শনিবার, ১ নভেম্বর, ২০১৪ ০০:০০ টা

পিডিবির কেন্দ্রীয় গুদাম ঘিরে সক্রিয় সংঘবদ্ধ চক্র

চুরি হচ্ছে মূল্যবান ক্যাবল

পিডিবির কেন্দ্রীয় গুদাম ঘিরে সক্রিয় সংঘবদ্ধ চক্র

টঙ্গীর বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) কেন্দ্রীয় গুদামকে ঘিরে গড়ে উঠেছে সংঘবদ্ধ চক্র। এই চক্রই নিয়মিত চুরি করছে পিডিবির কেন্দ্রীয় গুদামে মজুদ করা মূল্যবান ক্যাবল। আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে এসব ক্যাবল আমদানি করা হয়। কিন্তু আমদানি করা ক্যাবল গুদামজাতের সময় পরিদর্শন না করে পিডিবির কর্মকর্তারা সময়ক্ষেপণ করে গুদাম পরিদর্শন করেন। আর এই সময়ের মধ্যেই ড্রাম থেকে ক্যাবল নির্দ্বিধায় চুরি করে সংঘবদ্ধচক্র। সম্প্রতি পিডিবির সেন্ট্রাল জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন প্রকল্পের মূল্যবান ক্যাবল চুরি হয়েছে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে পিডিবি জাইকার অর্থায়নে গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ২৬ লাখ ২৬ হাজার ডলার মূল্যের ক্যাবল আমদানির জন্য চুক্তি করে সর্বনিু দরদাতা ক্রিয়েটিভ ইঞ্জিনিয়ার্সের সঙ্গে। পিডিবির সেন্ট্রাল জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন প্রজেক্টের ৬৩ কিলোমিটারের জন্য ৩৩ ও ১১ কেভি বক্স এলপি ক্যাবল সরবরাহের জন্য কার্যাদেশও পায় ক্রিয়েটিভ। ওই দরপত্রে মোট ১৭টি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছিল। সূত্র জানায়, চুক্তির শর্ত অনুযায়ী চীনের জেডএমএস কোম্পানি থেকে আমদানিকৃত এ ক্যাবলের ফ্যাক্টরি পরিদর্শন ও পরীক্ষা করতে পিডিবির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ফখরুজ্জামানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল চীন সফর করে। এদের লিখিত অনুমতির পর ১৩৭টি ড্রামে করে ৬৩ কিলোমিটার ক্যাবল জাহাজীকরণ করা হয়। পিডিবির আমদানিকৃত ওই ক্যাবল চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছার পর গত ১৬ ও ১৮ আগস্ট ২৭টি ট্রাকে করে টঙ্গীর পিডিবি কেন্দ্রীয় গুদামে পৌঁছে দেওয়া হয়।
সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের নিয়মানুযায়ী জাহাজীকরণের পর সংশ্লিষ্ট পণ্যের ব্যাপারে সরবরাহকারী/বিক্রেতার দায়িত্ব শেষ হয়ে যায়। কিন্তু পিডিবি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে দরপত্রের শর্তানুযায়ী খালাসকৃত ক্যাবল বন্দর থেকে টঙ্গীতে পিডিবির কেন্দ্রীয় গুদাম পর্যন্ত পৌঁছানোর ট্রাকের ভাড়া প্রদানের দায়িত্ব সরবরাহকারীর ওপর ন্যস্ত করে। সে পরিপ্রেক্ষিতে বিগত ২৩ আগস্ট স্টোরকিপার ও সংশ্লিষ্টদের সম্পূর্ণ মালামাল বুঝিয়ে দিয়ে ক্রিয়েটিভ ইঞ্জিনিয়ার্স ট্রাক চালানের সিল-স্বাক্ষর গ্রহণ করে এবং মালামাল পৌঁছানোর বিষয়ে প্রকল্প কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়।
এদিকে পিডিবি কর্তৃপক্ষ মালামাল গ্রহণের পর গত ১ সেপ্টেম্বর সরবরাহ পরবর্তী পরিদর্শন টিম গঠন করে। ১৫ সেপ্টেম্বর ওই টিমের পরিদর্শনের কথা থাকলেও তা বাতিল করে ২৩ সেপ্টেম্বর পরিদর্শন করা হয়। এতে ১৩৭টি ড্রামের মধ্যে ৫৬টি ড্রামের ক্যাবলে ১৩ দশমিক ২১ কি.মি. ক্যাবল কম পায়। আবার দ্বিতীয় দফায় ২৫ সেপ্টেম্বর পরিদর্শনকালে দেখা যায় ৪ ও ৭৬ নম্বর ড্রামে ৪৭৪ মিটার ক্যাবল কম পাওয়া যায়। অথচ দুই দিন আগেও পরিদর্শনকালে এই দুই ড্রামে ক্যাবলের পরিমাণ সঠিক ছিল। ক্রিয়েটিভ ইঞ্জিনিয়ার্স-এর কাছ থেকে পিডিবি পুরো মালামাল বুঝে নেওয়ার পর গুদাম থেকে ক্যাবল চুরির ঘটনা সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলে জানাজানি হলে পিডিবির সরবরাহ পরবর্তী পরিদর্শন দল গত ১৫ ও ১৬ অক্টোবর পুনরায় ড্রামগুলো পরীক্ষা করে। এ সময় তারা দেখতে পায় পূর্বের পরিদর্শনে সঠিক পাওয়া ৪, ১৮, ৪৭, ৫০, ৭৬ ও ১১০ নম্বর ড্রাম থেকে রহস্যজনকভাবে ক্যাবল কমে গেছে। পিডিবি কর্তৃপক্ষ গুদামে মাল বুঝে পাওয়ার প্রায় এক মাস পর রহস্যজনক এই চুরির ঘটনায় গতকাল পর্যন্ত কোনো কূলকিনারা হয়নি। অবশ্য প্রকল্প পরিচালক মাহবুবুর রহমান দাবি করেছেন, এই ক্যাবল টঙ্গী গুদাম থেকে চুরি হয়নি। এটা চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আনার পথে কোথাও চুরি যেতে পারে। তিনি আরও দাবি করেন, তারা এখনো মাল বুঝে পাননি। মাল বুঝে পেতে হলে সব পক্ষের প্রতিনিধিদের দ্বারা গঠিত একটি পরিদর্শন দলের সামনে মাল বুঝিয়ে দেবে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান। সেটা হয়নি। তাহলে কীভাবে টঙ্গী গুদামে মাল ঢুকল জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক বলেন, একটা প্রভিশন আছে, মাল বুঝিয়ে দেওয়ার আগ পর্যন্ত গুদামে সেটা রাখা যাবে। পরিদর্শনে বিলম্ব হওয়ার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, যেহেতু এটি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে হয়, সেহেতু সবাই একসঙ্গে না হলে পরিদর্শন করা যায় না।

সর্বশেষ খবর