শুক্রবার, ২৮ নভেম্বর, ২০১৪ ০০:০০ টা

পুলিশি ভয়ে নীরবে দিন কাটছে বিএনপির

পুলিশি ‘হয়রানির’ ভয়ে ঢাকা মহানগরে নীরবে দিন কাটছে বিএনপির। থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের কমিটি প্রকাশ করছেন না দায়িত্বপ্রাপ্ত মহানগর নেতারা। তাদের দাবি, ওয়ার্ড পর্যায়ে অন্তত ৬০ থেকে ৭০ ভাগ কমিটি গঠন প্রক্রিয়া ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। আগামী এক মাসের মধ্যে বাকিগুলোও সম্পন্ন হবে। তবে পুলিশি হয়রানির ভয়ে তারা কমিটির কর্মকর্তা ও সদস্যদের নাম ঘোষণা করতে পারছেন না। অবশ্য সূত্রগুলো বলছে, পুলিশি হয়রানির আশঙ্কা থাকলেও স্থানীয় পর্যায়ে কোন্দলের ভয়ে আলাদাভাবে থানা ও ওয়ার্ড কমিটি প্রকাশ করা হচ্ছে না। সম্প্রতি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দলের স্থায়ী কমিটির এক বৈঠকে বলেছেন, মহানগর বিএনপির ‘দৃশ্যমান’ কোনো অগ্রগতি নেই। এ সময় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা বেগম জিয়াকে পুলিশি হয়রানিসহ নানা প্রতিবন্ধকতার বিষয়ে অবহিত করেন। এতে খুশি হননি বিএনপি-প্রধান। বিগত ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ঠেকানোর আন্দোলনে ব্যর্থতার অভিযোগ ছিল সাদেক হোসেন খোকা ও আবদুস সালামের নেতৃত্বাধীন ঢাকা মহানগর কমিটির বিরুদ্ধে। এ অভিযোগে ১৮ জুলাই দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে আহ্বায়ক ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হাবিব-উন নবী খান সোহেলকে সদস্যসচিব করে ঢাকা মহানগর বিএনপির ৫৭ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। বর্তমান কমিটিকে দুই মাস সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়। কিন্তু পাঁচ মাসেও কমিটি দিতে পারেননি দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। আর এর মধ্য দিয়ে ঢাকা মহানগর বিএনপির রাজনীতিতে চলমান সংকট ফুটে উঠেছে। তবে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা সংকটের কথা অস্বীকার করে জানান, আলাদাভাবে থানা ও ওয়ার্ড কমিটি প্রকাশ করা হলে পুলিশ তালিকা ধরে ধরে নেতা-কর্মীদের হয়রানি করবে। এজন্য আগেভাগেই কমিটি ঘোষণা করা হবে না। সরকারবিরোধী আন্দোলনের আগমুহূর্তে একসঙ্গে তালিকা প্রকাশ করা হবে। এদিকে নেতা-কর্মীদের একাংশের মতে, একসঙ্গে কমিটি ঘোষণা হলে মহানগরজুড়ে বিদ্রোহীরা বিক্ষোভ মিছিল করতে পারেন, যা সামাল দেওয়া বর্তমান কমিটির জন্য কঠিন হবে। এমনকি এতে হিতে বিপরীতও হতে পারে। সরকারবিরোধী আন্দোলনও ভেস্তে যেতে পারে। তারা পুলিশি হয়রানির বিষয়টি মাথায় রেখেই কমিটির কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে বলে জানা গেছে।
এ প্রসঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, মহানগরের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুল আউয়াল মিন্টু বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, ১৮ বছর ধরে মহানগরের পূর্ণাঙ্গ কমিটি নেই। তাই ইউনিট, ওয়ার্ড, থানা ও মহানগরে প্রায় ১ হাজার ৪০০ কমিটি করতে হচ্ছে। এটা খুবই জটিল কাজ। তা ছাড়া কমিটি করতে গেলে পুলিশি হয়রানি তো আছেই। তাই একটু সময় লাগছে।
সূত্রে জানা গেছে, কমিটি গঠনে ঢাকা মহানগর বিএনপির অধিকাংশ ওয়ার্ড ও থানা পর্যায়ে সম্মেলন করতে পারেনি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে পুলিশি হয়রানি ছাড়াও স্থানীয়ভাবে পুরনো কোন্দল নতুন রূপে আত্মপ্রকাশ করার ভয়ে অনেকটা নিরাপদ স্থানে বসেই কাগজে কলমে কমিটি করা হচ্ছে। তবে কমিটি প্রকাশের সময় বেকায়দায় পড়তে পারেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। ইতিমধ্যে কয়েকটি থানার কমিটি গঠন করতে গিয়ে তোপের মুখে পড়েন তারা। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য, মহানগরের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায় জানান, তার দায়িত্বে সাতটি থানা ছিল। দু-একটি বাদে সব কটির কমিটি হয়েছে। কবে মহানগর বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রকাশ করা হবে- জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি তা জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
একই প্রশ্ন করা হলে মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব হাবিব-উন নবী খান সোহেল জানান, ‘নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। খুব শীঘ্রই পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেওয়া হবে।’

সর্বশেষ খবর