রবিবার, ৯ নভেম্বর, ২০১৪ ০০:০০ টা
হামিদ-জিনপিং বৈঠক

একসঙ্গে কাজ করবে বাংলাদেশ ও চীন

দ্বিপক্ষীয় ও আঞ্চলিক ইস্যুতে বাংলাদেশ ও চীন একসঙ্গে কাজ করবে বলে একমত হয়েছেন বেইজিং সফররত রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। গতকাল বেইজিংয়ের গ্রেট হলে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় এই মতৈক্যে পৌঁছান দুই রাষ্ট্রপতি। এ ছাড়া এশীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের নেতাদের অংশগ্রহণে সংলাপে দেওয়া বক্তৃতায় দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনমানের উন্নয়নে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
চীন থেকে বার্তা সংস্থা বাসস ও বিডিনিউজের খবরে বলা হয়েছে, শনিবার সকালে বেইজিংয়ের গ্রেট হলে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় বসেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। বৈঠক শেষে রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব ইহসানুল করিম জানান, বৈঠকে রাষ্ট্রপতি বলেছেন, বাণিজ্য ঘাটতি দূর করতে চীন সরকার এরই মধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। পাট ও পাটজাত পণ্যসহ বাংলাদেশি পণ্যের চীনে প্রবেশের ক্ষেত্রে আরও সুবিধা আমরা আশা করছি। চীনকে বাংলাদেশের পরীক্ষিত বন্ধু হিসেবে উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, বাংলাদেশ-চীনের এই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক দিন দিন শক্তিশালী হচ্ছে। শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান, পারস্পরিক আস্থা, একে অপরের সার্বভৌমত্বের প্রতি সম্মান এবং অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা এই বন্ধুত্বের ভিত্তি। বৈঠকে সমুদ্রবিজ্ঞান ও নির্মাণশিল্পে চীনের সঙ্গে একযোগে কাজ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন আবদুল হামিদ। রাষ্ট্রপতি চীনের প্রেসিডেন্টকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান।
বৈঠকে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেন, বাংলাদেশ চীনের বহুদিনের বিশ্বস্ত বন্ধুু। এই বন্ধুত্বের ভিত্তি হচ্ছে বিশ্বস্ততা এবং সহযোগিতা। আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বাংলাদেশের অগ্রগতির জন্য অভিনন্দন জানিয়ে শি জিনপিং বলেন, চীন বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতের উন্নয়নে সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে। এশিয়ান ইনফ্রাস্টাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকে (আইইবি) বাংলাদেশ যোগ দেওয়ায় চীনের প্রেসিডেন্ট সন্তোষ প্রকাশ করেন। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক বিভিন্ন ফোরামে বাংলাদেশের অংশগ্রহণের জন্য ধন্যবাদ জানান। রাষ্ট্রপতি কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব শেখ আলতাফ আলী, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (দ্বি-পক্ষীয়) মোস্তফা কামালসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। পরে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ চীনের ভাইস-প্রেসিডেন্ট লি ইউয়ানশাওয়ের আমন্ত্রণে মধ্যাহ্নভোজে যোগ দেন। বিকালে রাজধানী বেইজিংয়ের ফ্যাং হুয়া হলে ‘ডায়ালগ অন স্ট্রেনদেনিং কানেকটিভিটি পার্টনারশিপ’ শীর্ষক সংলাপে অংশ নেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। চীন ও বাংলাদেশ ছাড়াও পাকিস্তান, মঙ্গোলিয়া, লাওস, তাজিকিস্তান, মালয়েশিয়া, কম্বোডিয়া ও মিয়ানমারের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানরা এতে অংশ নেন। রাষ্ট্রপতি তার নির্ধারিত ভাষণে বলেন, এশীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনমানের উন্নয়নে একযোগে কাজ করতে হবে। দেশগুলোর মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধিতে অবকাঠামোগত উন্নয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেছেন, তা টেকসই ও লাভজনক করতে সমাজের পিছিয়ে-পড়া জনগোষ্ঠীর জীবনমানের উন্নয়ন ঘটাতে হবে।
বাংলাদেশ দূরপ্রাচ্য, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে যোগাযোগের সেতুবন্ধ হয়ে উঠবে বলে আশা প্রকাশ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে বাংলাদেশ প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেবে। অবস্থানগত কারণে বাংলাদেশ ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে এবং এশিয়ান হাইওয়ের মাধ্যমে প্রতিবেশীদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এ ছাড়া সার্ক ও বিমসটেকের প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য হওয়ায়  উপ-আঞ্চলিক ফ্রেমওয়ার্ক গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে বাংলাদেশ।

সর্বশেষ খবর