শনিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০১৫ ০০:০০ টা
আচরণবিধি মানছেন না কেউ

অসহায় নির্বাচন কমিশন

অসহায় নির্বাচন কমিশন

ঢাকা উত্তর, দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে চলছে প্রচার-প্রচারণা। মেয়র এবং সাধারণ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থীরা নির্বাচনী আচরণবিধির তোয়াক্কা না করেই প্রচারণা চালাচ্ছেন। ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ বেশি থাকায় অনেকটাই অসহায় হয়ে পড়েছে নির্বাচন কমিশন। ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, আচরণবিধি নিয়ন্ত্রণ করা অনেকটাই কঠিন হয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীরা আচরণবিধি মানতে চাচ্ছেন না। অনেক সময় সহকারী রিটার্নিং অফিসাররা কোনো মেয়র প্রার্থীর বিরুদ্ধে অ্যাকশন নিতে চাইলেও রিটার্নিং অফিসারের অনুমতি মিলছে না। তাই কর্মকর্তারা আচরণবিধি লঙ্ঘন দেখেও না দেখার ভান করছেন। এমনকি আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের কাছে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেও কোনো নির্দেশনা পাচ্ছেন না কর্মকর্তারা। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, দুপুর ২টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত প্রচারণায় মাইক ব্যবহারের নিয়ম থাকলেও প্রার্থীরা তা মানছেন না। অনেকেই সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। এ ছাড়া বিধি লঙ্ঘন করে প্রতিনিয়তই মিছিল, শোডাউন ও রাস্তা বন্ধ করে প্রচার চালাচ্ছেন। এমনকি বিধি লঙ্ঘন করে মসজিদেও ভোট চাচ্ছেন প্রার্থীরা। এ ছাড়া পোস্টার ঝুলিয়ে রাখার নিয়ম থাকলেও অনেক প্রার্থী দেয়ালে পোস্টার লাগিয়ে দিচ্ছেন।
এদিকে, নিয়ন্ত্রণহীন মাইকিং ও প্রচারের কারণে এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা ঠিকভাবে পড়ালেখাও করতে পারছেন না বলে অভিযোগ করেছেন। অন্যদিকে প্রার্থীর পোস্টারে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের ছবি ছাপানো নিষিদ্ধ হলেও প্রধান দুই দল সমর্থিত প্রার্থীরা নিজ নিজ দলের নেতার ছবি দিয়ে পোস্টার তৈরি করেছেন। অনেকটাই আচরণবিধি লঙ্ঘনের হিড়িক পড়েছে। এমনকি অনেক প্রার্থীর বিরুদ্ধে মন্ত্রীদের নিয়ে নির্বাচনী বৈঠক করারও অভিযোগ উঠেছে। রিটার্নিং অফিসাররা আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে শুধু হুঁশিয়ারি দিয়েই যাচ্ছেন। তেমন কোনো অ্যাকশনে যাচ্ছেন না। তবে দুর্বল প্রার্থীদের বিষয়ে কিছুটা কঠোর হলেও হেভিওয়েট প্রার্থীদের বিরুদ্ধে তেমন কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। গতকাল ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে প্রচারণার বিষয়ে জানতে চাইলে উত্তরের রিটার্নিং অফিসার শাহ আলম বলেন, মসজিদে প্রচারণা নিষিদ্ধ। তার কাছে অভিযোগ এলে ব্যবস্থা নেবেন। ইসি সূত্রে জানা গেছে, তিন সিটির ভোট উপলক্ষে প্রচারে নেমে বিধি ভঙ্গ করছেন প্রার্থীরা। এ পর্যন্ত ঢাকা উত্তর, দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে নামে মাত্র শতাধিক প্রার্থীকে শোকজ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তবে উত্তর সিটির চেয়ে দক্ষিণে আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে বেশি। আর চসিক নির্বাচনে কয়েকজনকে শোকজ করা হয়েছে। প্রার্থীদের আচরণবিধি তদারকি করতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনায় ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেয় ইসি। এর পরও প্রার্থীদের আচরণবিধি লঙ্ঘন থামাতে পারছে না কমিশন। ৭ এপ্রিল থেকে তিন সিটিতে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন প্রার্থীরা। ২৬ এপ্রিল রাত ১২টা পর্যন্ত তারা প্রচার চালাতে পারবেন। সিটি করপোরেশনের কোনো স্থাপনা, যানবাহন বা দেয়ালে পোস্টার লাগানো নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তবে ঝুলিয়ে রাখা যাবে। কোনো বিলবোর্ড ব্যবহার করা যাবে না। কাউন্সিলর প্রার্থী ছাড়া কোনো মেয়র প্রার্থী প্রচারণাকালে ভোটার স্লিপ দিতে পারবেন না। প্রতীক হিসেবে জীবন্ত কোনো প্রাণী ব্যবহার করা যাবে না। রাজনৈতিক দল, প্রতীক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের ছবি পোস্টারে ব্যবহার করা যাবে না। পথসভা ও ঘরোয়া সভা ছাড়া কোনো জনসভা বা শোভাযাত্রা করা যাবে না। সড়ক অবরোধ করে পথসভা, মঞ্চ তৈরি করা যাবে না। আলোকসজ্জা, প্যান্ডেল, সড়কে নির্বাচনী ক্যাম্প, কোনো গেট, তোরণ নির্মাণেও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। উসকানিমূলক বক্তব্যের পাশাপাশি ধর্মীয় উপাসনালয়ে প্রচারণা চালাতে পারবেন না প্রার্থীরা। দেয়াললিখন, হেলিকপ্টার ব্যবহার এবং নির্বাচনী প্রচারাভিযানে বিজ্ঞাপনের মাধ্যম হিসেবে রং বা কালি ব্যবহার করা যাবে না। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ বলেন, মিছিল-শোভাযাত্রা করলে জরিমানা করা হবে। এ নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে চরম ব্যবস্থা অর্থাৎ প্রার্থিতা বাতিলের জন্য প্রস্তুত রয়েছে নির্বাচন কমিশন। প্রচারণার সময় অনেকে মিছিল, জনসভা, শোভাযাত্রা এবং দুপুর ২টা থেকে রাত ৯টার বাইরে মাইক ব্যবহারের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এমন হুঁশিয়ারি দেন এই নির্বাচন কমিশনার। শাহনেওয়াজ বলেন, ‘আচরণবিধি অনুসারে কোনো প্রার্থী বা তার পক্ষে মিছিল করা সম্পূর্ণ বেআইনি। কেউ যদি মিছিল করেন অথবা কোনো প্রার্থীর পক্ষে তা করার চেষ্টা চালান, তাদের জরিমানা করা হবে। সবাইকে সাবধান করে দিতে চাই, কেউ যেন মিছিল না করেন। কোনো প্রার্থী যেন অতিরিক্ত যানবাহন নিয়ে প্রচারের চেষ্টা না করেন।’ মাইক ব্যবহারের বিষয়ে শাহনেওয়াজ জানান, দুপুর ২টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত প্রচারণার জন্য প্রার্থীরা নির্দিষ্টসংখ্যক মাইক ব্যবহার করতে পারবেন। যারা নির্ধারিত সময়ের বাইরে প্রচারণা চালাচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে রিটার্নিং অফিসারদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর