শনিবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০১৪ ০০:০০ টা

আইনি ভিত্তি ছাড়াই চলছে শিল্পাঞ্চল পুলিশ

* তদন্ত ও আসামি গ্রেফতারে সক্ষমতা নেই * শতভাগ নির্ভরশীল থানার ওপর

আইনি ভিত্তি ছাড়াই চলছে শিল্পাঞ্চল পুলিশ

অনুমোদন মেলেনি শিল্পাঞ্চল পুলিশের। তাই গড়ে ওঠেনি আইনি অবকাঠামো। অথচ চার বছর ধরে আইনগত ভিত্তি ছাড়াই চলছে বাংলাদেশ পুলিশের এই বিশেষায়িত ইউনিটটি। পুলিশ কর্মকর্তারা জানেন না ইউনিটটির বৈধতা পাওয়া যাবে কবে। তারা বলছেন, চার বছর আটকে থাকার পর অনুমোদন সংক্রান্ত ফাইলটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সম্প্রতি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার নামে সেখানে আরও কত বছর ফাইলটি আটকে থাকবে এ নিয়েই এখন আশঙ্কা তাদের।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অনুমোদন না পাওয়ায় থানা পুলিশের ওপর শতভাগ নির্ভরশীল হয়ে পরিচালিত হচ্ছে ‘শিল্পপুলিশ’। এমনকি শিল্প-কারখানা সংশ্লিষ্ট মামলা তদন্ত ও আসামি গ্রেফতারের সক্ষমতাও নেই শিল্পপুলিশের। ফলে পুলিশের পৃথক এ ইউনিট গঠনের কাক্সিক্ষত সফলতাও আসছে না।
পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশ পুলিশ চলছে ১৮৬১ সালের আইনে। সেই আইনের কোথাও শিল্পাঞ্চল পুলিশের কথা বলা হয়নি। তাই ইউনিটটির জন্য কার্যবিধি প্রণয়ন করা জরুরি। এটি ছাড়া এই ইউনিটটি চলছে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে। শিল্পাঞ্চল পুলিশের মহাপরিচালক আবদুস সালাম বলেন, অনুমোদনের অপেক্ষায় বিবেচনাধীন কার্যবিধিটি পাস হলে গতিশীল হবে শিল্পাঞ্চল পুলিশ। এখন পর্যন্ত কার্যবিধি ছাড়াই কার্যক্রম পরিচালনা করছেন বিশেষায়িত এ ইউনিটের সদস্যরা। ফলে অনেক ক্ষেত্রেই শিল্পপুলিশের কিছুই করার থাকছে না। তবুও বিশেষ বাহিনীর আদলেই বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। প্রয়োজনের নিরিখে অনেক কাজ নিয়মিত করা হলেও সেসব কাজের আইনগত কোনো ভিত্তি নেই শিল্পপুলিশের। তিনি বলেন, শুনেছি ফাইলটি এক মাস আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরই অনুমোদন পাওয়া যাবে। শীঘ্রই কার্যবিধি অনুমোদন হবে বলে তিনি জানান। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মতামতের অপেক্ষায় আটকে ছিল শিল্পপুলিশের কার্যবিধি। সেসব মন্ত্রণালয়ের অনাপত্তি পাওয়া গেছে। শিল্পপুলিশের কার্যবিধি এখন আইন মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। জানা গেছে, ২০১০ সালের ৩১ অক্টোবর ১ হাজার ৫৮০ সদস্য নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে শিল্পাঞ্চল পুলিশ। প্রথম ধাপে আশুলিয়া, গাজীপুর ও চট্টগ্রামে তিনটি পৃথক জোনাল ইউনিট গঠন করা হয়। এর পর আরও ১ হাজার ৪১০টি পদের মঞ্জুরি ও নারায়ণগঞ্জে শিল্পাঞ্চল পুলিশের চতুর্থ জোনাল ইউনিট গঠন করা হয়। তবে  দেশের শিল্প খাতের অব্যাহত নৈরাজ্য নিয়ন্ত্রণ ও সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা প্রদানের লক্ষ্যে যাত্রা শুরু হওয়া শিল্পাঞ্চল পুলিশের কার্যবিধিটি গত চার বছরেও অনুমোদন দেয়নি সরকার।
পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, শিল্পাঞ্চল পুলিশ ইউনিটের কার্যবিধি ও কর্মপরিকল্পনা অনুমোদনের জন্য ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারিতে এ ইউনিটের মহাপরিচালকের পক্ষ থেকে একটি চিঠি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ওই চিঠির বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে শিল্প, পরিবেশ, বাণিজ্য, শ্রম ও অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। চিঠি প্রাপ্তির পরপরই বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় শিল্প ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে শিল্পপুলিশ ইউনিটের কার্যবিধিতে অনাপত্তি জানানো হয়। এরপরই ফাইলটি পাঠানো হয়েছে আইন মন্ত্রণালয়ে।
শিল্পাঞ্চল পুলিশের প্রস্তাবিত ওই কার্যবিধি ও কর্মপরিকল্পনায় উল্লেখ করা হয়েছে, এ ইউনিটের কার্যক্রম পরিচালিত হবে অনেকটা গোয়েন্দা পুলিশের আদলে। বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানে শ্রমিক অসন্তোষের কারণ, মালিক পক্ষের শ্রমিক নির্যাতনের ঘটনা, কোনো স্বার্থান্বেষী মহলের ইন্ধন, শ্রমিকদের বেতন নিয়মিত দেওয়া হচ্ছে কি-না এবং কী কারণে মালিক শ্রমিকদের বেতন দিতে পারছেন না সেসব বিষয়ে গোয়েন্দা ইউনিট আগাম তথ্য সংগ্রহ করবে। কোনো বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টির আগেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়টিও শিল্পপুলিশের কার্যবিধিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া সংঘর্ষ ও অপ্রীতিকর ঘটনায় গ্রেফতারকৃত আসামিকে স্থানীয় থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করার বিধান রাখা হয়েছে। তবে শিল্পপ্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট কোনো ঘটনায় দায়েরকৃত মামলা তদন্ত করবে শিল্পপুলিশ। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ যদি মনে করে, মালিক ও শ্রমিকদের নিয়ে সমঝোতা বৈঠকে সুফল পাওয়া যাবে, তাহলে সেই উদ্যোগ তাৎক্ষণিক গ্রহণ করবে পুলিশ। এ ছাড়া মালিক ও শ্রমিকদের বিভিন্ন সমস্যার কথা বা যে কোনো সংকটাপন্ন পরিস্থিতি প্রতিনিয়ত সরকারের উচ্চপর্যায়কে অবগত করা হবে।

সর্বশেষ খবর