রবিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০১৫ ০০:০০ টা
কৃষি সংবাদ

বসতঘরে মাশরুম খামার

বসতঘরে মাশরুম খামার

সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার ইয়াকুব আলী। তার ভাগ্যের চাকা ঘুরেছে মাশরুম চাষে। আর এ চাষ করতে গিয়ে তিনি বসত ঘরকেই বানিয়েছেন মাশরুমের খামার। যা থেকে তিনি দারুণ সফলতা লাভ করেছেন। এ খামার এখন মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে।
পেশায় টেকনিশিয়ান ইয়াকুব আলী জানান, ২০১১ সালে বিটিভির ‘মাটি ও মানুষ’ অনুষ্ঠানে মাশরুম চাষের উপর ডকুমেন্টারি দেখে তিনি অনুপ্রাণিত হন। এরপর সিলেট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর থেকে প্রশিক্ষণ নেন। ২০১২ সালের জানুয়ারি মাসে সিলেটের হটিকালচার সেন্টার থেকে বীজ সংগ্রহ করেন। ৫০ হাজার টাকার পুঁজি নিয়ে শুরু করেন যাত্রা। প্রথমে ঘরের একটি কামরায় মাশরুম চাষ করেন। শুরুতেই তিনি লাভের মুখ দেখতে পান। তারপর ঘরের প্রতিটি কামরায় তৈরি করেন মাচা। পরিবারের সবাইকে প্রশিক্ষণ দিয়ে মাশরুম চাষে যুক্ত করেন। বসত ঘরকে পরিণত করেন খামারে। দেখা যায়, অল্পদিনেই  ইয়াকুবের দরিদ্র পরিবারের অভাব ঘুচে যায়। মাশরুম চাষ করে পরিবারটি পৌঁছে যায় অভাবনীয় সাফল্যে। ইয়াকুব জানান, এখন তার খামারে ৩ হাজার স্পন থেকে প্রতিদিন ৫ কেজি মাশরুম উৎপাদন হচ্ছে। যার বাজার মূল্য ১ হাজার টাকা। ফলনযোগ্য বীজ রয়েছে ১ হাজারেরও বেশি। একটি স্পনে ৩০০ গ্রাম সবজি আসার পর তা জৈব সারে পরিণত হয়। ইয়াকুবের পরিবার ওই জৈব সার দিয়ে বাড়ির আঙ্গিনায় চাষ করেছেন লেটুস পাতা, পুদিনা পাতা, বিলাতি ধনিয়াসহ নিত্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন রকমের শাক-সবজি। সরেজমিন উপজেলার লামাকাজি বাজারের সুনামগঞ্জ সড়কের পাশে ইয়াকুবের এ ‘মাশরুম খামারে’ গিয়ে দেখা যায়, পুরো বসতঘরই মাশরুম পল্লী। প্রতিটি কামরাই চাষের কাজে ব্যবহার হচ্ছে। দুই পাশের টিনশেডের দুটি কামরায় উৎপাদন হচ্ছে মাশরুম। রান্না ঘরের পাশের কামরায় রয়েছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বীজঘর। সেখান থেকে মাচায় চারা উঠানোর ১০ দিনের মাথায় শুরু হয় ফলন। এভাবে পর্যায়ক্রমে চলে মাশরুম উৎপাদন। ইয়াকুবের খামারে উৎপাদন হচ্ছে মিল্ক ওয়েস্টার (সাদা), কফি ওয়েস্টার (খয়েরি), ঋষি (হলুদ), গোল্ড ওয়েস্টার (লাল) জাতের মাশরুম। দৈনন্দিন কাজের পাশাপাশি ইয়াকুবের সহধর্মিণী আফতেরা বেগম, ছেলে রুমেল ও মেয়ে ফারজানা মাশরুমের পরিচর্যা করেন। ইয়াকুব বলেন, ‘পরিবারের সবার সহযোগিতাই আমাকে সাফল্য এনে দিয়েছে। সবাই মিলে সঠিক পন্থায় যে কোনো কাজ করলে দেশের প্রতিটি পরিবারই আমার মতো সুখি পরিবার হয়ে উঠতে পারেন।’ এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আলী নূর রহমান বলেন, ‘প্রত্যন্ত অঞ্চলে মাশরুম চাষে কৃষক ইয়াকুব আলী লাভবান হয়েছেন। তার খামার পরিদর্শন করে দেখেছি, বীজ তৈরি থেকে শুরু করে মার্কেটিং পর্যন্ত প্রতিটি ধাপের কাজে ইয়াকুব ও তার পরিবারের লোকজন অংশ নেন। ইয়াকুবের পথ অনুসরণ করলে অন্যরাও তারমতো সুফল পাবেন বলে মনে করি।’ প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালের অক্টোবর মাসে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পের অনুষ্ঠানে মাশরুম প্রদর্শনীতে অংশ নিয়ে ইয়াকুব দারুণভাবে প্রশংসিত হন এবং তার বসত ঘরের খামার মডেল হিসেবে স্বীকৃতি পায়।

সর্বশেষ খবর