রবিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০১৫ ০০:০০ টা

মাছ চাষ করে ভাগ্য বদল

মাছ চাষ করে ভাগ্য বদল

মাছ চাষের মধ্যেই তার ভাগ্য লুকিয়ে ছিল। লুকিয়ে ছিল তার আর্থিক সচ্ছলতার গল্পও। মেধা, মনন আর কঠোর পরিশ্রমে মাছ চাষ করে নিজের ভাগ্যকে সাজিয়েছেন বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার বেলাল সরদার। একদিন অন্যের পুকুরে যিনি শ্রমিকের কাজ করতেন সেই বেলাল সরদার নিজে মাছ চাষ ও বিক্রি করে এখন লাখপতি হয়েছেন।
১৯৯০ সালের আগ পর্যন্ত আদমদীঘি উপজেলার কাশিমালা গ্রামের মৃত শখের আলী সরদারের ছেলে বেলাল হোসেন সরদারের কিছুই ছিল না। দুই বেলা ভাতের ব্যবস্থা করতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। করতে হয়েছে দিনমজুরি। শেষ পর্যন্ত অন্যের সহযোগিতা নিয়ে বেলাল আজ লাখপতি। হয়েছেন সফল মাছ চাষি। বেলাল হোসেনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, স্বাধীনতার পরেও পশ্চিম বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলায় অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো ছিল না। স্বাধীনতার আগে আদমদীঘির মাঝিপাড়া গ্রামের মন্মথ চন্দ্র সরকার যমুনা নদী থেকে রেণু ও পোনা এনে ব্যবসা শুরু করেন। সে সময় মাত্র কয়েকশ’ টাকা মূলধন ছিল। ১৯৮৫ সালে তিনি কৃত্রিম পদ্ধতিতে রেণু উৎপাদনের লক্ষ্যে হ্যাচারি নির্মাণ করেন। শুরু হয় মাছ উৎপাদনের কাজ। এ হ্যাচারি দিনে দিনে পাল্টিয়ে দিয়েছে উপজেলার অর্থনৈতিক চিত্র। সেই মন্মথ চন্দ্র সরকারের সহযোগিতায় বেলাল হোসেন সরদার হ্যাচারি গড়ে তোলেন। সেই হ্যাচারিতে মাছের রেণু তৈরি করে বিভিন্ন এলাকার মাছ চাষিদের কাছে বিক্রি শুরু করেন। বেলালের হ্যাচারির রেণু দ্রুত বড় এবং ওজন বেশি হয় বলে মাছ চাষিদের কাছে তার রেণুর কদর বেড়ে যায়। ১৯৯৫ সালের পর তিনি রেণু উৎপাদন ও মাছ বিক্রিতে অভাবনীয় সাফল্য পান। আদমদীঘি উপজেলা থেকে আশপাশের জেলায় বেলালের নাম ছড়িয়ে পড়ে। সিলেট, চট্টগ্রাম, দিনাজপুর, গাইবান্ধা, রংপুর, মিঠাপুকুর, নীলফামারীর মাছ চাষিরা তার কাছ থেকে রেণু সংগ্রহ করেন। দিন দিন বৃদ্ধি পেতে থাকে পুকুরের সংখ্যাও। মাছ চাষ ও বিক্রি করে তিনি একদিকে নিজের সংসার সাজিয়েছেন, অন্যদিকে গড়েছেন শতাধিক পুকুর। মেধা আর মননে গড়ে তোলা মাছের হ্যাচারি ও মাছ চাষের পুকুরে এখন প্রায় এক হাজার শ্রমিক দিনরাত কাজ করছেন। গত বছর দেশে সবচেয়ে বেশি পাঙ্গাশ উৎপাদন করে সাফল্য অর্জন করেন। এর স্বীকৃতিস্বরূপ স্বর্ণপদক-২০১৪ লাভ করেন তিনি।

সর্বশেষ খবর