বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর, ২০১৪ ০০:০০ টা

সন্ত্রাসীদের গোলাগুলিতে প্রাণ গেল শিশুর

নরসিংদীতে মহিলাসহ আহত ৫

নরসিংদীতে দুই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর বন্দুকযুদ্ধের মধ্যে পড়ে এক শিশু নিহত হয়েছে। তার নাম স্বপন মিয়া (১২)। তার মাথায় গুলি বিদ্ধ হয়। এ ছাড়া গুলিবিদ্ধ হয়েছেন দুই মহিলাসহ পাঁচজন। এ লড়াইয়ের সময় প্রচুর ককটেলের বিস্ফোরণও ঘটানো হয়। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পৌর শহরের বকুলতলায় এ ঘটনা ঘটে। শিশু স্বপন বকুলতলার খোরশেদ মিয়ার ছেলে। অন্য আহতরা হলেন বিউটি সাহা (৪৫), মণি সাহা (৩২), শওকত হোসেন (৩৩), শাহাদাত হোসেন (৪০) ও স্বপন সাহা (৩৫)। তারা সবাই পথচারী। তাদের মধ্যে শওকত ও বিউটি সাহাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এদিকে প্রকাশ্য দিবালোকে সন্ত্রাসীদের গোলাগুলির ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, বালু ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ ও মাদকের টাকার ভাগবাটোয়ারাকে কেন্দ্র করে শহরের চিহ্নিত সন্ত্রাসী শফিক গ্রুপ ও সোহেল গ্রুপের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছিল। গতকাল বেলা ১১টার দিকে বকুলতলা মোড়ে শফিকের নেতৃত্বে তার ৩০-৩৫ সহযোগী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে অবস্থান নেয়। চারপাশে তিনটি স্কুল ও কলেজ থাকায় সড়কে স্কুলগামী শিক্ষার্থী ও পথচারীদের সরব উপস্থিতি ছিল। এর আধঘণ্টা পর তিনটি মোটরসাইকেলে করে সাত-আট জনের একদল লোক বকুলতলা মোড়ের পাশে অবস্থান নেয়। এরই মধ্যে হঠাৎ গুলিবর্ষণ শুরু হয়। প্রায় ৩০ মিনিট গোলাগুলি ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। গুলিবিনিময় হয় অন্তত ১০০ রাউন্ড। এ সময় সন্ত্রাসীদের ছোড়া গুলি মাথায় বিদ্ধ হয় পথচারী স্বপন মিয়ার। সে একটি বাসে সহকারীর কাজ করত। আরও আহত হন স্কুলগামী শিক্ষার্থীর দুই অভিভাবকসহ পাঁচজন। ঘটনার পর স্থানীয়রা রাস্তায় পড়ে থাকা শিশু স্বপন মিয়া, স্বপন সাহা, শওকত হোসেন, অভিভাবক মণি সাহা, শাহাদাত হোসেন ও বিউটি সাহাকে উদ্ধার করে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। কর্তব্যরত চিকিৎসক শিশু স্বপনকে মৃত ঘোষণা করেন। একই সঙ্গে আশঙ্কাজনক অবস্থায় শওকত ও বিউটি সাহাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। আহত শওকত হোসেনের বড় ভাই নরসিংদী জেলা বাস ট্রাক শ্রমিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, শওকত সৌদি আরব প্রবাসী। তিনি দুই মাসের ছুটিতে দেশে এসেছেন। তার বাড়ি তৈরির কাজ তদারকির সময় সন্ত্রাসীদের ছোড়া গুলিতে তিনি আহত হন। পুলিশের ঊর্ধ্বতন একটি সূত্র জানিয়েছে, শফিকুল ইসলাম জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। আগে তিনি যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। তার বিরুদ্ধে হত্যা, অস্ত্রসহ বিভিন্ন আইনে একাধিক মামলা রয়েছে। সর্বশেষ ২০১১ সালে শহরের সুরভী সিনেমা হলের সামনে জেলা মৎসজীবী দলের সভাপতি স্বপন ওরফে মধু স্বপন হত্যা মামলার প্রধান আসামি তিনি। এ ঘটনার পর তিনি দীর্ঘদিন দেশের বাইরে গাঢাকা দেন। সর্বশেষ নরসিংদী পৌর মেয়র লোকমান হত্যার পর দেশে ফেরেন। জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী লে. কর্নেল (অব.) নজরুল ইসলাম হীরুর নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ফুল দিয়ে তিনি আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। এরপর আবার অপরাধ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে।
সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন পর আবার শফিকের উত্থানে কোণঠাসা হয়ে পড়েন জেলা বঙ্গবন্ধু জাতীয় যুব পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার ভূইয়া সোহেল। এ নিয়ে প্রকাশ্যে বিরোধ দেখা দেয়। নরসিংদী সদর মডেল থানার ওসি আবুল কাশেম বলেন, ‘নিহতের লাশ নরসিংদী সদর হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ব্যাপারে থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। প্রাথমিক তদন্তে আমাদের ধারণা, এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এ গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় সম্পৃক্তদের চিহ্নিত করে তাদের গ্রেফতারে অভিযান শুরু হয়েছে।’ অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে ভূইয়া সোহেল বলেন, ‘এ ঘটনায় আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। আমার ধারণা, একটি পক্ষ রাজনৈতিক চক্রান্তের অংশ হিসেবে আমার নাম জড়াচ্ছে।’

সর্বশেষ খবর