বুধবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ ০০:০০ টা

সচল হচ্ছে খালেদা জিয়ার দুর্নীতির দুই মামলা

সচল হচ্ছে খালেদা জিয়ার দুর্নীতির দুই মামলা

দীর্ঘ সাত বছর পর বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে করা দুর্নীতির দুই মামলা ফের সচলের উদ্যোগ নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এর মধ্যেই গ্যাটকো দুর্নীতি মামলায় রুল নিষ্পত্তির জন্য ৯ ফেব্রুয়ারি শুনানির দিন ধার্য করেছিলেন হাইকোর্ট। আর নাইকো ও বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতি মামলার বিষয়ে আদালতের রুল নিষ্পত্তির ব্যবস্থা গ্রহণের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এ দুই মামলার রুল নিষ্পত্তির জন্য ইতিমধ্যে কমিশনের আইন অনুবিভাগের মতামত নেওয়া হয়েছে। মতামত পেয়ে কমিশনের প্যানেলভুক্ত আইনজীবীকে পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে দুদক। শিগগিরই আদালতের রুল নিষ্পত্তির জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। দুদক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
তবে এ প্রসঙ্গে দুদক কমিশনার মো. শাহাবুদ্দিন চুপ্পু বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুই মামলা দুদক সচলের উদ্যোগ নিয়েছে- এমন তথ্য সঠিক নয়। এটা গতানুগতিক ও চলমান একটি প্রক্রিয়া। তিনি (খালেদা জিয়া) উচ্চ আদালতে মামলাগুলো স্থগিত করে রেখেছিলেন। কয়েক দিন আগে দুদকের সব মামলা শুনানির জন্য উচ্চ আদালতে নতুন বেঞ্চ গঠন করা হয়। ফলে পুরনো মামলাগুলো অটোমেটিক শুনানির জন্য নতুন বেঞ্চে (আদালতে) পরবর্তী কার্যক্রম শুরু হবে। এ ছাড়া এসব মামলায় অ্যাডভোকেট আনিসুল হক দুদকের আইনজীবী ছিলেন। বর্তমানে তিনি আইনমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। এ জন্য আমরা আইনজীবী পরিবর্তন করেছি।’ দুদকের প্যানেলভুক্ত আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান বলেন, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা নাইকো ও বড়পুকুরিয়া মামলা নতুন বেঞ্চ গঠিত হওয়ায় ফের শুনানির জন্য দু-এক দিনের মধ্যে আবেদন আদালতে উপস্থাপন করা হবে।
বড়পুকুরিয়া দুর্নীতি মামলা : ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে কনসোর্টিয়াম অব চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশনের (সিএমসি) সঙ্গে চুক্তি করায় রাষ্ট্রের ১৫৮ কোটি ৭১ লাখ টাকার ক্ষতির অভিযোগে বড়পুকুরিয়া দুর্নীতির মামলাটি করা হয়। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৮ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি দুদকের তৎকালীন সহকারী পরিচালক সামছুল আলম বাদী হয়ে রাজধানীর শাহবাগ থানায় মামলাটি করেন। একই বছরের ৫ অক্টোবর এ মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। মামলায় খালেদা জিয়াসহ চারদলীয় জোট সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী আবদুল মান্নান ভূঁইয়া (প্রয়াত), অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান (প্রয়াত), শিল্পমন্ত্রী মতিউর রহমান নিজামী (যুদ্ধাপরাধ মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি), স্বাস্থ্যমন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, তথ্যমন্ত্রী শামসুল ইসলাম, সমাজকল্যাণমন্ত্রী আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ (যুদ্ধাপরাধ মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি), কৃষিমন্ত্রী এম কে আনোয়ারসহ ১৬ জনকে আসামি করা হয়। পরে এ মামলা দায়েরের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন খালেদা জিয়া। ২০০৮ সালের ১৬ অক্টোবর হাইকোর্ট বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি মামলার কার্যক্রম তিন মাস স্থগিত করে রুল জারি করেন। পরে মামলার স্থগিতাদেশের মেয়াদ বাড়ানো হয়। এ মামলায় স্থায়ী জামিনে রয়েছেন খালেদা জিয়া।
নাইকো দুর্নীতি মামলা : ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে কানাডার কোম্পানি নাইকোর সঙ্গে অস্বচ্ছ চুক্তি করে রাষ্ট্রের প্রায় ১৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা ক্ষতির অভিযোগে খালেদা জিয়াসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে এ মামলা দায়ের করে দুদক। ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর দুদকের তৎকালীন সহকারী পরিচালক (বর্তমানে) উপ-পরিচালক মুহাম্মদ মাহবুবুল আলম বাদী হয়ে রাজধানীর তেজগাঁও থানায় মামলাটি করেন। দুদকের তৎকালীন সহকারী পরিচালক (বর্তমানে উপ-পরিচালক) এস এম সাহিদুর রহমান তদন্ত করে ২০০৮ সালের ৫ মে এ মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করেন। অভিযোগপত্রে খালেদা জিয়াসহ ১১ জনকে আসামি করা হয়। এ মামলার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে আবেদন করেন খালেদা জিয়া। ২০০৮ সালের ১৫ জুলাই নাইকো দুর্নীতি মামলার কার্যক্রম দুই মাসের জন্য স্থগিত করা হয়। পরবর্তী সময়ে স্থগিতাদেশের মেয়াদ কয়েক দফায় বাড়ানো হয়। খালেদা জিয়া বর্তমানে এ মামলায় জামিনে রয়েছেন। গ্যাটকো, নাইকো ও বড়পুকুরিয়া দুর্নীতি মামলা ছাড়াও খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা রয়েছে। ওই দুটি মামলার কার্যক্রম সাক্ষ্য গ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে। এদিকে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে করা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে উসকানিমূলক বক্তব্যের মাধ্যমে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টার মামলার প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ১৮ মে দিন ধার্য করেছেন আদালত। গতকাল প্রতিবেদন দাখিল না করায় ঢাকা মহানগর হাকিম শামসুল আরেফিন এই আদেশ দেন।

সর্বশেষ খবর