মঙ্গলবার, ২৮ এপ্রিল, ২০১৫ ০০:০০ টা

নিরাপত্তা চাদরে তিন সিটি

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ৮০ হাজার, র‌্যাবের হেলিকপ্টার টহল, ব্যারাকে প্রস্তুত ৩ ব্যাটালিয়ন সেনা

নিরাপত্তা চাদরে তিন সিটি

ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে ঘিরে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো কঠোর সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। টহল দিচ্ছে পুলিশ-র‌্যাব, বিজিবি (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ) ও কোস্টগার্ড। নিরাপত্তা চৌকি বসিয়ে বিশেষ তল্লাশি চলছে নির্বাচনী এলাকা আর রাজধানী ও চট্টগ্রামের প্রবেশমুখগুলোতে। ভোটকেন্দ্র ও তার আশপাশের এলাকায় চলছে বিশেষ নজরদারি। প্রযুক্তি সহায়তা নিয়ে গোয়েন্দারা চষে বেড়াচ্ছেন রাজধানী ও বন্দরনগরী চট্টগ্রামসহ এর আশপাশের এলাকা। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে আকাশে টহল দেবে র‌্যাবের হেলিকপ্টার। নির্বাচনী এলাকাগুলোতে তিন স্তরের নিরাপত্তা কার্যকর করার কথা জানান আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার প্রধানরা। রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে ব্যারাকে প্রস্তুত তিন ব্যাটালিয়ন সেনাবাহিনী। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজনে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে বলা হয়েছে র‌্যাব-পুলিশ-বিজিবি প্রধানদের। নির্বাচন কমিশনের চাহিদা অনুযায়ী আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে সব আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাকে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ঢাকা উত্তর-দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ৩৭ হাজার ৬৮৯ জন পুলিশ, র‌্যাব ও আনসার সদস্যসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ৮০ হাজার সদস্য দায়িত্ব পালন করছে। বিজিবির ১০০ প্লাটুন সদস্য মাঠে দায়িত্ব পালন করছে আর রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে প্রস্তুত ২৪ প্লাটুন। কোস্টগার্ডের ৭ প্লাটুন সদস্য ইতিমধ্যেই নির্বাচনী মাঠে দায়িত্ব পালন শুরু করেছে। সাধারণ ভোটকেন্দ্রে একজন করে এবং ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে তিনজন করে সশস্ত্র ব্যাটালিয়ন আনসার দায়িত্ব পালন করছে। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিটি সিটি করপোরেশনের জন্য এক ব্যাটালিয়ন করে সেনাবাহিনী সদস্য রিজার্ভ থাকবে। র‌্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ বলেছেন, তিন সিটি নির্বাচনে র‌্যাবের ২৬৮টি টহল দল কাজ করবে। নির্বাচনের দিন ১৩৪টি মোটরসাইকেল প্যাট্রল এবং ৩৬টি স্ট্রাইকিং রিজার্ভ ফোর্স এবং ১৩৪টি সাদা পোশাকের দল কাজ করবে। প্রতিটি ওয়ার্ডে র‌্যাবের দুটি করে টহল দল এবং দুটি ওয়ার্ড মিলে একটি ক্লাস্টার। এর দায়িত্বে একজন এএসপি ও তদূর্ধ্ব পদমর্যাদার একজন অফিসার। প্রতিটি কার্যক্রম র‌্যাব সদর দফতর থেকে মনিটরিং করা হবে। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি নির্বাচনী এলাকায় তিন স্তরের নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেছেন, ইতিমধ্যেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সমন্বয়ে নগরীতে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তাবলয় গড়ে তোলা হয়েছে। ফলে দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া কোনো নাশকতা হয়নি। মানুষ যাতে নিরাপদে ভোটকেন্দ্রে যেতে পারে সেজন্য ৯৩টি ওয়ার্ডের প্রত্যেকটিতে পুলিশের দুটি করে মোবাইল পার্টি টহল দেবে। এ ছাড়াও ৩১টি স্টাইকিং রিজার্ভ ফোর্স প্রস্তুত থাকবে। প্রত্যেকটি ভোটকেন্দ্রে পর্যাপ্ত পুলিশ ও আনসার মোতায়েন থাকবে। এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ১২ জন অস্ত্রধারী এবং সাধারণ কেন্দ্রে ১০ জন অস্ত্রধারী থাকবে। এ ছাড়াও র‌্যাব-বিজিবির টহল থাকবে। ব্যারাকে প্রস্তুত থাকবে সেনাবাহিনী। নিরাপত্তা সমন্বয় করার জন্য একটি প্রধান কন্ট্রোল রুম ও চারটি সাব-কন্ট্রোল রুম থাকবে। এতে পর্যাপ্তসংখ্যক অফিসার থাকবেন। নির্বাচনের আগের দিন দক্ষিণের ৮টি এবং উত্তরের ৮টি কেন্দ্র থেকে ব্যালট সামগ্রী বিতরণ করার সময় র‌্যাব ও পুলিশের কঠোর নজরদারি ছিল। ভোট গ্রহণ শেষে ভোট গণনা কেন্দ্রে ডিএসসিসির জন্য বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র ও ডিএনসিসির জন্য গুলিস্তানের মহানগর নাট্যমঞ্চের পুরো এলাকায় ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ওই এলাকা সিসিটিভির আওতায় রয়েছে। যাতে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টির আগেই ব্যবস্থা নেওয়া যায়। সূত্র জানায়, ভোটারদের নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে তল্লাশি করে ভোটারদের কেন্দ্রে প্রবেশ করানো হবে। ঢাকায় ৭০ প্লাটুন বিজিবি সদস্য মোতায়েন থাকবে। প্রতি প্লাটুনে তিনজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন। ইতিমধ্যে ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তরে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে পুলিশের ২৩টি মোবাইল টিম মাঠে রয়েছে। রাজধানীতে ১৭ হাজার ১৮৬ পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করবে। চট্টগ্রাম মহানগর এবং চট্টগ্রাম জেলায় অবস্থিত নির্বাচনী এলাকায় ৮ হাজার ৪০২ জন পুলিশ দায়িত্ব পালন করবে। ডিএমপি কমিশনার বলেন, নির্বাচনের কোনো প্রার্থী বা সমর্থকরা ভোটারদের ভয় দেখানো, প্রভাবিত করা ও কালো টাকা বিতরণের চেষ্টা করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যতদিন নির্বাচনী উত্তাপ থাকবে ততদিন নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার থাকবে। সিটির নির্বাচনী এলাকায় অবস্থানকৃত বহিরাগতরা নির্বাচনী তৎপরতায় প্রভাব বিস্তার করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যানবাহন চলাচলের ব্যাপারে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী ২৫-২৯ এপ্রিল পর্যন্ত মোটরসাইকেল এবং ২৭-২৮ এপ্রিল অন্যান্য যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ নির্বাচন কমিশনের স্টিকার লাগানো গাড়ি ও জরুরি সেবামূলক কাজে নিয়োজিত বিভিন্ন যানবাহন চলাচল করতে পারবে। এ ছাড়া ২৫ এপ্রিল থকে ১ মে পর্যন্ত সব ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র বহন, প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর