রবিবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০১৪ ০০:০০ টা
পিলখানায় প্রধানমন্ত্রী

বিজিবির হারানো ঐতিহ্য ফিরেছে

বিজিবির হারানো ঐতিহ্য ফিরেছে

বিজিবি সদর দফতরে প্যারেড পরিদর্শন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা -বাংলাদেশ প্রতিদিন

পিলখানায় সংঘটিত হত্যাকাণ্ডকে ইতিহাসের কালো অধ্যায় আখ্যা দিয়ে সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) কর্মকর্তা ও সেনাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ২০০৯ সালের ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারি যে হৃদয়বিদারক ঘটনা এখানে ঘটে গেছে, তেমন কোনো ঘটনা কোনো সুশৃঙ্খল বাহিনীতে ঘটুক, তা আমরা চাই না। কোনো সমস্যা দেখলে আগে আমাকে জানাবেন। আমাদের বলবেন। আপনারা কোনো দ্বিধা করবেন না। আমরা সমাধান করতে পারব।
গতকাল বিজিবি দিবস উপলক্ষে পিলখানায় বাহিনীর সদর দফতরে বার্ষিক অনুষ্ঠান উদ্বোধনের পর বীরউত্তম ফজলুর রহমান মিলনায়তন দরবারে এ নির্দেশনা দেন তিনি। পাঁচ বছর পর গতকাল বিজিবি সদর দফতরে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে বীরউত্তম আনোয়ার হোসেন প্যারেড গ্রাউন্ডে পৌঁছলে বিজিবি সদস্যরা প্রধানমন্ত্রীকে গার্ড অব অনার প্রধান করেন। শেখ হাসিনা গত মেয়াদে সরকার গঠনের দুই মাসের মাথায় বার্ষিক অনুষ্ঠানের মধ্যে ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি এই দরবার হলেই বিডিআর বিদ্রোহে বিডিআরে কর্মরত ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হন। এর পর আর বিজিবি সদর দফতরে যাননি প্রধানমন্ত্রী।         

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিজিবি সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, ২০০৯ সালের ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় সংঘটিত হত্যাকাণ্ড এ বাহিনীর ইতিহাসে কালো অধ্যায়। সে সময় কতিপয় বিপথগামী ও উচ্ছৃঙ্খল বিডিআর সদস্য তথাকথিত বিদ্রোহের নামে বিশৃঙ্খলা ও নৃশংস হত্যাকাণ্ড চালিয়েছিল। আমরা ৫৭ জন অফিসারসহ ৭৪টি মূল্যবান প্রাণ হারিয়েছি। আপনাদের সহযোগিতায় চক্রান্তকারীদের সব অপতৎপরতা আমরা ধৈর্য ও সতর্কতার সঙ্গে মোকাবিলা করেছি। যা আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। বিজিবির হারানো সেই ঐতিহ্য ফিরে এসেছে।
তিনি বলেন, আমাদের প্রতিটি কাজ অত্যন্ত চিন্তা করে করতে হবে। এমন কিছু করা যাবে না, যাতে আমাদের দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট বা আপনারা যে বাহিনীতে আছেন, তার ভাবমূর্তি নষ্ট হয় বা কোনো রকম বদনাম হয়। দেশ চালাতে এসেছি জনগণের কল্যাণের জন্য। আপনাদের সুখ-সুবিধা, ভালো-মন্দ অবশ্যই আমাদের দেখার দায়িত্ব।        

শেখ হাসিনা বলেন, পিলখানার মর্মান্তিক ঘটনার পর আমরা এ বাহিনীর শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে এবং একটি আধুনিক ও যুগোপযোগী সীমান্তরক্ষী বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ আইন-২০১০ পাস করেছি। এ জন্য ব্যাপক সংস্কার ও উন্নয়নমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। বিজিবির নতুন সাংগঠনিক কাঠামো অনুযায়ী ৪টি রিজিয়নে সদর দফতর স্থাপন করে কমান্ড বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে এ বাহিনীকে গতিশীল ও বেগবান করা হয়েছে। বিজিবির গোয়েন্দা সংস্থাকে শক্তিশালী করতে বর্ডার গার্ড সিকিউরিটি ব্যুরো স্থাপন করা হয়েছে।
সকাল ৯টায় পৌঁছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিজিবি সদস্যদের কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও অভিবাদন গ্রহণ করেন। এ সময় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ উপস্থিত ছিলেন। কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে বীরত্বপূর্ণ ও কৃতিত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতি হিসেবে বিজিবি সদস্যদের মধ্যে ১০ জনকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ পদক, ২০ জনকে রাষ্ট্রপতি বর্ডার গার্ড পদক, ১০ জনকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ সেবা পদক, ২০ জনকে রাষ্ট্রপতি বর্ডার গার্ড সেবা পদক প্রদান করা হয়। প্রধানমন্ত্রী পদকপ্রাপ্তদের পদক পরিয়ে দেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ৫ জানুয়ারি নির্বাচনকালীন বিএনপি-জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসী নৈরাজ্য সৃষ্টির অপতৎপরতা আপনারা কঠোরভাবে প্রতিহত করেছেন। নির্বাচন পূর্ব-পরবর্তী সময় দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীদের আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্তদের বসতবাড়ি, দোকান, উপাসনালয় পুনর্নির্মাণের দায়িত্ব আপনারা সুন্দরভাবে পালন করেছেন। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছেন। এ জন্য আমি আপনাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।  বিজিবির জনবল বৃদ্ধির কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ২০ হাজারের বেশি লোক নিয়োগ করা হয়েছে। বিজিবির প্রশিক্ষণ কারিকুলামে সীমান্ত ব্যবস্থাপনা, সামরিক প্রশিক্ষণ, শারীরিক ও মানসিক উন্নয়ন, মানবাধিকার, সামাজিক ও নৈতিক শিক্ষার মতো বিষয়গুলোতে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। বিজিবি সদস্যদের স্ত্রী ও সন্তানদের পাশাপাশি তাদের বাবা-মায়ের চিকিৎসার সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। অবসরপ্রাপ্ত সদস্যদের চিকিৎসা চালু করেছি। চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় ৫০ শয্যাবিশিষ্ট আধুনিক হাসপাতাল চালু করা হয়েছে। এ বাহিনীর পরিবারের সদস্যদের রেশন ৬০ ভাগ থেকে ১০০-এ উন্নীত করা হয়েছে। জীবনমান ও আর্থ-সামাজিক সঙ্গতি বিবেচনা করে বিজিবি সদস্যদের ৩০ ভাগ সীমান্ত ভাতা প্রদান করা হয়েছে।     

গীতিকার গোবিন্দ হালদারের চিকিৎসার দায়িত্ব নিলেন প্রধানমন্ত্রী : কলকাতায় চিকিৎসাধীন স্বাধীন বাংলা বেতারের গীতিকার গোবিন্দ হালদারের চিকিৎসার ব্যয়ভার বহনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত শুক্রবার বাংলাদেশ প্রতিদিনে ‘অসুস্থ কালজয়ী গীতিকার গোবিন্দ হালদার’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এর ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গোবিন্দ হালদারের স্বাস্থ্যের খোঁজ নেন এবং চিকিৎসার ব্যয়ভার গ্রহণের ঘোষণা দেন করেন।

সর্বশেষ খবর