শিরোনাম
শুক্রবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৪ ০০:০০ টা

পরিত্যক্ত ও ভাড়া বাড়িতে ডিএমপির ২০ থানা

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)-এর ২০ থানার স্থায়ী ঠিকানা হয়নি। এসব থানার কার্যক্রম চলছে পরিত্যক্ত ও ভাড়া বাড়িতে। কোনো কোনো থানা চলছে ফাঁড়িতেই। যানবাহন রাখার স্থান না থাকায় পুলিশের গাড়ি মোটরসাইকেল রাখতে হচ্ছে রাস্তার ওপর। পুলিশ কর্মকর্তাদের চেয়ার-টেবিল রাখার নেই পর্যাপ্ত জায়গা। মূল্যবান নথিপত্র, ফাইল রাখার জন্য নেই প্রয়োজনীয় সংখ্যক আলমারি বা ফাইল কেবিনেট। বারান্দায় অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে থাকে মামলার আলামত। নিজস্ব ভবন না থাকায় এসব থানার কার্যক্রমে গতি নেই বলে জানিয়েছেন একাধিক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। জানা গেছে, পরিসংখ্যান অনুযায়ী রাজধানীতে মোট থানার সংখ্যা ৪৯টি। এর মধ্যে ২৪টি থানার কার্যক্রম চলছে নিজস্ব ভবন ও পুরানা পুলিশ ফাঁড়িতে। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের পরিত্যক্ত ভবনে রয়েছে ৪টি থানা। দুটি থানার কার্যক্রম বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ ও রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের জমিতে পরিচালিত হচ্ছে। বাকি থানার নিজস্ব কোনো ভবন নেই। বাকি থানাগুলো ভাড়া করা বাড়ি ও ডিসিসির কমিউনিটি সেন্টারে অস্থায়ীভাবে তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছে। ঢাকার ৬টি কমিউনিটি সেন্টারে থানার কার্যক্রম চলায় নিম্ন আয়ের মানুষ তা ব্যবহার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল গত মাসে জাতীয় সংসদে বলেছেন, থানা ভবন নির্মাণের জন্য সরকারি খাস জমি অনুসন্ধান করা হচ্ছে। খাস জমি বন্দোবস্ত প্রাপ্তিসাপেক্ষে থানা কমপ্লেঙ্ নির্মাণ করা হবে। ধীরে ধীরে ভাড়া করা ভবন ছেড়ে দেওয়া হবে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর লালবাগ, কামরাঙ্গীরচর, আদাবর, শাহ আলী, পল্লবী, কাফরুল, হাজারীবাগ, দক্ষিণ খান, উত্তর খান, দারুস সালাম, কদমতলী ও বংশাল থানার কার্যক্রম চলছে স্বল্প পরিসরের ভাড়া বাড়িতে। স্থান সংকুলান না হওয়ায় এসব থানার কর্মকর্তারা তাদের প্রাত্যহিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে করতে পারছেন না। তাদের নেই বসার জন্য পর্যাপ্ত চেয়ার-টেবিল। এক টেবিল ভাগাভাগি করে চার্জশিট, চূড়ান্ত রিপোর্ট, সাধারণ ডায়েরি ও ঘটনার তদন্ত রিপোর্ট লিখতে হচ্ছে। কর্মক্লান্ত পুলিশ কর্মকর্তাদের বিশ্রাম নেওয়ার মতো জায়গাও নেই। এতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েন থানার মহিলা পুলিশ সদস্যরা। থানার নিজস্ব জায়গা না থাকায় বিভিন্ন মামলায় আটককৃত যানবাহন মাসের পর মাস পড়ে থাকে রাস্তার ওপর। থানার ভিতরে পুলিশ সদস্যদের আবাসন ব্যবস্থা না থাকায় কর্মস্থল থেকে দূরে বাসা বা মেস ভাড়া করে থাকতে হচ্ছে তাদের। একাধিক থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানান, স্বল্প পরিসরের ভাড়া করা বাড়িতে থানা ভবন থাকায় কাজের অনেক সমস্যা হয়। সবচেয়ে বড় সমস্যা থানার অস্ত্রাগার নিয়ে। সবসময় সতর্ক থাকতে হয়। জায়গার স্বল্পতার কারণে থানার হাজতখানার নিরাপত্তা নিয়েও শঙ্কিত থাকতে হয়। কখনো কখনো অমানবিকভাবে রাখা হয় আসামিদের। ডিএমপির স্টেট শাখা সূত্র জানায়, রমনা মডেল থানা, শাহবাগ, নিউমার্কেট, শ্যামপুর, যাত্রাবাড়ী, সূত্রাপুর, পল্টন মডেল থানা, তেজগাঁও থানা, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল, মোহাম্মদপুর, মিরপুর, বাড্ডা, খিলক্ষেত, তুরাগ, ক্যান্টনমেন্ট, উত্তরা, কোতোয়ালি, চকবাজার, গেণ্ডারিয়া, রামপুরা, খিলগাঁও থানার সার্বিক কার্যক্রম চলছে নিজস্ব থানা ভবনে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, এক সময় থানাগুলোর নির্ধারিত এলাকার সীমারেখা বেশ বড় ছিল। তখন পুলিশি টহল জোরদার ও অপরাধ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপন করা হয়েছিল। কিন্তু এসব ফাঁড়িতে থানা স্থাপনের পরে বস্তুত ফাঁড়ি পুলিশের কাজ কমে গেছে। ফাঁড়ি পুলিশ ও থানা পুলিশ একই কাজ করছে এখন। পোস্তগোলা পুলিশ ফাঁড়িতে অস্থায়ীভাবে শ্যামপুর থানা, তেজগাঁও পুলিশ ফাঁড়িতে অস্থায়ীভাবে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানা, খিলক্ষেত পুলিশ ফাঁড়িতে অস্থায়ীভাবে খিলক্ষেত থানা, দিয়াবাড়ি পুলিশ ফাঁড়িতে অস্থায়ীভাবে তুরাগ থানা, এবং খিলগাঁও পুলিশ ফাঁড়িতে অস্থায়ীভাবে খিলগাঁও থানার কার্যক্রম চলছে।

সূত্র জানায়, মতিঝিল, গুলশান, ধানমন্ডি থানার কার্যক্রম চলছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের পরিত্যক্ত ভবনে। বিমানবন্দর থানার কার্যক্রম চলছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের মালিকানাধীন কার্গো ভিলেজের কিছু অংশে। ডেমরা থানার কার্যক্রম চলছে বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের মালিকানাধীন আহম্মেদ বাওয়ানী টেঙ্টাইল মিলের জমিতে। বাকি থানাগুলোর জন্যে বিভিন্ন ভবন ভাড়া করা হয়েছে। এর মধ্যে শহীদনগর কমিউনিটি সেন্টারে লালবাগ থানা, ভূতের গলি কমিউনিটি সেন্টারে কলাবাগান থানা, মুগদাপাড়ার আফিলউদ্দিন কমিউনিটি সেন্টারে মুগদা থানা, ইংলিশ রোডের ফজলুল করিম কমিউনিটি সেন্টারে বংশাল থানা এবং আবদুর রহমান কমিউনিটি সেন্টারে চলছে ওয়ারী থানার কার্যক্রম। ডিসিসিকে সরকারি হারে ভাড়া দেওয়া হয়ে থাকে। সূত্র জানায়, হাজারীবাগ, আদাবর, শাহআলী, দারুস সালাম, পল্লবী, কাফরুল, কামরাঙ্গীরচর, কদমতলী, বনানী, উত্তরখান ও দক্ষিণখানসহ বাকি থানাগুলো চলছে ভাড়া করা ভবনে। প্রতি মাসে ১০ লক্ষাধিক টাকা ভাড়া বাবদ খরচ করতে হচ্ছে ডিএমপিকে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পল্লবীতে পাঁচতলা বাড়ির নিচতলা ও দ্বিতীয়তলায় থানার কার্যক্রম চালানো হয়। তৃতীয়তলা থেকে পঞ্চমতলা পর্যন্ত মাত্র ১৫টি কক্ষে একশর বেশি পুলিশ সদস্য গাদাগাদি করে থাকেন। কদমতলী থানার ছয়তলা বাড়ির পঞ্চম ও ষষ্ঠতলায় কনস্টেবলদের ব্যারাক রয়েছে। উত্তরখান ও দক্ষিণখান থানা ভাড়া করা বাড়িতে চললেও এ দুই থানায় কনস্টেবলদের আলাদা থাকার কোনো আবাসন নেই। কাফরুল থানার দ্বিতীয়তলার এক পাশে চলে থানার কার্যক্রম। অপর পাশে ৪টি কক্ষে কনস্টেবল ও এএসআইদের আবাসিক ব্যবস্থা। ৫০ জন কনস্টেবল ও এএসআই থানার দোতলায় থাকেন। পরিত্যক্ত যে ৪টি বাড়িতে থানার কার্যক্রম চলছে সেখানে কোনো আবাসিক ব্যবস্থা নেই। মতিঝিল, সবুজবাগ, ধানমন্ডি ও গুলশান থানা ভবন নিয়ে আদালতে একাধিক মামলা চলছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর