রবিবার, ৯ নভেম্বর, ২০১৪ ০০:০০ টা

সরকারের কাছে ব্যবসায়ীদের ৬৮ পরামর্শ

আমলে নিয়ে কাজ শুরু করেছে মন্ত্রণালয়

দেশে ব্যবসা-বাণিজ্যে বিদ্যমান সমস্যা সমাধানে সরকারকে ৬৮টি পরামর্শ দিয়েছে ব্যবসায়ী নেতাদের পরামর্শক কমিটি। আর এসব পরামর্শ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে সরকার। গত সপ্তাহে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোয় (ইপিবি) বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের সভাপতিত্বে বাণিজ্যসহায়ক পরামর্শক কমিটির দ্বিতীয় সভায় ওই পরামর্শগুলো বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ব্যবসা-বাণিজ্যের সমস্যা সমাধানের জন্য সরকার থেকে এর আগে ব্যবসায়ী নেতাদের নিয়ে ওই পরামর্শক কমিটি গঠন করা হয়েছিল। সেই কমিটিই ওই পরামর্শগুলো দিয়েছে। সিদ্ধান্ত হয়েছে : বিভিন্ন শিল্পের সমস্যা সমাধানে গঠন করা হবে পৃথক পৃথক সাব কমিটি, যারা নিজ নিজ খাতের বাধা চিহ্নিত করে সেগুলো দূর করার উদ্যোগ নেবে।
জানা গেছে, দ্রুত বা জরুরি ভিত্তিতে উদ্যোগ নেওয়া দরকার এমন সমস্যা সমাধানে সাব কমিটি ছাড়াও বাণিজ্যমন্ত্রী নিজে তদারকি করবেন। প্রয়োজনে তিনি অন্য মন্ত্রণালয়ে আধা সরকারি পত্র (ডিও) লিখে সমাধানের তাগিদ দেবেন। এমনকি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর সঙ্গেও বৈঠক করবেন ব্যবসায়ী নেতাদের নিয়ে। কর্মকর্তারা জানান, যেসব সমস্যার সমাধান জরুরি, সেগুলোর ব্যাপারে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ শুরু হয়েছে। ব্যবসায়ীরা পণ্য সরবরাহ দ্রুততর ও নির্বিঘ্ন করতে ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন মহাসড়ক প্রকল্পের কাজ দ্রুত করার তাগিদ দিয়েছিলেন। ব্যবসায়ীদের ওই তাগিদ আমলে নিয়ে ১৫ সেপ্টেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর চিঠি পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ চাঙ্গা করতে ব্যাংক ঋণের সুদের হার কমানোসহ ব্যবসাবান্ধব করব্যবস্থা গ্রহণের ব্যাপারে ব্যবসায়ীদের পরামর্শ রয়েছে। এই বিষয়গুলো অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে জড়িত বলে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে বৈঠক করার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী। বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিভাগের সঙ্গেও আলোচনা করা হবে বলে জানা গেছে।
ব্যবসায়ীদের পরামর্শ : পরামর্শক কমিটির প্রথম সভায় ব্যবসায়ী নেতারা যেসব পরামর্শ দেন তার মধ্য থেকে ৬৮টি বিষয় চিহ্নিত করে দ্বিতীয় সভায় পর্যালোচনা করা হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য পরামর্শ ছিল : শিল্প কারখানায় গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করা, বিনিয়োগ ও নতুন শিল্প কারখানা স্থাপনে পরিবেশ সংরক্ষণে শর্ত শিথিল করা, ব্যবসায়ী ও শিল্পোদ্যোক্তাদের প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, গ্যাস-বিদ্যুৎ সুবিধা রয়েছে এমন এলাকায় ঢাকা ও চট্টগ্রামের পোশাক কারখানা স্থানান্তর করা, বিনিয়োগ বোর্ডকে আরও শক্তিশালী ও কার্যকর করা, রাশিয়ায় বাজার সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেওয়া, যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক খাতে শুল্ক সুবিধা পেতে লবিস্ট নিয়োগ, দেশীয় শিল্প সম্পর্কে বিদেশি অপপ্রচার বন্ধে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ, পোশাকশিল্পের মতো অন্যান্য শিল্পপ্রতিষ্ঠানেও বন্ডেডওয়্যার হাউস এবং কাভার্ড ভ্যান ছাড়া পণ্য পরিবহন সুবিধা দেওয়া, ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা, ঋণ ব্যবস্থাপনা সংশোধন করে সাব স্ট্যান্ডার্ড লোন কমানো, রপ্তানি বাণিজ্য ভ্যাটের আওতামুক্ত রাখা, ভ্যাট আইন ব্যবসাবান্ধব করা, বন্দর ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা আরও বৃদ্ধি করা, গভীর সমুদ্রবন্দরের কার্যক্রম দ্রুত শুরু করা, রপ্তানি শিল্পের পাশাপাশি স্থানীয় শিল্পেও গ্যাস সংযোগ নিশ্চিত করা, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের কাজ দ্রুত করা, রাজধানীতে চাপ কমাতে ঢাকায় অবস্থিত শিল্প কারখানা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ঢাকার বাইরে স্থানান্তর করা, শিল্প খাতে ব্যাংক সুদের হার কমানোর উদ্যোগ নেওয়া এবং ব্যাংকিং খাতে দুর্বৃত্তায়ন বন্ধের উদ্যোগ নেওয়া, টার্নওভার ট্যাক্স কমানোসহ বিদ্যমান করব্যবস্থা আরও ব্যবসাবান্ধব করা, শিল্প স্থাপনে কম সুদে বিদেশি টার্ম লোন গ্রহণের সুযোগ দেওয়া, ঢাকা-চট্টগ্রাম ফোর লেন মহাসড়ক প্রকল্প দ্রুত শেষ করা, প্রবাসী বাংলাদেশি বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে নিয়ে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারির (পিপিপি) মাধ্যমে বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ, দ্রুততম সময়ে কয়লানীতি চূড়ান্ত করা, শেয়ারবাজারে বিরাজমান সমস্যা সমাধান করে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া, বাজেট প্রণয়নের সময় রাজস্ব আহরণের পাশাপাশি শিল্পায়নের বিষয়টি বিবেচনায় রাখা এবং নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বিভিন্ন খাতে বিশেষ সুবিধা দেওয়া। এ ব্যাপারে বাণিজ্য সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সরকারের আন্তঃযোগাযোগ বাড়ানোর লক্ষ্যেই পরামর্শক কমিটি করা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে আমরা সরাসরি তাদের বক্তব্য শুনতে পারছি, যা ব্যবসা ও বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ গড়ে তুলতে সহায়তা করছে।’ সচিব আরও জানান, ব্যবসায়ী নেতাদের পরামর্শ অনুযায়ী প্রতিটি সেক্টরের জন্য সাব কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যারা সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সেগুলো সমাধানে তাৎক্ষণিক উদ্যোগ নেবেন। প্রসঙ্গত, বর্তমান সরকারের বাণিজ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণের পরদিন ১৩ জানুয়ারি সচিবালয়ে সাংবাদিকদের কাছে ব্যবসায়ীদের নিয়ে পরামর্শক কমিটি গঠনের পরামর্শ দেন তোফায়েল আহমেদ। মার্চে বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ী নেতাদের নিয়ে গঠন হয় পরামর্শক কমিটি।

সর্বশেষ খবর