মঙ্গলবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৪ ০০:০০ টা
স্থানীয় এমপি গোলাম দস্তগীরের নির্দেশ

রূপগঞ্জের শীর্ষ সন্ত্রাসী বাদল থানায় জামাই আদরে!

রূপগঞ্জের শীর্ষ সন্ত্রাসী বাদল থানায় জামাই আদরে!

বিপুল পরিমাণ অস্ত্রসহ র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হওয়া রূপগঞ্জের শীর্ষ সন্ত্রাসী শফিকুর রহমান বাদলের রিমান্ড আবেদনের শুনানি হয় রবিবার। দীর্ঘ শুনানির পর আদালত বাদলের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ড মঞ্জুর হওয়ার পরও স্থানীয় এমপি গোলাম দস্তগীরের নির্দেশে থানায় তাকে জামাই আদরে রাখা হয়েছে। রিমান্ডে না নিয়ে থানার পক্ষ থেকে বাদলকে ভালো খাবার-দাবার ও আরাম-আয়েশের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। বাদলের অস্ত্রের আরও ভাণ্ডার কোথায় আছে- এসব জিজ্ঞাসাবাদ না করে উল্টো পুলিশ তার ভালোমন্দ খোঁজখবর নিচ্ছে। এদিকে বাদলকে ছাড়িয়ে আনতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন এমপি ও বাদলের অনুসারীরা। বাদল আতঙ্কে আছেন কায়েতপাড়া ইউনিয়নবাসী। অনেকে ভয়ে এখন থেকেই এলাকা ছেড়ে ঢাকায় বাসা ভাড়া নিয়েছেন।
উল্লেখ্য, র‌্যাব-১১ ইসাখালীতে বাদলের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে একটি দোনলা বন্দুক, দুটি পিস্তল, চারটি ম্যাগাজিন, ১৩৫ রাউন্ড তাজা গুলি, একটি নান চাকু, দুটি চাইনিজ কুড়াল, গ্রিল কাটার কাঁচি, দেশীয় অস্ত্রসহ তাকে গ্রেফতার করে। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা হয়েছে। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে কয়েকটি জিডি ও পাঁচ-ছয়টি মামলা রয়েছে। র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হওয়ার আগ পর্যন্ত বাদল ছিল মূর্তিমান আতঙ্ক। তাকে গ্রেফতারে কায়েতপাড়ায় স্বস্তি ফিরে এসেছে।
জানা যায়, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর বাদল বেপরোয়া হয়ে ওঠে। স্থানীয় এমপি গাজী গোলাম দস্তগীরের আশ্রয়ে-প্রশ্রয়ে অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠে। সে প্রতিদিন প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে ঘোরাফেরা করত। কেউ কিছু বললে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলত, ‘মটকা গরম হলে খবর আছে’। আর তার কাজে কেউ বাধা হলে কিংবা তার কথার প্রতিবাদ করলেই তাকে হেনস্থা হতে হতো। ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডের এ শীর্ষ সন্ত্রাসী রূপগঞ্জে এসে অনেক শিল্পপতি, ব্যবসায়ী ও জনপ্রতিনিধিকে হুমকি-ধমকি দিয়ে বেড়াত। নিজের কোনো উপার্জন না থাকলেও ৭০ জনের সন্ত্রাসী বাহিনী লালন-পালন করত। তার এত টাকার উৎস কোথা থেকে তা-ও প্রশাসন কোনো দিন খতিয়ে দেখেনি। ২০১১ সালের ইউপি নির্বাচনে সে প্রার্থী হয়ে লাখ লাখ টাকা খরচ করেছে। তার উৎস কোথা থেকে তা দুদক কোনো দিন খবর নেয়নি। বীরদর্পে বাদল এলাকা দাপিয়ে বেড়ালেও প্রশাসন তার টিকিটি ছুঁতে পারেনি।
অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, বাদল মগবাজার এলাকায় থাকাকালীন মগবাজারের কয়েকটি গার্মেন্টের নারী শ্রমিকের সর্বনাশ করেছে। এদের মধ্যে কেউ অন্তঃসত্ত্বা হয়েছে। কেউ বিচার না পেয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে। ঢাকায় থাকাকালীন সে ছিনতাই, ডাকাতি করত। সরকারের পুরস্কার ঘোষিত শীর্ষ সন্ত্রাসী কালা জাহাঙ্গীর, প্রকাশ-বিকাশ, সুব্রত বাইনসহ বেশ কয়েকজনের সঙ্গে ছিল তার সখ্য। ঢাকার অনেক কিলিং মিশনে বাদল নিজেই অপারেশন করত। মগবাজারেও ছিল বাদলের ৩৫ জনের বাহিনী। সরকার যখন ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসী গ্রেফতারে পুরস্কার ঘোষণা করে, ঠিক সেই সময়ে সে রূপগঞ্জের নিজ বাড়ি ইসাখালীতে গিয়ে আস্তানা গড়ে তোলে। ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী ও নারায়ণগঞ্জের সেভেন মার্ডারের অন্যতম আসামি, মিনি গডফাদার নূর হোসেনের সহযোগী ও রূপগঞ্জের ত্রাস এই শফিকুর রহমান বাদল একসময় মূর্তিমান আতঙ্ক ছিল। র‌্যাব-১১ এর হাতে গ্রেফতারের পর এলাকাবাসীর মাঝে আতঙ্ক আরও বেড়ে গেছে। জামিনে বের হয়ে এসে সে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠবে বলে সাধারণ মানুষ ধারণা করছে। তাকে জামিনে বের করে আনতে ইতিমধ্যে বিশেষ বিশেষ জায়গায় চাঁদা কালেকশন চলছে। এ ছাড়া বাদলের পরিবার বিভিন্ন মহলে দৌড়ঝাঁপ করছে। বাদলের বাবা হাবিবুর রহমান ও চাচা মহিবুর রহমান বাদলকে জামিনে বের করে আনতে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এক নেতার বাসায় দৌড়ঝাঁপ করছেন। পাশাপাশি তারা স্থানীয় এমপির সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, জেল থেকে বের হয়ে এসে কাকে কাকে হেনস্থা করবে বাদল এ নিয়ে এখন থেকেই ছক করছে। কোথা থেকে টাকা কালেকশন করতে হবে, কোথায় কোথায় যেতে হবে এসব নির্দেশনা দিচ্ছে তার অনুসারীদের। এদিকে বাদলের স্ত্রী তার স্বামীকে জামিনে বের করে আনতে ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে যোগাযোগ শুরু করছে বলে জানা যায়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা ও জনপ্রতিনিধি বলেন, বাদলের অত্যাচারের শিকার হয়েছে শতাধিক লোক। এদের অনেকেই এখন পঙ্গু। তার অত্যাচার ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন কায়েতপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুল আউয়াল, ছাতিয়ান এলাকার খলিলুর রহমান, কায়েতপাড়ার ওয়াহেদা সিদ্দিকা, হরিণার রহিম বক্স, পশ্চিমগাঁও এলাকার যুবলীগ নেতা সামসুল হক, বরুণা এলাকার আলতাব হোসেন, মুসলিম মিয়া, ইছাখালী এলাকার মহিউদ্দিন, শফিসহ আরও অনেকে। নির্যাতনের শিকার হয়েছেন কায়েতপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গোলজার হোসেন। কায়েতপাড়া এলাকার দিলু ভেন্ডার তার চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে ছয় মাস ধরে এলাকাছাড়া। বাদলের নির্যাতন থেকে রেহাই পায়নি কায়েতপাড়ার চা-দোকানদারও। তারা আরও জানান, কোনো পক্ষ থেকে টাকা পেলে ওই পক্ষের হয়ে বিচার-শালিসে দলবল নিয়ে হাজির হতো সে। এ ছাড়া কোথাও বালু ভরাটের কাজ চললে তাকে টাকা না দিয়ে বালু ভরাটের কাজ করা যেত না। তার কুচরিত্রের কারণে তার আগের বউ তাকে ছেড়ে চলে গেছে। পাঁচ মাস আগে মাদকের বিরুদ্ধে ওয়াজ-নসিহত করায় সে তার বাড়ির পাশের মসজিদের ইমাম মতিন মিয়াকে পিটিয়ে আহত করে। এ ছাড়া অনেকের সুন্দরী বউও তার হাত থেকে রেহাই পায়নি। গ্রেফতার হওয়ার আগে বাদলের নেতৃত্বে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ডাকাতির ঘটনা ঘটাত। র‌্যাব তার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে কলাপসিবল গেট ও তালা কাটার কাঁচি উদ্ধার করে। অস্ত্র বহনে সে ব্যবহার করত সুন্দরী মেয়েদের।

সর্বশেষ খবর