শুক্রবার, ২৮ নভেম্বর, ২০১৪ ০০:০০ টা

ঢাকা মহানগর রাজনীতিতে সংকট

কমিটি নিয়ে সিদ্ধান্তহীন আওয়ামী লীগ

ঢাকা মহানগর রাজনীতিতে সংকট

ঢাকা মহানগর কমিটি গঠন নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় রয়েছে আওয়ামী লীগ। চলতি নভেম্বরে এ কমিটি ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছিলেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। মাস শেষ হতে চলল, নতুন কমিটির দেখা নেই। অবশ্য এখনো কেউ কেউ বলছেন, যে কোনো সময় কমিটি ঘোষণা করা হবে। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগকে দুই ভাগে ভাগ করে উত্তর ও দক্ষিণ নামে দুটি কমিটি ঘোষণা করা হবে। এজন্য দায়িত্বপ্রাপ্তরা একটু সময় নিচ্ছেন। অবশ্য দলের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানিয়েছে, ঢাকা সিটি করপোরেশনের আগামী মেয়র নির্বাচনে সম্ভাব্য দুই প্রার্থীর বিষয়টি মাথায় রেখে এগোতে চান দলের হাইকমান্ড। এজন্যই কমিটি গঠন নিয়ে কিছুটা সিদ্ধান্তহীনতার সৃষ্টি হয়েছে। সূত্র আরও জানায়, আজ আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে ঢাকা মহানগর কমিটির বিষয়টি আলোচনা করা হতে পারে। ২০১২ সালের ২৭ ডিসেম্বর মহানগর আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কমিটি ঘোষণা করার কথা ছিল। কিন্তু সে কমিটি এখন পর্যন্ত ঘোষিত হয়নি। এর পর ছয় মাসের জন্য পুরনো কমিটিকে অনুমোদন দেন দলীয় প্রধান। ওই মেয়াদও শেষ হয়েছে অনেক আগে। বর্তমানে অভিভাবক ছাড়া চলছে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ।   \

ইতিমধ্যে মহানগরের ৪৯টি থানার মধ্যে ৪৫টির সম্মেলন সম্পন্ন হয়েছে। বাকি চারটিতে সাংগঠনিক জটিলতার জন্য কমিটি গঠন প্রক্রিয়া স্থগিত রাখা হয়েছে। জানা গেছে, মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক করা হতে পারে খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলামকে। তিনি অবিভক্ত মহানগর কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। সদস্যসচিব করা হতে যাচ্ছেন ঢাকার প্রথম নির্বাচিত মেয়র মরহুম মোহাম্মদ হানিফের ছেলে সাঈদ খোকন। খোকন বর্তমান মহানগর কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক। উত্তরের আহ্বায়ক হতে পারেন ঢাকা-১১ আসনের এমপি ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এ কে এম রহমতউল্লাহ এবং সদস্যসচিব হতে পারেন মোহাম্মদপুর থানার সভাপতি সাদেক খান। ২০১২ সালের ২৭ ডিসেম্বর মহানগরের সম্মেলন হলেও দুই ভাগে না এক ভাগে- এ প্রশ্নের কারণে থেমে ছিল মহানগর কমিটি গঠন। মহানগরের কয়েকজন শীর্ষ নেতা একটি কমিটি রাখার পক্ষে ছিলেন। এ নিয়ে কয়েক দফা দলীয় সভানেত্রীর সঙ্গে বৈঠকও করেছেন। দলীয় প্রধান তাদের স্পস্ট জানিয়েছেন, ঢাকা সিটি করপোরেশনের মতো দলের মহানগর কমিটিকেও দুই ভাগে বিভক্ত করা হবে। ৭ নভেম্বর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন, মহানগরে দুটি কমিটি হবে। এখন আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে পরবর্তী বছরে সম্মেলনের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, বিভক্ত কমিটির কোনোটিতেই থাকছেন না মহানগরের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া। তাকে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম প্রেসিডিয়ামে স্থান দেওয়া হতে পারে। অন্যদিকে বর্তমান মহানগরের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম এ আজিজকে প্রেসিডিয়ামে কিংবা উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য করার চিন্তাভাবনা চলছে। 

দলের একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, কমিটি ঘোষণা করার আগে মহানগরের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে বৈঠক করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, চূড়ান্ত তালিকা দলীয় সভানেত্রীর হাতে রয়েছে। তিনি যথাসময়ে কমিটি ঘোষণা করবেন। সূত্র জানায়, দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত বর্তমান কমিটির অনেক নেতা-ই আবারও স্থান পাচ্ছেন। পাশাপাশি এবারের কমিটিতে বিভিন্ন থানা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকও থাকছেন। মহানগরের বর্তমান নেতৃত্বের মধ্যে এই কমিটিতে থাকছেন কামাল আহমেদ মজুমদার, মুকুল চৌধুরী, বজলুর রহমান, হাজি মোহাম্মদ সেলিম, শাহে আলম মুরাদ প্রমুখ। এ ছাড়া এক-এগারোর রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় থানা কমিটির সভাপতি-সম্পাদকরাও স্থান পাবেন বিভক্ত দুই কমিটিতে। 

 

পুলিশি ভয়ে নীরবে দিন কাটছে বিএনপির  

মাহমুদ আজহার

পুলিশি ‘হয়রানির’ ভয়ে ঢাকা মহানগরে নীরবে দিন কাটছে বিএনপির। থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের কমিটি প্রকাশ করছেন না দায়িত্বপ্রাপ্ত মহানগর নেতারা। তাদের দাবি, ওয়ার্ড পর্যায়ে অন্তত ৬০ থেকে ৭০ ভাগ কমিটি গঠন প্রক্রিয়া ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। আগামী এক মাসের মধ্যে বাকিগুলোও সম্পন্ন হবে। তবে পুলিশি হয়রানির ভয়ে তারা কমিটির কর্মকর্তা ও সদস্যদের নাম ঘোষণা করতে পারছেন না। অবশ্য সূত্রগুলো বলছে, পুলিশি হয়রানির আশঙ্কা থাকলেও স্থানীয় পর্যায়ে কোন্দলের ভয়ে আলাদাভাবে থানা ও ওয়ার্ড কমিটি প্রকাশ করা হচ্ছে না। সম্প্রতি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দলের স্থায়ী কমিটির এক বৈঠকে বলেছেন, মহানগর বিএনপির ‘দৃশ্যমান’ কোনো অগ্রগতি নেই। এ সময় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা বেগম জিয়াকে পুলিশি হয়রানিসহ নানা প্রতিবন্ধকতার বিষয়ে অবহিত করেন। এতে খুশি হননি বিএনপি-প্রধান। বিগত ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ঠেকানোর আন্দোলনে ব্যর্থতার অভিযোগ ছিল সাদেক হোসেন খোকা ও আবদুস সালামের নেতৃত্বাধীন ঢাকা মহানগর কমিটির বিরুদ্ধে। এ অভিযোগে ১৮ জুলাই দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে আহ্বায়ক ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হাবিব-উন নবী খান সোহেলকে সদস্যসচিব করে ঢাকা মহানগর বিএনপির ৫৭ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। বর্তমান কমিটিকে দুই মাস সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়। কিন্তু পাঁচ মাসেও কমিটি দিতে পারেননি দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। আর এর মধ্য দিয়ে ঢাকা মহানগর বিএনপির রাজনীতিতে চলমান সংকট ফুটে উঠেছে। তবে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা সংকটের কথা অস্বীকার করে জানান, আলাদাভাবে থানা ও ওয়ার্ড কমিটি প্রকাশ করা হলে পুলিশ তালিকা ধরে ধরে নেতা-কর্মীদের হয়রানি করবে। এজন্য আগেভাগেই কমিটি ঘোষণা করা হবে না। সরকারবিরোধী আন্দোলনের আগমুহূর্তে একসঙ্গে তালিকা প্রকাশ করা হবে। এদিকে নেতা-কর্মীদের একাংশের মতে, একসঙ্গে কমিটি ঘোষণা হলে মহানগরজুড়ে বিদ্রোহীরা বিক্ষোভ মিছিল করতে পারেন, যা সামাল দেওয়া বর্তমান কমিটির জন্য কঠিন হবে। এমনকি এতে হিতে বিপরীতও হতে পারে। সরকারবিরোধী আন্দোলনও ভেস্তে যেতে পারে। তারা পুলিশি হয়রানির বিষয়টি মাথায় রেখেই কমিটির কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে বলে জানা গেছে। 

এ প্রসঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, মহানগরের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুল আউয়াল মিন্টু বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, ১৮ বছর ধরে মহানগরের পূর্ণাঙ্গ কমিটি নেই। তাই ইউনিট, ওয়ার্ড, থানা ও মহানগরে প্রায় ১ হাজার ৪০০ কমিটি করতে হচ্ছে। এটা খুবই জটিল কাজ। তা ছাড়া কমিটি করতে গেলে পুলিশি হয়রানি তো আছেই। তাই একটু সময় লাগছে।সূত্রে জানা গেছে, কমিটি গঠনে ঢাকা মহানগর বিএনপির অধিকাংশ ওয়ার্ড ও থানা পর্যায়ে সম্মেলন করতে পারেনি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে পুলিশি হয়রানি ছাড়াও স্থানীয়ভাবে পুরনো কোন্দল নতুন রূপে আত্মপ্রকাশ করার ভয়ে অনেকটা নিরাপদ স্থানে বসেই কাগজে কলমে কমিটি করা হচ্ছে। তবে কমিটি প্রকাশের সময় বেকায়দায় পড়তে পারেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। ইতিমধ্যে কয়েকটি থানার কমিটি গঠন করতে গিয়ে তোপের মুখে পড়েন তারা। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য, মহানগরের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায় জানান, তার দায়িত্বে সাতটি থানা ছিল। দু-একটি বাদে সব কটির কমিটি হয়েছে। কবে মহানগর বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রকাশ করা হবে- জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি তা জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন।একই প্রশ্ন করা হলে মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব হাবিব-উন নবী খান সোহেল জানান, ‘নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। খুব শীঘ্রই পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেওয়া হবে।’

সর্বশেষ খবর