শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর, ২০১৪ ০০:০০ টা

ভোজ্যতেলে ভোজবাজি!

পাঁচ লিটার বোতলেই বেশি নিচ্ছে ১০৪ টাকা

পণ্যটির খুচরা এবং বোতলজাত মূল্যে রয়েছে অনেক বেশি ব্যবধান। কিনতে গিয়ে দোকানদারকে জিজ্ঞেস করলেও তারা এর উত্তর দিতে পারেন না। উত্তর যাদের কাছে রয়েছে সেই মিল মালিকদের কোনোদিনই খুঁজে পাওয়া যায় না। এই পণ্যটি হচ্ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোজ্যতেল। ভোজ্যতেলের ভোজবাজিতে ক্রেতারা এখন রীতিমতো অসহায়।
ট্যারিফ কমিশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী খোলা সয়াবিন, পামঅয়েল এবং বোতলজাত সয়াবিন এই তিনটি ক্ষেত্রেই দাম রাখা হচ্ছে বেশি। তবে বোতলজাত সয়াবিনের ক্ষেত্রে সেটি পুকুর চুরিতে পৌঁছে গেছে। কমিশনের প্রতিবেদন ও সাম্প্রতিক বাজার দর বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, প্রতি লিটার বোতলে ১৬ থেকে ১৭ টাকা এবং ৫ লিটার বোতলজাত সয়াবিনে ১০৪ টাকা বেশি রাখা হচ্ছে ক্রেতাদের কাছ থেকে।
বিষয়টি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নজরেও এসেছে। পণ্যটির দাম এত বেশি কেন, তা জানতে চাইবেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। জানা গেছে, এ লক্ষ্যে ২ অক্টোবর পরিশোধনকারী মিল মালিক, আমদানিকারক এবং ডিলারদের ডাকা হয়েছে সচিবালয়ে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (আমদানি) রুহুল আমীন সরকার বলেন, ভোজ্যতেলের দাম সম্পর্কিত ট্যারিফ কমিশনের প্রতিবেদনটি বাণিজ্যমন্ত্রীকে দেখানো হয়েছে। দাম বেশি কেন এটি জানতে মন্ত্রী ব্যবসায়ীদের সঙ্গে শীঘ্রই বৈঠক করবেন। ভোগ্যপণ্যের আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় বাজার মূল্য বিশ্লেষণ সংক্রান্ত এ প্রতিবেদনটি গত সপ্তাহে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এই প্রতিবেদনে গত সেপ্টেম্বর মাসের ভোজ্যতেলের (অপরিশোধিত) আমদানি মূল্য, পরিশোধন খরচ, মিল মালিক, পাইকার ও খুচরা বিক্রেতা এই প্রতিটি পর্যায়ে মুনাফাসহ সাকুল্য খরচ ধরে ট্যারিফ কমিশন দেখিয়ে দিয়েছে- ভোজ্যতেলের বাজারমূল্য যৌক্তিক পর্যায়ে নেই। যে দামে পণ্যটি বিক্রি হচ্ছে, সেটি ন্যায্যমূল্য নয়। সেখানে এক ধরনের ভোজবাজির খেলা চলছে। কমিশনের হিসাব অনুযায়ী প্রতি লিটার খোলা সয়াবিনের খুচরা মূল্য ৮৪ টাকা এবং পাম তেল ৬৩ টাকা হওয়া উচিত। এ ছাড়া বোতলজাত এক লিটার সয়াবিন তেলের খুচরা মূল্য ৯৯ টাকা ও ৫ লিটার সয়াবিন তেলের দাম ৪৬৬ টাকা হওয়া উচিত। অথচ বাজারে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন বর্তমানে ৯০ টাকা, পাম তেল ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর বোতলজাত এক লিটার সয়াবিনের মূল্য কোম্পানি ভেদে ১১৬ থেকে ১১৭ টাকা এবং ৫ লিটারের মূল্য ৫৭০ থেকে ৫৮০ টাকা রাখা হচ্ছে। মিরপুরের রূপনগর এলাকার অধিবাসী সাইদুল আমিন জানান, তিনি গতকাল সুপরিচিত একটি ব্র্যান্ডের এক লিটার বোতলজাত সয়াবিন কিনেছেন ১১৭ টাকায়। ৫ লিটারের (বোতলজাত) দাম তার কাছে ৫৭০ টাকা চাওয়া হয় বলেও জানান। একই এলাকার গৃহিণী সুবর্ণা জানিয়েছেন, তিনি পাম তেল ৮০ টাকা এবং খোলা সয়াবিন ৯০ টাকা লিটার করে কিনেছেন। আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যটির দাম কমেছে এ খবর তারা রাখেন, তবে স্থানীয়ভাবে কেন কমছে না, তার উত্তর তারা কারও কাছে পাচ্ছেন না বলেও মন্তব্য করেন। দাম বেশি রাখার বিষয়টি স্বীকার করছেন ব্যবসায়ীরাও। ভোজ্যতেল পাইকারি ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসেম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম কমলেও দেশে বোতলজাত সয়াবিনের দাম কমানো হয়নি। কমিশন থেকে যখন মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছিল তখন আন্তর্জাতিক বাজারে বেশি দাম ছিল। কিন্তু এখন অনেক কমে এসেছে, তাই দেশেও কমানো উচিত। দাম কমানোর বিষয়টি তাদের হাতে নেই এমন মন্তব্য করে এই ব্যবসায়ী নেতা জানান, মিল মালিক এবং আমদানিকারকরাই তেলের দাম নির্ধারণ করে থাকেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর