রবিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০১৫ ০০:০০ টা

মারাত্মক ঝুঁকিতে ভূমি রেকর্ডরুম

মারাত্মক নিরাপত্তা ঝুঁকিতে রয়েছে তেজগাঁওয়ের ভূমি রেজিস্ট্রেশন কমপ্লেক্সের সদর রেকর্ডরুম। সেখানে বারবার আগুন লেগেছে আর ভলিউম চুরি হয়েছে। তবু হুঁশ হচ্ছে না কর্তৃপক্ষের। এ ছাড়া ‘সেবা’ ব্যবস্থাও ভালো নয়। জমির দলিলের নকল বা মূল দলিল পেতে মানুষকে চরম হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। চার মাস ধরে কমপ্লেক্সটির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জেলা রেজিস্ট্রারের পদ খালি।
ঢাকা মহানগরীর ৯২টি ওয়ার্ড ও ১৭টি ইউনিয়ন নিয়ে ঢাকা সিটি জরিপ অনুযায়ী ১৯১টি মৌজার সমন্বয়ে ১০টি সাব-রেজিস্ট্রার অফিস ও একটি সদর রেকর্ডরুম। ১৯৯২ সালে সাবেক আইনমন্ত্রী মির্জা গোলাম হাফিজ এ কমপ্লেক্সটি উদ্বোধন করেন। এখানে দুটি ভবনের মধ্যে পুরাতন ভবনে নিচতলায় সোনালী ব্যাংক ও গুলশান সাব-রেজিস্ট্রি অফিস। দ্বিতীয় তলা থেকে চতুর্থ তলা পর্যন্ত ঢাকা সদর রেকর্ডরুম। নতুন ভবনে ঢাকা জেলা রেজিস্ট্রার, ঢাকা সদর, সূত্রাপুর, মোহাম্মদপুর, খিলগাঁও, তেজগাঁও, উত্তরা এবং বাড্ডা সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয়।
সরেজমিন    ঘুরে দেখা গেছে, রেকর্ডরুমটি অন্ধকার ঘরের মতো। নিরাপত্তা নেই বললেই চলে। রুমটির সামনে মানুষের জটলা লেগেই থাকে। রুমটির সামনেই সবাই প্রকাশ্যে ধূমপান করছে। ভবনের পাশেই একটি ফোম ফ্যাক্টরি। কমপ্লেক্স ভবনের একটি সূত্রে জানা গেছে যে, দুই বছর আগে বিদ্যুতের শর্টসার্কিট হওয়ায় রেকর্ড রুমে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড হয়েছে। ওই ঘটনার পর ভবিষ্যতে আগুন বিষয়ে দৃশ্যত কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। এমনকি আগুন নেভানোর কোনো সরঞ্জামাদিও সরবরাহ করা হয়নি। এরপর আরও দুবার আগুন লাগে। আগুনের ঘটনায় থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও করা হয়নি। এরপর গত বছর রেকর্ডরুম থেকে ১৮টি ভলিউম চুরি যায়। সেগুলো মিরপুরে উদ্ধার করা হয়। চোরও ধরা পড়ে। কিন্তু পিয়ন দারোয়ানের ওপর দায় চাপিয়ে মূল অপরাধীদের আড়াল করা হয়। গত ১৪ মার্চ রাতে আরেক দফা চুরি হয়। চারটি ভলিউম চুরি করে সোনালী ব্যাংকের পিছনের স্যানিটারি পাইপ বেয়ে পালানোর সময় দুই চোরকে হাতেনাতে ধরে ফেলে একজন ডাব বিক্রেতা। এ চারটি ভলিউমের একটিতে বড় ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির দলিলের রেকর্ড আছে। ওই রেকর্ডে কিছু অসংগতি থাকার কারণে ভলিয়ম থেকে রেকর্ড নথি চুরি করা হতে পারে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্র আশঙ্কা করছে। জমি দখলদার চক্র ভলিউম চুরি করে রেকর্ড নষ্ট করার জন্যই এসব ঘটনা ঘটায় বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। অপর একটি সূত্র জানায় যে, এ কমপ্লেক্সটিতে সমস্যার শেষ নেই । পদে পদে সমস্যা। জমির ক্রেতা বা বিক্রেতাদের বসার জন্য কোনো জায়গাও নেই। সিটিজেন চার্টারের সঙ্গে সেবার মানের কোনো মিল নেই। নোংরা, দুর্গন্ধময় এ প্রতিষ্ঠানটির যেন কোনো বাপ-মা নেই। নিরাপত্তা ঝুঁকি প্রসঙ্গে তেজগাঁও দলিল লেখক স্ট্যাম্প ভেন্ডার কল্যাণ সমিতির সভাপতি ও বাংলাদেশ দলিল লেখক কেন্দ্রীয় সংগ্রাম পরিষদের সদস্য সচিব এস এম ফরিদুল ইসলাম (বাহাদুর) বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এ রেকর্ডরুমে যদি কোনো দুর্ঘটনা ঘটে তাহলে ঢাকার সব জমির রেকর্ড নষ্ট হয়ে যাবে। আর তা হলে ঢাকায় দাঙ্গা পরিস্থিতি তৈরি হয়ে যাবে। সম্পত্তি নিয়ে মারামারি কাটাকাটি শুরু হবে। তাই সরকারের উচিত হবে খুব দ্রুত এ রেকর্ড রুম রক্ষা করা এবং রেজিস্ট্রেশন কমপ্লেক্সের নিরাপত্তা জোরদার করা। তা না হলে ঢাকাবাসীকে অনেক বড় ধরনের ঝুঁকিতে পড়তে হবে বলে তিনি আশঙ্কা ব্যক্ত করেন। নিবন্ধন মহাপরিদর্শক খান মো. আবদুল মান্নান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমরাও উদ্বিগ্ন। আগুন লাগা ও চুরির ঘটনাগুলোর তদন্ত হচ্ছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হচ্ছে। নিরাপত্তা আরও বাড়ানোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে সব রেকর্ডে স্থায়ী আর্কাইভ করার জন্য ভূমি ব্যবস্থাপনা ডিজিটাল করার উদ্যোগও নিয়েছে সরকার।

সর্বশেষ খবর