বৃহস্পতিবার, ২৭ নভেম্বর, ২০১৪ ০০:০০ টা
সরেজমিন স্বাস্থ্যসেবা (১৮)

রাজধানীতে আয়া চালায় দাতব্য চিকিৎসালয়!

মহাখালীর দাতব্য চিকিৎসাকেন্দ্র

রাজধানীতে আয়া চালায় দাতব্য চিকিৎসালয়!

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধানে মহাখালীর ২০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয়ের দাতব্য চিকিৎসা কেন্দ্র চালাচ্ছেন একজন আয়া। এই কেন্দ্র পরিচালনা, খোলা, বন্ধ করা, রোগী এলে তাদের বোঝানোসহ সব কাজ করেন এই আয়া। শুধু তাই নয় তিনি আগত রোগীদের ডাক্তারের মতো পরামর্শও দেন। প্রয়োজনে সেবাও দিয়ে থাকেন।
সরেজমিন গত শনিবার এই স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, মহাখালী ওয়্যারলেস গেট এলাকার দরিদ্র জয়নব বিবি পায়ে ব্যথা পেয়ে চিকিৎসা নিতে এসেছেন। কিন্তু দেখেন, এখানে কোনো চিকিৎসক নেই। তার বদলে আছেন একজন আয়া। তিনিই এ রোগীকে প্যারাসিটামল দিয়ে অন্য একটি সরকারি হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দিলেন। আয়া একইভাবে পরামর্শ দিলেন মিন্টু মিয়া নামের আরেক রোগীকেও। এ সময় নার্গিস নামের এক রোগী জানান, ‘এইহানে কোনো ডাক্তার পাওন যায় না। মাঝে-মধ্যে আইসলে একট্যা-দুইট্যা প্যারাসিটামল পাই। এইত্যেই অসুখ ভালা হয়।’ খোঁজ নিয়ে জানা গেল, এই দাতব্য চিকিৎসা কেন্দ্রে একজন খণ্ডকালীন চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া ছিল। কিন্তু কয়েক মাস ধরে তিনি আসেন না। এছাড়া এই চিকিৎসা কেন্দ্রের জন্য সরকারিভাবে ওষুধ বরাদ্দ থাকলেও গত আড়াই বছর ধরে এ বরাদ্দ মিলছে না। তাই খণ্ডকালীন চিকিৎসক রোগীদের প্রেসক্রিপশন লিখে দিলেও কোনো ওষুধ দিতে পারতেন না। এলাকাবাসীর কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চিকিৎসা কেন্দ্রের সেবা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তারা ডিএনসিসির ওপর ক্ষুব্ধ। ওয়্যারলেস রেল গেটের বাসিন্দা আমান বলেন, ‘কাউন্সিলর থাকলে এ চিকিৎসা কেন্দ্রে ভালো সেবা পাওয়া যেত। এখন কাউন্সিলর না থাকায় আমলারা গরিব মানুষের ওষুধের টাকা মেরে খাচ্ছেন।’ ডিএনসিসি সূত্র জানায়, এমবিবিএস পাস খণ্ডকালীন ডাক্তারের জন্য ডিএনসিসি থেকে মাসিক বেতন নির্ধারণ করা হয়েছে মাত্র আড়াই হাজার টাকা। কম টাকা বেতন হওয়ায় ডাক্তার চিকিৎসা কেন্দ্রে আসার ব্যাপারে আগ্রহ দেখান না। আগে সপ্তাহে দুই দিন এলেও এখন আর আসেন না। জনবল ও ওষুধের সাপোর্ট না থাকায় রোগীদের সেবা দেওয়া যায় না। তাই এ চিকিৎসাকেন্দ্র খোলা রাখার দায়িত্ব পালন করছেন আয়া। জানা যায়, ডিএনসিসির ২০ নম্বর ওয়ার্ডেও একটি বড় অংশই বস্তিবাসী। উন্নত চিকিৎসা নিতে পারেন না তারা। এসব বাসিন্দা দাতব্য চিকিৎসালয় থেকে সেবা পাবেন- এমন লক্ষ্যেই এটি স্থাপন করা হয়। কিন্তু বাস্তবে এখানে কোনো সেবা মিলছে না। ফলে গরিব মানুষকে বাইরে থেকে টাকা খরচ করে ওষুধ কিনে খেতে হচ্ছে। এ অবস্থায় টাকা থাকলে রোগীরা বাইরে থেকে ওষুধ কিনছেন, না থাকলে ওষুধ খাচ্ছেন না। কারণ ছেলেমেয়েদের ওষুধ কিনতে গেলে খাবার চাল কেনা হচ্ছে না। এ দাতব্য চিকিৎসালয়ের উদ্দেশ্য সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এটির লক্ষ্য ছিল বাসিন্দাদের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা। এছাড়া ছিল সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের স্বাস্থ্যসেবা কাজে সহযোগিতা প্রদান করার বিষয়। এই সেবার জন্য একজন এমবিবিএস পাস ডাক্তার, একজন ফার্মাসিস্ট, একজন নার্স, একজন দারোয়ান কাম ওষুধ সরবরাহকারী ও একজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী থাকার কথা ছিল। কিন্তু নেই কোনো ডাক্তার, ফার্মাসিস্ট। ওষুধ সরবরাহকারী, পরিচ্ছন্নতাকর্মীর পদও শূন্য রয়েছে। তবে আছেন শুধু একজন আয়া।ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. এমদাদুল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে এ প্রসঙ্গে জানান, ঢাকা সিটি করপোরেশন বিভক্ত হওয়ার আগে নিয়মিত চিকিৎসক বসতেন এবং ওষুধও থাকত। এ অবস্থা ছিল সিটি করপোরেশন বিভক্ত হওয়ার পরও। কিন্তু হঠাৎ কেন যেন দাতব্য চিকিৎসালয়ে চিকিৎসকও বসছেন না এবং প্রয়োজনীয় ওষুধ বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে না।

সর্বশেষ খবর