শনিবার, ২৯ নভেম্বর, ২০১৪ ০০:০০ টা
অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা রোধ

সিএমএস স্থাপন থেকে সরে যাচ্ছে বিটিআরসি

অবৈধ ভয়েস ওভার ইন্টার প্রটোকল (ভিওআইপি) ব্যবসা বন্ধের অভিযান থেকে কৌশলে সরে যাচ্ছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা বন্ধের জন্য কেন্দ্রীয় পরিবীক্ষণ ব্যবস্থা (সেন্ট্রালাইজ মনিটরিং সিস্টেম-সিএমএস) স্থাপনের সিদ্ধান্ত থেকে বিটিআরসি সরে যাচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এর মধ্য দিয়ে মূলত অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসার প্রতি সংস্থাটি নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করছে বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, সম্প্রতি ডাক, টেলিযোগাযোগ এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভায় অবৈধ ভিওআইপিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়। এরপরই বিটিআরসি সিএমএস স্থাপন না করার উদ্যোগ নিয়েছে। যদিও সংসদীয় কমিটির সভায় বিটিআরসির কার্যপত্রেও সিএমএস বাস্তবায়নাধীন বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। কিন্তু কমিটির সভার পর ভিওআইপি ব্যবসায়ীদের চাপে বিটিআরসি বিপক্ষে অবস্থান নিতে যাচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, সিএমএস স্থাপন নিয়ে বিটিআরসি কিছুটা কৌশল অবলম্বন করেছে। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তিমন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়ার পর সংশ্লিষ্টরা মনে করেছিলেন এবার ভিওআইপি ব্যবসা বন্ধ হবে। কিন্তু বিটিআরসির কতিপয় শীর্ষ কর্তাব্যক্তির রহস্যময় ভূমিকায় সে প্রত্যাশায় কিছুটা ধাক্কা লেগেছে। লতিফ সিদ্দিকীর অনুপস্থিতিতে বর্তমানে বিটিআরসির এক শ্রেণির কর্তাব্যক্তিই অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসার পৃষ্ঠপোষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন এবং সুযোগ-সুবিধা নিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
জানা গেছে, অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা বন্ধে সরকারের উচ্চপর্যায়ের নির্দেশে আন্তর্জাতিক টেলিফোন কলের পরিমাণ মূল্যায়ন ও অবৈধ কল রোধের জন্য বিটিআরসি সিএমএস স্থাপনের উদ্যোগ নেয়। এ জন্য এপ্রিল মাসে এক্সপ্রেশন অব ইন্টারেস্ট বা ইওআই তৈরি করে আগ্রহী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে প্রস্তাব আহ্বান করা হয়। ১৫ মে ১৩টি কোম্পানি প্রস্তাব জমা দেয়। এর মধ্যে ৭টি প্রতিষ্ঠানকে সংক্ষিপ্ত তালিকাভুক্ত করা হয়। এগুলো হচ্ছে- এসসিএস, সফরেকম, এসএস, কিনোট সিগোস, এশিয়া প্যাসিফিক, এনসফট, ডাটা সফটসিস্টেম, ঢাকা সার্ভিস কোম্পানি ও টেকট্রোনিক্স। ৫টি কোম্পানি তাদের কারিগরি ও আর্থিক প্রস্তাব জমা দেয়। কারিগরি মূল্যায়নে এনসফট, সফরকন এবং এসজিএস মনোনীত হয়। কিন্তু বিটিআরসির কর্মকর্তারা তিন কোম্পানির আর্থিক প্রস্তাব নির্ধারিত ১৫ জুলাই তারিখে না খুলে স্থগিত করা হয়। এ নিয়ে সমালোচনা শুরু হলে ৬ আগস্ট আর্থিক প্রস্তাব খোলা হয় এবং বিটিআরসির পক্ষ থেকে বলা হয়, দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি শীঘ্রই এ সম্পর্কিত ফলাফল সংশ্লিষ্টদের জানাবে। কিন্তু চূড়ান্ত ফলাফল না জানিয়ে ভিওআইপি ব্যবসায়ীদের সহযোগী হিসেবে পরিচিত তৎকালীন মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী ও বিটিআরসির কর্মকর্তারা কৌশলে সিএমএস বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার কৌশল গ্রহণ করেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। অভিযোগ উঠেছে, এ জন্য বিটিআরসি কর্তৃপক্ষ উদ্দেশ্যমূলকভাবে এসজিএস নামে অযোগ্য ও সর্বোচ্চ দরদাতা একটি প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট মনিটরিং ইউনিটের (সিপিটিইউ) রিভিউ প্যানেলে কারিগরি প্রস্তাবে কম নম্বর পাওয়ার বিষয়ে অভিযোগ দাখিল করায়। মূলত প্রকল্পটি স্থাপনের কাজে প্রতিবন্ধকতা তৈরির জন্য কৌশলে এমন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, বিটিআরসির সংশ্লিষ্ট প্রকল্প পরিচালক প্রথমদিকে দৃঢ়তা দেখালেও শেষ পর্যন্ত অদৃশ্য চাপের কাছে অসহায় হয়ে পড়েছেন। সূত্র জানিয়েছে, ‘টার্মিনেশন রেইট’ কমে যাওয়ায় অবৈধ ‘ভিওআইপি’ বন্ধ হয়ে গেছে বলে সিএমএস-এর আর প্রয়োজন নেই মর্মে বিটিআরসির পক্ষ থেকে যুক্তি দেখানো হয়েছে।

সর্বশেষ খবর