অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও তালিকাভুক্ত অপরাধী গ্রেফতারে রাজধানীতে শুরু হয়েছে যৌথবাহিনীর বিশেষ অভিযান। ২৪ মার্চ থেকে শুরু হওয়া এই অভিযান চলবে আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত। পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও আনসার বাহিনীর সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত যৌথবাহিনী এই বিশেষ অভিযান পরিচালনা করছে। পর্যায়ক্রমে রাজধানীর সব এলাকায় এই অভিযান চলবে। গত চার দিনে বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে বিএনপি, জামায়াত-শিবিরের ১৩ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৪ মার্চ ৪ জন, ২৫ মার্চ ৩ জন, ২৬ মার্চ ৬ জনকে গ্রেফতার করলেও ২৭ মার্চ বিশেষ অভিযানে কেউ গ্রেফতার হয়নি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আসন্ন সিটি নির্বাচনকে সামনে রেখে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও অপরাধী গ্রেফতারে এই অভিযান শুরু হয়। রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে নাশকতা ও নাশকতায় অর্থলগ্নিকারীদেরও এই অভিযানের আওতায় রাখা হয়েছে। সূত্র জানায়, অপরাধে জড়িত এমন পাঁচ শতাধিক ব্যক্তির নামের তালিকা নিয়ে যৌথবাহিনী এখন মাঠে। কিন্তু গত চারদিনের বিশেষ অভিযানে তেমন সফলতা দেখাতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ডিএমপি সূত্র জানায়, গত দুই মাস ধরে র্যাব-পুলিশের স্বাভাবিক কাজকর্ম প্রায় স্থবির হয়ে পড়ে। এ সময় রাজনৈতিক কর্মসূচিতেই বেশি সময় পার হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। ফলে পেশাদার সন্ত্রাসীদের দিকে খুব একটা মনোযোগ ছিল না তাদের। আর এই সুযোগে অনেক সন্ত্রাসী এলাকায় নিজেদের অবস্থান সুসংহত করেছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যেই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনের নির্বাচন। এখন এই নির্বাচনকে সামনে রেখে এবং পরিস্থিতি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেশাদার অপরাধীদের গ্রেফতার অভিযানে নামে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, সিটি করপোরেশন নির্বাচন যাতে নির্বিঘ্নে হয় তার জন্য আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশের যা যা করা দরকার তার সবই করা হবে। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী ঢাকা মহানগর পুলিশ ব্যবস্থা নেবে। তিনি বলেন, বিশেষ অভিযানের সঙ্গে জোরালোভাবে যুক্ত করা হয়েছে অস্ত্র উদ্ধার, সন্ত্রাসী গ্রেফতার ও মাদকবিরোধী অভিযান। জানা গেছে, এ পরিস্থিতিতে রাজধানীর ৪৯ থানা এলাকায় অস্ত্র ও মাদকবিরোধী অভিযানকে আরও বেগবান করা হয়েছে। এ অভিযানে চিহ্নিত সন্ত্রাসী, অবৈধ অস্ত্রধারী, মাদক বিক্রেতা, ডাকাত গ্রুপ, পরিবহন চাঁদাবাজ, টেন্ডারবাজ, ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি, গার্মেন্ট সেক্টরে চাঁদাবাজি, ঝুট ব্যবসায়ী ও ছিনতাইকারীসহ নানা ক্যাটাগরির অপরাধী অভিযানের আওতায় নেওয়া হয়েছে। তবে সংশ্লিষ্ট থানা এলাকাগুলোতে তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী, অস্ত্র ব্যবসায়ী ও মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেফতারের বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিশেষ নজর দিয়েছে। এ ছাড়া সন্ত্রাসীদের মধ্যে কারামুক্ত ও পলাতকদের নজরদারির বিষয়টি প্রাধান্য পাবে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এসব তথ্য জানিয়েছেন।
ডিএমপির সূত্র জানিয়েছে, এই অভিযান সফল করতে ডিএমপি কমিশনার ইতিমধ্যেই সংশ্লিষ্ট সবাইকে বিশেষ বার্তা পাঠিয়েছেন। ওই বার্তায় ঢাকা শহরে ব্লক-রেইড দেওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২৪ মার্চ থেকে এই ব্লক রেইড শুরু হয়েছে। যেদিন যেসব এলাকায় এই ব্লক-রেইড হবে তার বিবরণও দেওয়া হয়েছে ওই বার্তায়। এদিকে ইতিমধ্যে নির্বাচন কমিশনে নির্বাচন-পূর্ব পর্যালোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে নির্বাচনে সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও অভিযান নিয়ে আলোচনা হয়। ডিসিসি নির্বাচনকে সামনে রেখে যাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আরও তৎপর হয় সে বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। পেশাদার সন্ত্রাসী ও অপরাধীরা যাতে মাথাচাড়া দিতে না পারে সে ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে।
পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, প্রত্যেক নির্বাচনের আগে কিছু এলাকায় অপরাধী চক্র রাজনৈতিক ক্যাডারদের হাতে টাকার বিনিময়ে অস্ত্র তুলে দিয়ে থাকে। তখন সন্ত্রাসী ও দলীয় ক্যাডাররা তাদের শক্তি প্রদর্শনের জন্য তৎপর হয়। এসব রুখতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাও বিভিন্ন কৌশল নিয়ে থাকে। পুলিশ ও র্যাব কর্মকর্তারা বলছেন, দেশে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর চলমান অভিযানে অস্ত্র ও গোলাবারুদ এবং মাদক উদ্ধার অব্যাহত আছে। পুলিশের বিশেষ শাখার এক কর্মকর্তা বলেন, ডিসিসি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জামিনে থাকা সন্ত্রাসীদের ওপর কঠোর নজরদারি করা হচ্ছে। তারা কোনোভাবে অপরাধে জড়িয়ে পড়লে বা পড়ার চেষ্টা করলে তাদের আবার গ্রেফতার করা হবে। জানা গেছে, তথ্য অনুসন্ধান ও পর্যবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা গোয়েন্দা ইউনিটগুলো অপারেশনের ইউনিটগুলোকে বিভিন্ন তথ্য দিয়েছে। এসব তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অস্ত্র উদ্ধার অভিযান চলছে।