মঙ্গলবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০১৪ ০০:০০ টা

খানাখন্দের রাজধানী

* অলিগলি যাচ্ছেতাই সড়কের পিচ নাই * যখন তখন খোঁড়াখুঁড়ি, সংস্কার হয় না * নগরবাসীর বাড়তি ভোগান্তি, যানজট

খানাখন্দের রাজধানী

যথাসময়ে সংস্কার না হওয়ায় রাজধানীর ৪০ শতাংশ সড়কের এখন বেহাল দশা। অলিগলির অবস্থা যাচ্ছেতাই। কোথাও খানাখন্দ। কোথাও পিচ উঠে খোয়া বেরিয়ে গেছে। সময়মতো মেরামত হচ্ছে না। ন্যূনতম সংস্কারের ছোঁয়া পড়েনি। আবার কোথাও চলছে তিতাস, বিটিসিএল, ওয়াসা বা ডেসকোর সমন্বয়হীন খোঁড়াখুঁড়ি। পথচারী নগরবাসীর জীবনে বাড়তি ভোগান্তি নিত্য যানজট।
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাভুক্ত এলাকায় প্রধান ও অলিগলিসহ মোট সড়ক ১ হাজার ২৮৯ কিলোমিটার। এর মধ্যে কয়েক শ কিলোমিটারেরও বেশি সড়ক সংস্কার করা জরুরি। প্রতি বছর তিতাস, বিটিসিএল, ওয়াসা, ডেসাসহ বিভিন্ন সেবা সংস্থার রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি অব্যাহত আছে। রাস্তা কাটার পর কংক্রিট বা বিটুমিনের হালকা লেপা-পোছা, কোথাও ইট-বালু চাপা দিয়ে দায়সারা মেরামত করা হয়। ফলে অল্প সময়ে রাস্তা ফের নাজুক হয়ে পড়ে। এভাবেই পেরিয়ে যায় দিনের পর দিন। রাজধানীতে প্রধান ও অলিগলিসহ সড়ক রয়েছে ৪ হাজার ১০৭টি। রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের অভাবে এগুলোর অবস্থাও খুবই শোচনীয়।
দুই সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, ২০১৩-১৪ অর্থবছরের শেষে চলতি বছরের বাজেট পর্যালোচনা বৈঠকে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন আঞ্চলিক অফিস থেকে আসা তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করা হয়। সেসব তথ্য অনুযায়ী, রাজধানীতে নতুন করে সংস্কারের জন্য সড়কের পরিমাণ উল্লেখ করা হয় প্রায় ৪৯৮ কিলোমিটার। সে হিসাবে রাজধানীর ৪০ শতাংশেরও বেশি সড়ক সংস্কার করা প্রয়োজন। এসব সড়কের মধ্যে রয়েছে মালিবাগ থেকে কুড়িল পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ ডিআইটি এক্সটেনশন সরণি। এই সড়কের বিভিন্ন জায়গায় ওয়াসা ও বিটিসিএল খোঁড়াখুঁড়ি করছে। ফলে এই সড়কে যাতায়াতকারী হাজার হাজার যাত্রীর ভোগান্তির শেষ নেই। গুলশান-২ নম্বর সেকশনের ল্যাবএইড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পেছনের সড়কের অবস্থা বড়ই নাজুক। এই সড়কটি অল কমিউনিটি ক্লাব থেকে আজাদ মসজিদ পর্যন্ত খানাখন্দ ও বিটিসিএলের খোঁড়াখুঁড়ির কারণে ওই সড়কটি বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে। এ ছাড়া দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় বিচ্ছিরি অবস্থা বিরাজ করছে। অন্যদিকে হোটেল ওয়েস্টিনের দক্ষিণের সড়কেরও শোচনীয় অবস্থা। মিরপুর প্রিন্স আয়রন ফ্যাক্টরি থেকে অরিজিনাল ১০ নম্বর সেকশন পর্যন্ত ওয়াসা মেরামত কাজ চলমান রাখায় এই সড়কে চলাচলকারী হাজার হাজার যাত্রীকে ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ হচ্ছে স্কুল ও কলেজগামী শিক্ষার্থীদের। এ ছাড়া মিরপুর ১১ নম্বর সেকশন থেকে কালশী পর্যন্ত ২ কিলোমিটার সড়কের অবস্থা শোচনীয়। যথাসময়ে সংস্কার না হওয়ায় এই সড়কে যানবাহন চলছে ঝাঁকি খেতে খেতে। মতিঝিল-আরামবাগ এলাকার সড়কের অবস্থা যাচ্ছেতাই। ওয়াসা ও বিটিসিএলের খোঁড়াখুঁড়ির কারণে প্রতিদিন দুর্ভোগে পড়ছেন স্থানীয় এলাকাবাসী। সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের দাবি, বাস্তবে ভাঙাচোরা সড়কের পরিমাণ কিছুটা কম হবে। তাদের অনুমানভিত্তিক পরিমাপ অনুযায়ী যথাসময়ে সংস্কারের অভাবে প্রায় ৫০০ কিলোমিটার সড়কে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। ফ্লাইওভার পাইলিংসহ নির্মাণকাজ এবং ওয়াসা, ডেসা ও বিটিসিএলসহ বিভিন্ন সংস্থার খোঁড়াখুঁড়িতে বিপর্যস্ত ৩০০ কিলোমিটার সড়ক। এ ছাড়া ওয়াসার লাইন ফেটে কিংবা ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনার দুর্বলতার কারণে আরও ২০০ কিলোমিটার সড়ক দীর্ঘ সময় জলাবদ্ধতার কারণে নষ্ট হয়েছে। এদিকে প্রতি বছর সড়ক সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ খাতে শত শত কোটি টাকা ব্যয় করা হলেও সুফল পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ অধিকাংশ নগরবাসীর। জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ কুদরত উল্লাহ বলেন, সড়ক সংস্কারে চলতি অর্থবছরে (২০১৪-১৫) ১৭০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা রয়েছে। এর বাইরেও কিছু প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ডিএনসিসির পাঁচটি অঞ্চলের কর্মকর্তাদের বলা হয়েছিল, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অধিকতর ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের তালিকা তৈরি করতে।
সেভাবে যাচাই-বাছাই শেষে তালিকাভুক্তির কাজ চলছে। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলো মেরামতে দরপত্র আহ্বান করা শুরু হয়েছে। শীঘ্রই মেরামত কাজ শুরু হবে। অন্য এক প্রশ্নের জবাবে ডিএনসিসির কর্মকর্তা সৈয়দ কুদরত উল্লাহ আরও বলেন, অর্থ বরাদ্দসাপেক্ষে ক্ষতিগ্রস্ত সব সড়ক মেরামত করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। তার পরও তারা নগরবাসীর দুর্ভোগ লাঘবে সামর্থ্য অনুযায়ী ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলো মেরামত করে থাকেন। গত অর্থবছরে রাজধানীর সড়ক সংস্কার ও রক্ষণাক্ষেণ খাতে ১৬০ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে বলে জানান তিনি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর