সোমবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০১৪ ০০:০০ টা
মুক্তিযোদ্ধা দলের সমাবেশে খালেদা জিয়া

জনগণকে নিয়েই রাজপথে নামব

জনগণকে নিয়েই রাজপথে নামব

রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে খালেদা জিয়া -বাংলাদেশ প্রতিদিন

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে অচিরেই আন্দোলন শুরু করতে হবে। আমরা অস্ত্রের মোকাবিলায় জনগণকে সঙ্গে নিয়ে পথে নামব। আমাদের আন্দোলন হবে শান্তিপূর্ণ, নিয়মতান্ত্রিক, জনগণের আন্দোলন। জনগণের সেই আন্দোলনে স্বৈরাচারী, অবৈধ সরকার তাসের ঘরের মতো ভেসে যাবে ইনশাল্লাহ। গতকাল সন্ধ্যায় রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে মুক্তিযোদ্ধা দল আয়োজিত বিজয় দিবসের সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন। খালেদা জিয়া বলেন, মানুষের অবস্থা ও দেশের পরিস্থিতি দিন দিন খারাপ হচ্ছে। সবার পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। আমাদের শান্তিপূর্ণ আহ্বানে তারা সাড়া দেয়নি। তাই আমাদের বসে থাকার আর কোনো উপায় নেই। দেশের জনগণ আন্দোলন চায়, পরিবর্তন চায়। তারা তাদের ভোটাধিকার ফিরে পেতে চায়। তারা ভোট দিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চায়। সে জন্য তারা বিএনপি ও ২০ দলের প্রতি আন্দোলন করার জন্য প্রতিনিয়ত আহ্বান জানাচ্ছে। আমি যেখানেই যাচ্ছি, দলে দলে লোক এসে আন্দোলনের দাবি জানাচ্ছে। জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাতের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, গণস্বাস্থ্যর ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, আবদুল্লাহ আল নোমান, শমসের মবিন চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, প্রচার সম্পাদক অ্যাডভোকেট জয়নুল আবদিন ফারুক, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) ড. অলি আহমেদ, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম প্রমুখ। এর আগে দুপুর সোয়া ১টায় আইইবি চত্বরে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে সমাবেশের উদ্বোধন করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। অনুষ্ঠানে অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের বিএনপির পক্ষ থেকে আর্থিক অনুদান দেওয়া হয়। আর্থিক অনুদানপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধারা হলেন- মোশাররফ হোসেন, খুরশীদ আলম সেজু মিয়া, জিয়াউল হক বাবু, মতিউর রহমান মনি, মো. শাহজাহান, আবু ইউসুফ হাওলাদার, আবদুল আজীজ, মো. রমজান আলী, আবুল কালাম ও মো. মোহন মিয়া। আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে খালেদা জিয়া বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধে তাদের ভূমিকা ছিল প্রশ্নবিদ্ধ।
যুদ্ধের সময় তারা ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল। সত্যিকার দেশ প্রেম তাদের ছিল না। তিনি বলেন, তথ্য-উপাত্ত দিয়ে সত্য কথা বললে পাকিস্তানের চর বলে তারা অশ্লীল ভাষায় গালি দেয়।

২০ দলীয় জোটনেত্রী বলেন, আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ ছিল জাতীয় জনযুদ্ধ। মুক্তিযোদ্ধারা কোনো দয়া চান না, তারা চান সম্মান। তারা জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছিলেন দেশের জন্য। মুষ্টিমেয় বিরোধীতাকারী ছাড়া, দল-মত নির্বিশেষে সকলস্তরের মানুষ ছিল স্বাধীনতার পক্ষে। বাংলাভাষী সৈনিক, সীমান্তরক্ষী , আনসার, পুলিশের পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার তরুণরা এবং ছাত্র-যুবকেরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করেছে। দুর্ভাগ্যের বিষয় স্বাধীনতার ঊষালগ্ন থেকেই মহান স্বাধীনতাযুদ্ধের সাফল্যকে দলীয়করণ করার অপচেষ্টা শুরু হয়। সেই হীন উদ্দেশ্যেই স্বাধীনতাযুদ্ধের ইতিহাসকেও বিকৃত করার প্রক্রিয়া চলে। এর কারণ, স্বাধীনতাযুদ্ধে তাদের ভূমিকা ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। জাতির সেই ঘোর সংকটকালে তারা ইতিহাস-নির্ধারিত দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছিল। রণাঙ্গনে জীবনবাজী রেখে তারা যুদ্ধ করেনি। ভারতে আশ্রিত জীবন কাটিয়েছে। জাতীয় স্বাধীনতা অর্জন ও আক্রান্ত জনগণকে রক্ষার চেয়ে তারা নিজেদের ও তাদের পরিবারের নিরাপত্তার কথাই বেশি ভেবেছে।
খালেদা জিয়া বলেন, ইতিহাস তার স্বাভাবিক গতিতেই চলবে। গালাগালি ও হুমকি দিয়ে ইতিহাসের গতিপথ পরিবর্তন করা যাবে না। ১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ পর্যন্ত তদানীন্তন মেজরিটি পার্টি পাকিস্তানি সামরিক প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে ক্ষমতা হস্তান্তর নিয়ে সমঝোতার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছিল। পাকিস্তানের শাসনতন্ত্র রচনা নিয়ে সৃষ্ট বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য তারা সচেষ্ট ছিল। এই আলোচনার আড়ালে যে সৈন্য ও অস্ত্র আনা হচ্ছিল, তা জেনেও তারা স্বাধীনতার পথে অগ্রসর হয়নি। বাংলাভাষী সামরিক অফিসারদের দেয়া স্বাধীনতা ষোষণার প্রস্তাব তারা অগ্রাহ্য করেছিল। আর তাই হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদে হরতাল ছাড়া আর কোনো কর্মসূচি তারা ঘোষণা করতে পারেনি।
স্বাধীনতা ঘোষণা করতে অস্বীকৃতির পাশাপাশি তাদের সর্বশেষ পরামর্শ ছিল ‘নাকে তেল দিয়ে ঘুমানোর’। আক্রমণের মুখে কোনো দিক-নির্দেশনা না দিয়ে পালিয়ে যাওয়া কিংবা আত্মসমর্পণ করা ছাড়া তাদের সামনে আর কোনো পথ খোলা ছিল না। তাদের এই ব্যর্থতার পটভূমিতে জিয়াউর রহমান বিদ্রোহ করেছিলেন। হানাদার বাহিনীর অধিনায়ক জানজুয়াকে হত্যা ও বাকীদের বন্দী করেছিলেন। বেতার মারফৎ স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে স্বাধীনতাযুদ্ধের সূত্রপাত ঘটিয়েছিলেন। তার ঘোষণার মাধ্যমেই। প্রতিরোধযুদ্ধ উন্নীত হয়েছিল স্বাধীনতার যুদ্ধে। তার সেই কণ্ঠ দেশবাসী শুনেছে এবং সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। আর কারো সেই সাহস হয়নি। এটাই বাস্তবতা। এটাই ইতিহাসের অমোঘ সত্য।
খালেদা জিয়া আওয়ামী লীগ নেতাদের ইঙ্গিত করে বলেন, রণাঙ্গনের লড়াইয়ে তারা অংশ নেয়নি বলেই মুক্তিযোদ্ধাদের কখনো আন্তরিকভাবে সম্মান ও মর্যাদা দেয়নি। স্বাধীনতা যুদ্ধের বিজয়ের লগ্নে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পরাজিত পাকিস্তানি সৈন্যদের আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে তারা মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল এম.এ.জি ওসমানী কিংবা প্রধান সেনাপতি অর্থাৎ চিফ অব আর্মি স্টাফ মেজর জেনারেল আবদুর রবের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে পারেনি। তাদের আস্থাভাজন ডেপুটি চিফ অব স্টাফ এ. কে খোন্দকারকে সেদিন বাংলাদেশের পক্ষ থেকে পর্যবেক্ষক হিসাবে পাঠানো হয়েছিল। সেই আস্থাভাজন ব্যক্তিটিও যখন স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস ও পূর্বাহ্নের প্রস্তুতিহীনতা সম্পর্কে কিছু সত্য কথা বলে ফেললেন, তখন তাকেও ‘পাকিস্তানের চর’ আখ্যা দিতে তারা দ্বিধাবোধ করেনি। এই হলো আওয়ামী লীগের চরিত্র।
আন্দোলনে সরকার হঠানোর ঘোষণা দিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ন্যায়সঙ্গত বিদ্রোহ অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা ন্যায়সঙ্গত। আজ সেই ন্যায়সঙ্গত বিদ্রোহ সংগঠিত করার সময় এসেছে। এই বিজয়ের মাসে সেই প্রস্তুতি আমাদের সম্পন্ন করতে হবে। তিনি বলেন, ৫ই জানুয়ারি কোন নির্বাচন হয়নি। ভোট ছাড়া কোন সরকার হতে পারে না। তাই আমরা সুষ্ঠ নির্বাচন চাইছি। যেখানে সবাই অংগ্রহণ করতে পারবে। কেউ ক্ষমতায় থেকে আর কেউ ক্ষমতাহীন থেকে নির্বাচন করবে, তা হতে পারে না। তিনি বলেন, আমাদের আর বসে থাকার উপায় নেই। ২০ দলের প্রতি প্রতিনিয়ত জনগণ আন্দোলন করার আহ্বান জানাচ্ছে।

সর্বশেষ খবর