শিরোনাম
শনিবার, ২৩ মে, ২০১৫ ০০:০০ টা
মানবতাবিরোধী অপরাধ

পলাতক ৬৫ শতাংশ আসামি ট্রাইব্যুনালের উদ্বেগ

পলাতক ৬৫ শতাংশ আসামি ট্রাইব্যুনালের উদ্বেগ

মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত ও বিচারের আওতায় আসা অর্ধশতাধিক আসামির মধ্যে ৪০ জনই পলাতক। এতে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত যেমন রয়েছেন, তেমনি আছেন তদন্তাধীন আসামিও। এর মধ্যে দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক পাঁচজন। পলাতক থাকায় এই আসামিরা দণ্ডের বিরুদ্ধে আপিলও করতে পারেননি। অনুপস্থিত বা পলাতক আসামির এই হার শতকরা হিসেবে দাঁড়ায় ৬৫-তে। পলাতক আসামির এই তালিকা দিন দিন বেড়েই চলেছে। পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, প্রসিকিউশনের মাধ্যমে তদন্ত সংস্থা আবেদন করে, ট্রাইব্যুনালও পরোয়ানা জারি করেন ঠিকই; তবে আসামি গ্রেফতার হন না। আর এর ফলেই বাড়ছে পলাতক আসামির এই সংখ্যা। বিষয়টি নজরে এসেছে খোদ ট্রাইব্যুনালেরও। সম্প্রতি পুলিশের দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে এ ঘটনায় উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিচারিক এই আদালত। এর পরই ১৩ মে মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার পলাতক আসামিদের গ্রেফতারের বিষয় পর্যবেক্ষণে সরকারকে মনিটরিং সেল গঠনের নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আসামির অনুপস্থিতিতে বিচারে ব্যক্তির দণ্ডে এক ধরনের মনস্তাত্ত্বিক বিজয় হলেও তাতে রায় কার্যকর হয় না। পর্যবেক্ষকদের আশঙ্কা, এভাবে গ্রেফতারে ব্যর্থতা চলতে থাকলে ভবিষ্যতে কোনো আসামিকে কাঠগড়ায় রেখে হয়তো আর বিচার করা যাবে না।
নথিপত্র পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, মানবতাবিরোধী অপরাধে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা ও আদালত পর্যন্ত ইতিমধ্যে এসেছে ৬১ জনের নাম। এর মধ্যে ৪০ জনই কেতাবে আছেন গোয়ালে নেই। দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামিদের মধ্যে রয়েছেন আবুল কালাম আযাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকার, চৌধুরী মাঈনুদ্দিন, আশরাফুজ্জামান, জাহিদ হোসেন খোকন, সৈয়দ মোহাম্মদ হাছান আলী, আবদুল জব্বার। এদের মধ্যে বাচ্চু রাজাকার জামায়াতে ইসলামীর সাবেক সদস্য। মাঈনুদ্দিন ও আশরাফুজ্জামান ঘাতক সংগঠন আল বদর বাহিনীর সদস্য ছিলেন একাত্তরে। খোকন স্থানীয় বিএনপি নেতা। কিশোরগঞ্জের রাজাকার কমান্ডার ছিলেন হাছান আলী। আবদুল জব্বার ছিলেন স্থানীয় জাতীয় পার্টির নেতা। হাছান আলীর রায় অপেক্ষমাণ। বিচারে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে আবদুল জব্বারকে। অন্যরা মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত। জামালপুরের আটজনের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালের পরোয়ানা জারি হয়েছে সাড়ে তিন মাস আগে। এ মামলায় মোহাম্মদ শামসুল হক এবং এস এম ইউসুফ আলীকে পুলিশ গ্রেফতার করতে পারলেও বাকি ছয়জন এখনো পলাতক। গ্রেফতারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে রয়েছেন মোহাম্মদ আশরাফ হোসেন, অধ্যাপক শরীফ আহমেদ ওরফে শরীফ হোসেন, মোহাম্মদ আবদুল মান্নান, মোহাম্মদ আবদুল বারী, মো. হারুন ও মোহাম্মদ আবুল হাসেম।
কিশোরগঞ্জের পাঁচজনের বিরুদ্ধে পরোয়ানা থাকলেও এখন পর্যন্ত গ্রেফতার হয়েছেন মাত্র একজন। এ মামলায় মো. নাসিরউদ্দিন আহমেদ, মো. শামসুদ্দিন আহমেদ, গাজী আবদুল মান্নান, হাফিজ উদ্দিন ও আজহারুল ইসলামকে এখনো গ্রেফতার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ১৩ মে এই আসামিদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল। একটি মামলায় যশোরের ১২ জনের বিরুদ্ধে পরোয়ানা থাকলেও এ পর্যন্ত চারজনকে গ্রেফতারে সক্ষম হয়েছে পুলিশ। এ মামলায় পলাতক আসামিরা হলেন মো. ইব্রাহিম হোসেন, শেখ মো. মজিবুর রহমান, মো. আবদুল আজিজ সরদার, মো. আজিম সরদার, কাজী ওয়াহেদুল ইসলাম, মো. লুৎফর মোড়ল, মো. আবদুল খালেক মোড়ল ও মশিয়ার রহমান। মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় সর্বশেষ গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে ২১ মে। ওই দিন কক্সবাজারের ১৬ জনের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এ মামলায় আরও আসামি তিনজন। এই ১৯ জনের মধ্যে গ্রেফতার হয়েছেন মোট পাঁচজন। বাকি ১৪ আসামির সঙ্গে পলাতক রয়েছেন এ মামলার আসামি মৌলভি জাকারিয়াও। প্রসিকিউটর তাপস কান্তি বল বলেন, এখনকার অনেক আসামি ব্যক্তিগতভাবে ব্যাপক পরিচিত না হওয়ার কারণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও তাদের সেভাবে চেনে না। ট্রাইব্যুনালের পরোয়ানা জারির পরপরই আসামিরা চলে যান আত্মগোপনে। পলাতক আসামির এ সংখ্যায় উদ্বেগ ও হতাশা প্রকাশ করেন প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজও। বাংলাদেশ প্রতিদিনকে তিনি বলেন, ‘আমরা তো কাউকে আটক বা গ্রেফতার করতে পারি না। আসামি গ্রেফতারে যথাসময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতা ও আন্তরিকতা প্রয়োজন। পলাতক আসামির বিচারে মনস্তাত্ত্বিক বিজয় হলেও তাতে রায় কার্যকর হয় না।’ তদন্ত সংস্থার জ্যেষ্ঠ সদস্য এম সানাউল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় জামিনের সম্ভাবনা কম থাকায় আসামিদের মধ্যে পালিয়ে বা আত্মগোপনে যাওয়ার প্রবণতা রয়েছে। তবে পলাতক আসামি গ্রেফতারে মনিটরিং সেলের কার্যক্রম শুরু হলে এ অবস্থার উন্নতি হবে বলে আশা প্রকাশ করেন এই তদন্ত কর্মকর্তা। ট্রাইব্যুনালের নির্দেশে মানবতাবিরোধী অপরাধে বিভিন্ন সময় গ্রেফতার আসামিদের মধ্যে রয়েছেন গোলাম আযম, মতিউর রহমান নিজামী, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, আবদুস সুবহান, আবুল কালাম মোহাম্মদ ইউসুফ, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, আবদুল কাদের মোল্লা, মীর কাসেম আলী, এ টি এম আজহারুল ইসলাম, সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী, আবদুল আলীম, মো. মোবারক হোসেন, সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সার, মাহিদুর রহমান, আফসার হোসেন, মো. ওবায়দুল হক তাহের, আতাউর রহমান ননী, শেখ সিরাজুল হক ওরফে সিরাজ মাস্টার, আবদুল লতিফ তালুকদার, খান মোহাম্মদ আকরাম হোসেন ও আবদুর রাজ্জাক। এদের মধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন গোলাম আযম, আবুল কালাম মোহাম্মদ ইউসুফ ও আবদুল আলীম। কাদের মোল্লা ও মো. কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড ইতিমধ্যে কার্যকর হয়েছে। অন্যরা কারাগারে।

সর্বশেষ খবর