মঙ্গলবার, ২৫ নভেম্বর, ২০১৪ ০০:০০ টা

আফ্রিকায় বাংলাদেশের সম্ভাবনা

শান্তিরক্ষা মিশনের জন্য বাংলাদেশের প্রতি আস্থা

অনুন্নত আফ্রিকাজুড়ে রয়েছে বাংলাদেশের জন্য বিশাল সম্ভাবনা। ১০০ কোটির বেশি জনসংখ্যার এই ভূখণ্ড হতে পারে ভোগ্যপণ্যসহ সব ধরনের পণ্যের বিশাল বাজার। সেখানে বিনিয়োগের জন্য প্রায় সব খাতই উন্মুত। ইতিমধ্যে সীমিত আকারে কৃষিজমি লিজ নিয়ে বাংলাদেশিরা চাষাবাদের প্রকল্পও শুরু করেছেন। এ ছাড়া পিছিয়ে থাকা এই দেশগুলোতে ওষুধ ও প্রযুক্তি খাত হতে পারে অফুরান সম্ভাবনার। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগুলোর অবকাঠামো খাতও বিনিয়োগের বড় ক্ষেত্র।
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং করা হয়েছে। কিন্তু প্রতিবেশী ভারত ও নেপালিরা সেখানে বিনিয়োগ, ব্যবসা শুরু করে দিয়েছেন। কারণ এক মার্কিন সেন্টের বিনিময়ে লাইবেরিয়ার মতো দেশে লিজ পাওয়া যায় এক একর জমি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অভ্যন্তরীণ কিছু আইনি জটিলতার কারণে বাংলাদেশিরা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে পিছিয়ে। কিন্তু এখনই এই সম্ভাবনার বাজার ধরতে পারলে বাংলাদেশ লাভবান হবে। কারণ আফ্রিকার যুদ্ধবিগ্রহ লেগে থাকা দেশগুলোতে শান্তির কাজে নিয়োজিত থাকায় বাংলাদেশের রয়েছে আলাদা গ্রহণযোগ্যতা ও সুনাম। তাই বাংলাদেশের যে কোনো পণ্য বা ব্যবসার প্রতি থাকবে আস্থা ও বিশ্বাস।
আফ্রিকায় মোট ৫৪টি রাষ্ট্র রয়েছে। এর মধ্যে উত্তর আফ্রিকার মিসর, লিবিয়া, মরক্কোর মতো দেশগুলো বাংলাদেশের শ্রমবাজার। এর বাইরে থাকা অন্য দেশগুলোই মূলত সম্ভাবনা। সেগুলোর মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকা ছাড়া সবই অনুন্নত। কয়েকটিতে চলছে যুদ্ধ। কয়েকটিতে যুদ্ধ শেষে চলছে পুনর্গঠন। আয়তন ও জনসংখ্যার দিক থেকে বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মহাদেশ আফ্রিকায় সম্ভাবনা নিয়ে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মিজারুল কায়েসের নেতৃত্বে একটি কার্যকর ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং মিশন হয়। মিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, আফ্রিকা মহাদেশের কয়েকটি দেশ বাংলাদেশের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ সম্ভাবনা হতে পারে। বিশেষ করে ঘানা, লাইবেরিয়া, আইভরি কোস্ট ও সেনেগালে বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানির যেমন বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে, তেমনি আছে কর্মসংস্থানের সুযোগ। এসব দেশে ভৌত অবকাঠামোর বেশ সংকট। বাংলাদেশ এসব ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করে লাভবান হতে পারে। বাংলাদেশের বিভিন্ন ফার্ম এসব দেশে বিপুল পরিমাণ উর্বর জমি লিজ নিয়ে কৃষিপণ্য উৎপাদন এবং শিল্প-কারখানা গড়ে তুলতে পারে। ধান, তুলা, কোকো, রাবার, বাদাম জাতীয় ফসল, কফিসহ নানা কৃষিপণ্য উৎপাদনের উপযোগী লাখ লাখ একর উর্বর জমি রয়েছে এসব দেশে। ফার্মিং স্কিমের মাধ্যমে পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে গ্রহণ করা যেতে পারে। বিশেষ করে তানজানিয়া, জাম্বিয়া, উগান্ডা, আইভরি কোস্ট, লাইবেরিয়া, সেনেগাল ও ঘানাসহ বিভিন্ন দেশের মাটি উর্বর। এসব জমিতে ধান, গম, তুলা, কোকো, কফি ইত্যাদি চাষ লাভজনক হতে পারে। এ ছাড়া এসব অঞ্চলে বিপুল সম্ভাবনাময় গবাদি পশু পালন, মৎস্য চাষ, বন এবং ফল ও মৎস্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প স্থাপনও। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, আগামী দুই বছরের মধ্যে আফ্রিকার ছয়টি দেশে ছয় লাখ হেক্টরেরও বেশি জমি বাংলাদেশের ইজারা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। একই সঙ্গে ওই দেশগুলোতে ১০ লাখের বেশি শ্রমিকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্ট হবে। জানা যায়, আফ্রিকার দেশগুলোর সব জমি দুই ফসলি। শুষ্ক মৌসুমে জমি লাগোয়া নদীতে পানি থাকে এবং মাঝেমধ্যে বৃষ্টি হয়। ওই দেশের সরকারকে চাষ করে লাভের মাত্র ১০ শতাংশ এবং প্রতি বছর নামমাত্র খাজনা দিতে হয়। এ ছাড়া প্রতি পাঁচ হেক্টর জমিতে একজন আফ্রিকান ও একজন বাংলাদেশিকে কাজে লাগানোর সুযোগ পাওয়া যাবে। সে হিসেবে বিনিয়োগ করে কৃষিপণ্য উৎপাদনের পাশাপাশি বাংলাদেশি জনশক্তিকেও কাজে লাগানো যাবে। ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং মিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, এক্ষেত্রে দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ১৯৭১ সালে যখন বাংলাদেশের জনসংখ্যা মাত্র ৭ কোটি ছিল, তখন খাদ্যে পরনির্ভর ছিল। কিন্তু এখন ১৬ কোটি জনসংখ্যার বাংলাদেশও স্বয়ংসম্পূর্ণ। পশ্চিম আফ্রিকার এই দেশগুলোর কাছে এটি বিস্ময়কর এবং অনুকরণীয়। তারা বাংলাদেশের এই অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে চায়। এ জন্য কৃষি ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সহযোগিতার বিষয়ে তারা খুবই আগ্রহী। জনশক্তি রপ্তানির বিষয়ে ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং মিশন বলেছে, এসব দেশে সরাসরি জনশক্তি রপ্তানির বিষয়টি বেশ স্পর্শকাতর। কারণ খ্রিস্টান ও মুসলমানদের সংখ্যার যে ভারসাম্য রয়েছে, সেখানেই সমস্যা। বাংলাদেশ থেকে অধিক জনশক্তি এসব দেশে রপ্তানি হলে তারা মনে করবে যে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ বানানোর প্রক্রিয়া চলছে। এ জন্য কৌশলে কৃষি, ওষুধসহ বিভিন্ন সেক্টরে সংশ্লিষ্টতা বাড়াতে লোক পাঠানো যেতে পারে। জাতিসংঘের প্রকল্পে আফ্রিকার কয়েকটি দেশ পরিদর্শন করা এক কূটনীতিক জানান, ভারতের ব্যবসায়ীরা এক দশকেরও বেশি সময় ধরে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে কৃষিজমি লিজ নিয়ে ফসল উৎপাদন করছেন।

সর্বশেষ খবর