বৃহস্পতিবার, ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ ০০:০০ টা

শেষ হয়ে গেল মোদি সরকারের মধুচন্দ্রিমা?

শেষ হয়ে গেল মোদি সরকারের মধুচন্দ্রিমা?

আপের ঝাড়ুতে বিজেপির পদ্মফুল নিষ্পেষিত। রাজধানীর অন্দরমহলে প্রশ্ন উঠেছে কেন এমনটা হলো? মাত্র কয়েকমাস আগে যে মোদি ঝড়ের দাপটে কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারিকা কাঁপছিল, তা কোথায় অন্তর্হিত হলো? তার মানে কি খুব দ্রুত শেষ হয়ে  গেল মোদি সরকারের মধুচন্দ্রিমা?
নানা মুনির নানা মত। রাজনৈতিক সূত্রের মতে, এর কারণ একটি নয়, আসলে একাধিক। প্রথমত, মোদি সরকার নিয়ে মানুষের প্রত্যাশা ছিল পাহাড় প্রমাণ। কিন্তু তার নয় মাসের শাসনকালে এমন একটি ঘটনাও ঘটেনি যার ফলে সেই প্রত্যাশা পূরণের পথে হাঁটতে পেরেছে সাধারণ মানুষ। বরং যতটা গর্জন হয়েছে ততটা বর্ষণ হয়নি বলেই মনে করা হচ্ছে। তার উপরে মোদি সরকারের ওপর লেগে গেছে সাম্প্রদায়িকতার বদনাম। জোর করে ধর্মান্তরিকরণের চেষ্টা, গির্জায় আগুন লাগানো, সংখ্যালঘু অধ্যুষিত অঞ্চলে দাঙ্গা লাগানোর মতো অভিযোগ আর পর্দার আড়ালে লুকোনো যাচ্ছে না বলেই মনে করা হচ্ছে। বিজেপি সাংসদদের দেওয়া হিন্দুদের চারটি করে সন্তানের মতো দাওয়াই, অভিজাত দিল্লিবাসী ভালো চোখে নেননি। তা ছাড়া অরবিন্দ কেজরিওয়ালের বিরুদ্ধে বিজেপির ব্যক্তিগত আক্রমণও ভালো চোখে নেয়নি মানুষ।
এখানেই শেষ নয়। মোদি সরকারের প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থতার পাশাপাশি রয়েছে বিজেপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল। যে কারণে সাবেক বিজেপির মধ্য থেকে সর্বজনগ্রাহ্য কোনো মুখ্যমন্ত্রী প্রার্থী তুলে ধরা যায়নি। শেষ মুহূর্তে আপ থেকে ভাঙিয়ে কিরণ বেদিকে দলে আনাটা বুমেরাংয়ের কাজ করেছে। বিজেপি নেতৃত্বের বক্তব্য তারা একটি চমক দিতে চেয়েছেন। কিন্তু সেই চমক কোনো কাজে লাগেনি। বরঞ্চ সেটা দিল্লি বিজেপির শিবিরে ক্ষোভের জ্বালামুখ খুলে দিয়েছিল। শুরু হয়ে গিয়েছিল অন্তর্ঘাত। উচ্চাসনে বসে মোদি, অমিত শাহ, অরুণ জেটলির মতো নেতারা যার আঁচ পাননি। বিজেপির এক ক্ষুব্ধ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বললেন, ‘মোদি এবং অমিতের বোঝা উচিত, এটা গুজরাট নয়, দিল্লি। গুজরাটের কায়দায় মুষ্টিমেয় কয়েকজনকে নিয়ে সব সিদ্ধান্ত নিলে চলে না।’ দলের একটি বড় অংশের ক্ষোভ দলের পুরনো নেতাদের বাদ দিয়ে কিরণ বেদিকে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তুলে ধরা, দলের যাবতীয় কৌশল তৈরি সমস্ত বিষয়টিই একতরফাভাবে তৈরি করেছেন মোদি এবং অমিত শাহ। একই সঙ্গে তাদের ক্ষোভ দিল্লি বিজেপির পুরনো নেতাদের বাদ দিয়ে সমস্ত রাশটিই হাতে তুলে নিয়েছিলেন অমিত শাহ। দলের মুখপাত্র শাহনওয়াজ হুসেন পর্যন্ত বলছেন, ‘দলের নেতৃত্ব কিরণ বেদিকে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আমরা কিছুই জানতাম না।’ এমনকি কিরণও ঠারোঠরো বুঝিয়ে দিয়েছেন, তিনি হারেননি। হেরেছে দল। তাৎপর্যপূর্ণভাবে তিনি যে আসনটিতে হেরেছেন ১৯৯৩ সাল থেকে সেটি বিজেপি নেতা হর্ষবর্ধনের জেতা আসন। কিরণ যেটি মুখে বলতে পারেননি সেটি তার স্বামী বলে দিয়েছেন। তার কথায় ‘যে কৃষ্ণনগর আসন থেকে কিরণ বেদি লড়েছেন সেটি হর্ষবর্ধনের বহু পুরনো জেতা আসন। কিরণ হেরেছেন মানে তার হয়ে কাজ করেননি দলীয় কর্মীরা।’

সর্বশেষ খবর