক তাফাজ্জল হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের দিক থেকে সারা দেশে রেললাইনের মধ্যে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেল সেকশনকে। উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতার কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে এ রুটটির সংস্কার হচ্ছে। লাকসাম থেকে চিনকি আস্তানা পর্যন্ত ডাবল লাইনের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে যা ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হবে। টঙ্গী-ভৈরব বাজার এবং লাকসাম-চিনকি আস্তানা সেকশনে ডাবল লাইন নির্মাণ কাজও চলমান রয়েছে। আগামী বছরের জুনের মধ্যে ওই প্রকল্প শেষ হবে। কাজগুলো শেষ হলে বাকি থাকবে শুধু আখাউড়া-লাকসাম সেকশন। ওই অংশটুকু ডুয়েল গেজে রূপান্তরের জন্য গত মাসে নতুন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। ফলে ২০২০ সালের মধ্যে সর্বশেষ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথ পূর্ণাঙ্গভাবে ডাবল লাইনে উন্নীত হবে।

সর্বশেষ খবর