শুক্রবার, ২৮ নভেম্বর, ২০১৪ ০০:০০ টা
শুক্রবারের বিশেষ প্রতিবেদন

ছাই থেকে সোনা

ছাই থেকে সোনা

‘যেখানে দেখিবে ছাই উড়াইয়া দেখ তাই পাইলেও পাইতে পারো অমূল্য রতন’ কাব্যিক বাণীকে সত্য প্রমাণ করলেন মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার কয়েকটি  গ্রামের লোকজন। ছাই থেকেই সোনা সংগ্রহ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন সিংগাইর উপজেলার চারিগ্রাম মালীপাড়া, গেবিন্দল, সিংগাইরসহ ৫টি গ্রামের বেশকিছু পরিবার। জানা যায়, এ এলাকার লোকজন একসময় দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করত। এখন অধিকাংশ লোক ছাই থেকে সোনা সংগ্রহ করে অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী।
সরেজমিন দেখা যায়, পরিবারের নারী-পুরুষ ও শ্রমিকরা মিলে ছাই থেকে সোনা সংগ্রহে ব্যস্ত। কথা বলার সময় যেন তাদের হাতে নেই। কাজের ফাঁকে সায়েদুর রহমান (৩৭) জানান, তাদের পূর্ব পুরুষের ব্যবসা এটি। বাপ-দাদারা এ পেশায় জরিয়েই ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটিয়েছেন। এখন আমি ছাই থেকে সোনা সংগ্রহ করছি এবং খুব ভালো আছি। তিনি আরও বলেন, বাকপ্রতিবন্ধী মো. হারুনও এ ব্যবসা করেই ভালো আছেন। এ ব্যবসা করেই তিনি বিল্ডিং দিয়েছেন। এ ছাড়া এই এলাকার প্রায় বাড়ি থেকে লোকজন বিদেশে যান। বিদেশে যাওয়ার টাকাও সংগ্রহ হয়েছে এ ব্যবসা থেকে। মোখছেদা আক্তার জানান, পরিবারের সবাই আগে এই কাজ করত। এখন তার স্বামী বিদেশ আছেন। ছাই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ভোলার বিকাশ চন্দ্র ধর জানান, বাংলাদেশে মানিকগঞ্জের এই এলাকায় এবং ধামরাইর চৌহাটে কিছু লোক এ পেশার সঙ্গে জড়িত। আমি দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ছাই এবং বিভিন্ন  হাসপাতাল, স্টুডিও, ক্লিনিক, প্রেস থেকে পরিত্যক্ত ফ্লিম নিয়ে এসে ছাই থেকে সোনা ও ফ্লিম থেকে রুপা তৈরি করে বিক্রি করি। জসিম, সায়েদুর, নজরুল ইসলামসহ অনেকেই  জানান, এ পেশায়  আগে অনেক বেশি লাভ হতো। এখন আগের মতো ব্যবসা নেই। আমরা আগে খুব কমমূল্যে স্বর্ণকারদের কাছ থেকে ছাই ক্রয় করতে পারতাম। তারা আরও জানান, দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে সোনা রুপার অলঙ্কার তৈরির কারখানায় ব্যবহারের পর যে ছাই ও পানি ফেলে দিত আমরা ওই ছাই, পানি ক্রয় করে সেখান থেকে সোনা ও রুপা সংগ্রহ করি। অলঙ্কার তৈরির সময় সোনা রুপার বিন্দু বিন্দু কণা এই ছাইও পানির সঙ্গে মিশে থাকে। আমরা দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ফেলে দেওয়া ছাই এনে প্রথমে ভালো করে পানিতে ধুয়ে নেই। তারপর এগুলোকে ঢেঁকিতে পিষে ছোট ছোট আকারের মণ্ড তৈরি করে রোদে শুকিয়ে তারপর প্রচণ্ড তাপে সোনা-রুপা বের করি। এসব কাজ করতে সোহাগা, সিসা, সোডিয়াম, কাস্টিং, নাইট্রিক এসিডসহ বিভিন্ন দ্রবণ প্রয়োজন হয়। এসব দ্রবণ সংগ্রহ করতে এবং সোনা-রুপা বিক্রি করতে আমরা মাঝেমধ্যে হয়রানির শিকার হই। সরকার যদি সহযোগিতা করে তাহলে পরিত্যক্ত বস্তু থেকে আরও বেশি মূল্যবান সম্পদ সংগ্রহ করতে পারব। এলাকায় আরও কর্মক্ষেত্র তৈরি হবে।

সর্বশেষ খবর