শুক্রবার, ৭ নভেম্বর, ২০১৪ ০০:০০ টা
সমৃদ্ধি

রপ্তানি হচ্ছে কুঁচিয়া মাছ

রপ্তানি হচ্ছে কুঁচিয়া মাছ

কুঁচিয়া মাছ মূলত অঞ্চলভেদে কুঁচে, কুঁইচ্চা, কুঁচিয়া বা কুঁচে বাইম নামেই পরিচিত। সিলেট, বরিশাল, পাবনাসহ প্রায় ১০-১২টি জেলা থেকে প্রচুর পরিমাণে এ মাছ বিদেশে রপ্তানি করা হয়। ফলে দেশের অর্থনীতিতে এ মাছ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এ মাছে রয়েছে রক্তশূন্যতা ও বাতব্যথা দূর করার ক্ষমতা। প্রায় ৪০ বছর ধরে এ মাছ নিয়ে ব্যবসা করছেন রাজবাড়ীর ড্রাই-আইস ফ্যাক্টরি এলাকার বাগধী পাড়ার কার্তিক সরকার ও তার পরিবার। সরেজমিন দেখা যায়, আদিবাসী বাগধীদের কাছ থেকে তারা এ মাছ কিনে তা ঢাকার আড়তে বিক্রি করেন। পরে আড়তদাররা তা বিদেশে রপ্তানি করে। কার্তিক সরকার জানান, বাগধীদের কাছ থেকে প্রতি কেজি ১৫০-২০০ টাকায় কিনে। ঢাকায় আড়তদারদের কাছে কেজিপ্রতি ৫০-৭০ টাকা লাভে বিক্রি করেন। মূলত চীনা ও মঙ্গোলিয়ানদের কাছে এ মাছ অত্যন্ত প্রিয়। Sybranchidae পরিবারের অন্তর্গত মাছটির বৈজ্ঞানিক নাম Monopterus cuchia। এর দেহ লম্বা এবং নলাকার। লেজ খাড়াখাড়িভাবে চাপা, ক্রমশ সরু। ত্বক পিচ্ছিল। দেহ গাঢ় বাদামি রঙের এ মাছের উদর হালকা লাল। লম্বায় এরা প্রায় ৬০ থেকে ৭০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। বাংলাদেশের প্রায় সব স্বাদুপানির জলাশয়েই (খাল, বিল, হাওর, বাঁওড় ও পুকুর পাড়ে মাটির গর্তে) কুঁচিয়া দেখা যায়। এরা সাধারণত পানির অগভীর ও তীরবর্তী অংশ এবং খাল পাড়ে মাটির গর্তে বসবাস করে।

রাক্ষুসে স্বভাবের এ মাছের প্রধান খাদ্য বিভিন্ন প্রজাতির ছোট মাছ, জলজ পোকা ও প্রাণী। এরা মূলত অদ্ভুতভাবে মুখ দিয়ে বাচ্চা জন্ম দেয়। একটি মা মাছ একসঙ্গে সহস্রাধিক বাচ্চা দিতে পারে। বছরের নভেম্বর থেকে জুন পর্যন্ত কুঁচিয়া মাছ ধরার মৌসুম। তবে এপ্রিল মাসে বেশি পরিমাণে কুঁচিয়া মাছ পাওয়া যায়। এ মাছ শিকারি কমল বাগধী বলেন, 'এ মাছ ধইরাই আমাগো সংসার চলে'। তিনি আরও জানান, পুকুর অথবা বিলের পাশের ছোট ছোট গর্ত চিহ্নিত করে বঁড়শির সঙ্গে কেঁচো অথবা ছোট ব্যাঙ গেঁথে এ মাছ শিকার করা হয়। এ মাছ রপ্তানিতে উত্তরার ১২ নং খাল পাড়ে গড়ে উঠেছে প্রায় ৫০টি আড়ত কোম্পানি।'

 

বিভিন্ন বিষয়ে জানতে মুঠোফোনে উত্তরার এক আড়তদার নারায়ণ দত্তের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, রাজবাড়ীসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে প্রতি সপ্তাহে প্রায় ৩০-৪০ টন মাছ আসে। এর বেশির ভাগই চীন, হংকং, তাইওয়ান, আমেরিকাসহ বিশ্বের প্রায় সাত-আটটি দেশে তা পাঠানো হয়। এ মাছের ব্যবসায়ীরা জানান, কুঁচিয়া মাছ অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক হলেও এ দেশে এ মাছের বাণিজ্যিক চাষাবাদ ও উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য এখনো তেমন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। বাণিজ্যিকভাবে এই মাছ চাষে উদ্বুদ্ধ করলে এটি চিংড়ি মাছের মতো জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

 

 

 

সর্বশেষ খবর