বৃহস্পতিবার, ৫ মার্চ, ২০১৫ ০০:০০ টা
দুই দলের সন্ত্রাস প্রতিরোধ কমিটি

অগ্রগতি নেই আওয়ামী লীগে, নেতৃত্ব নিয়ে দ্বন্দ্ব

অগ্রগতি নেই আওয়ামী লীগে, নেতৃত্ব নিয়ে দ্বন্দ্ব

দুই মাস ধরে দেশব্যাপী বিএনপি-জামায়াতের নাশকতা-সহিংসতা চললেও পাড়া-মহল্লায় সন্ত্রাস প্রতিরোধ কমিটি গঠনে গতি নেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে। অভিযোগ রয়েছে কমিটির নেতৃত্ব গঠনেও জটিলতা। কমিটির প্রধান কে হবেন তা নিয়ে দলীয় এমপি ও নেতৃত্বের মধ্যে চলছে প্রতিযোগিতা। সংসদ অধিবেশন থাকায় এমপিরা ঢাকায় অবস্থানের কারণেও সন্ত্রাসবিরোধী প্রচার-প্রচারণা হচ্ছে না জেলা, উপজেলায়। দলীয় নির্দেশ থাকলেও নাশকতাকারীদের ধরে পুলিশে সোপর্দ করার দায়িত্ব এড়িয়ে চলছেন অনেকেই। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ১৪ দলের মুখপাত্র ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, দেশব্যাপী কমিটি গঠনের কাজ অনেক দূর এগিয়েছে। যেসব জেলায় এখনো কমিটি গঠন করা হয়নি তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জানা গেছে, জয়পুরহাট ও কয়েকটি জেলায় কমিটি গঠন হয়েছে। অধিকাংশ জেলাতেই কমিটির খবর নেই। রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ১২ জানুয়ারির আওয়ামী লীগের জনসভায় দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নাশকতা দমনে পাড়া-মহল্লায় সন্ত্রাস প্রতিরোধে কমিটি গঠনের নিদের্শ দেন। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ডাকে টানা ৫৮ দিনে দেশের বিভিন্ন এলাকায় অবরোধকারীরা চালিয়েছেন চোরাগোপ্তা ও পেট্রলবোমা হামলা। এতে মারা গেছেন অন্তত ১০০ জন। বেশির ভাগই মারা গেছেন পেট্রলবোমার আগুনে পুড়ে। হরতাল-অবরোধ আর পেট্রলবোমায় অব্যাহত হত্যাকাণ্ডের বিপরীতে রাজধানী ঢাকায়ও কমিটি করতে পারেনি আওয়ামী লীগ। ঢাকার বাইরে সহিংসপ্রবণ চাঁপাইনবাবগঞ্জ, জয়পুরহাট, নাটোর, গাইবান্ধা, রংপুর, নীলফামারী, নওগাঁ, রাজশাহী, পাবনা, নাটোর, বগুড়া, দিনাজপুর, কুমিল্লা, ফেনী, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ, বরিশাল, সিলেট, মৌলভীবাজার জেলা-উপজেলা পর্যায়ে এখনো হয়নি পাড়া-মহল্লায় সন্ত্রাস প্রতিরোধ কমিটি। ফলে অবরোধকারীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বিশেষ করে পুলিশ ও র‌্যাবের সদস্যদের বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ হয়েছে। প্রতিনিয়ত পেট্রলবোমা হামলার ঘটনা ঘটছে। মানুষ অগ্নিদগ্ধ হয়ে বার্ন ইউনিটে ভর্তি হচ্ছে। সীমান্ত জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জ। সোমবার শিবগঞ্জের কানসাটে একটি কাভার্ড ভ্যানে পেট্রলবোমা হামলায় চালক শিপন নিহত ও একজন আহত হয়েছেন। ৫ জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত এ জেলায় কমপক্ষে ২০ জন নিরীহ মানুষ বিএনপি-জামায়াতের ছোড়া পেট্রলবোমায় অগ্নিদগ্ধ হয়েছেন। শিবগঞ্জেই সবচেয়ে বেশি সহিংস ঘটনা ঘটেছে। রাজনৈতিকভাবে কোনো ধরনের প্রতিরোধ গড়ে তুলতে বার বার ব্যর্থ হচ্ছে আওয়ামী লীগ। সন্ত্রাস প্রতিরোধে কমিটি গঠনের নির্দেশ দিলেও এখন পর্যন্ত উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। শিবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, উপজেলায় কমিটি গঠন হয়নি, তবে ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিটি গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তারা কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের প্রশাসক মঈনউদ্দিন মণ্ডল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘নাশকতা প্রতিরোধ কমিটি গঠনের কয়েক দফা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। তবে বেশি দূর এগোতে পারিনি। নাশকতা বাড়তে থাকায় এখন কমিটি গঠনের বিকল্প দেখছি না।’
গাইবান্ধা জেলায়ও সহিংসতা ঘটেছে। এ জেলার পলাশবাড়ী উপজেলায় সবচেয়ে বেশি সহিংস ঘটনা ঘটেছে। এ উপজেলার মধ্য দিয়ে ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক হওয়ায় বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীরা রাতের আঁধারে বা দিনে চলন্ত গাড়িতে পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করে, গাড়ি ভাঙচুর চালান। এ জেলায়ও সন্ত্রাস প্রতিরোধ কমিটি গঠনের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। একাধিক নেতা জানিয়েছেন, স্থানীয় এমপিদের অনীহার কারণেই সন্ত্রাস প্রতিরোধ কমিটি গঠন করা যায়নি। আর জেলার শীর্ষ নেতারাও ভূমিকা নিতে ব্যর্থ হয়েছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে পলাশবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, স্থানীয় এমপি দলীয় নেতা-কর্মীদের এড়িয়ে চলেন। দলীয় নেতা-কর্মীদের বাদ দিয়ে নিজস্ব বলয় নিয়ে চলেন। যে কারণে কোনো কমিটি গঠন করা যায়নি।
রংপুরের মিঠাপুকুরে ১৩ জানুয়ারি রাতে দুর্বৃত্তদের ছোড়া পেট্রলবোমায় ঘটনাস্থলেই চারজন ও পরে দুজন নিহত হন। ১৬ জানুয়ারি পুলিশের আইজি এ কে এম শহীদুল হক ও র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ রংপুর যান। সেখানে পেশাজীবীদের সঙ্গে মতবিনিময় করে পাড়া-মহল্লায় সন্ত্রাস প্রতিরোধে কমিটি গঠনের নির্দেশনা দেন। ১৭ জানুয়ারি জেলা ১৪ দলের উদ্যোগে মিঠাপুকুরে গণসমাবেশে সংগঠনের মুখপাত্র, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম দু-তিন দিনের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী প্রতি পাড়া-মহল্লায় সন্ত্রাস প্রতিরোধ কমিটি গঠনের নির্দেশনা দেন। এরপর তিন দফা রংপুরে পাঁচটি ট্রাকে পেট্রলবোমায় সাত-আট জন দগ্ধ হন। নাশকতা প্রতিরোধে কমিটি গঠনে ১৪ দলের কয়েক দফা বৈঠক করা হলেও এখন পর্যন্ত কমিটি গঠনের প্রক্রিয়াই শুরু হয়নি।
[প্রতিবেদনটি তৈরিতে সংশ্লিষ্ট জেলার নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিরা সহায়তা করেছেন।]

সর্বশেষ খবর