শনিবার, ২৩ মে, ২০১৫ ০০:০০ টা
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র

মধ্যম আয়ের পথে দেশ

মধ্যম আয়ের পথে দেশ

পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মতো স্পর্শকাতর, ঈর্ষণীয় এবং দুঃসাহসী একটি প্রকল্প বাংলাদেশকে ২০১৮ সালের মধ্যেই মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করবে। প্রকল্পটির প্রাথমিক পর্যায়ের কাজে সন্তোষ প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ)। ২০১৭ সাল থেকে শুরু হবে এর মূল নির্মাণ কাজ। ২০২১ সালে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজ শেষ হওয়ার টার্গেট করে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র আইন-২০১৫ ইতিমধ্যে মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত হয়েছে। এ প্রকল্পটির মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের পরমাণু স্বপ্ন পূরণ হবে। সাশ্রয়ী, পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে এবং নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে আওয়ামী লীগ সরকারের গত মেয়াদের শুরুতে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। রাশিয়ান ফেডারেশন সরকারের আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ লক্ষ্যে ২০১১ সালের ২ নভেম্বর রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের একটি চুক্তি হয়। এর ধারাবাহিকতায় প্রকল্পের প্রস্তুতিমূলক কাজের জন্য উভয় সরকার ২০১৩ সালের ১৫ জানুয়ারি ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের স্ট্যাট ক্রেডিট এগ্রিমেন্ট স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তির শর্তানুযায়ী বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন কাস্টমার ও রাশিয়ান ফেডারেশনের এটমস্ট্রয়, কন্ট্রাকটর হিসেবে প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যক্রম শুরু করে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য নির্মাণ কাজের প্রাথমিক পর্যায়ে রাশিয়ার এটমস্ট্রয়ের সঙ্গে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের চারটি চুক্তি সম্পন্ন হবে। এসব চুক্তির তিনটি ইতিমধ্যে হয়েছে। একটি চুক্তি খুবই দ্রুত শেষ হবে বলে জানা গেছে। প্রথম ও দ্বিতীয় চুক্তির কার্যক্রম নিয়ে ইতিমধ্যে দুই পক্ষের বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে বৈঠক হয়েছে। ওই বৈঠকে প্রাথমিক পর্যায়ের কাজে সন্তোষ প্রকাশ করা হয়। দ্বিতীয় চুক্তির মাইলস্টোন-১ এর ডকুমেন্ট ও মাইলস্টোন-২ এর ডকুমেন্ট এবং প্রতিবেদন দেশীয় বিশেষজ্ঞদের দ্বারা যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। তৃতীয় চুক্তি অনুযায়ী ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন ও পূর্ত নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। তবে প্রকল্পটির কাজ আরও বেশি সুরক্ষিত ও সাবধানতার জন্য তিনটি চুক্তির পরিপ্রেক্ষিতে যেসব প্রতিবেদন এখন পর্যন্ত উপস্থাপিত হয়েছে সেগুলোর ব্যাপারে বিদেশি বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে পর্যালোচনায় প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলে একাধিক সূত্র মনে করে। বিশ্বের অসংখ্য দেশের কাছে ঈর্ষণীয় এ প্রকল্পটি মোট চারটি ধাপে সম্পন্ন করতে হবে। এর জন্য ২০১৩ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে সাইট লাইসেন্স, ডিজাইন অনুমোদন ও কন্সট্রাকশন লাইসেন্স নিতে হবে। এ তিনটি পর্ব শেষ করার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ পারমাণবিক জগতে পা রাখতে সক্ষম হবে। এরপর শুরু হবে প্রকল্পের মূল কাজ। এটি শুরু হবে ২০১৭ সালে। চুক্তি অনুযায়ী নির্মাণ শেষ করতে হবে ২০২১ সালে। আর বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি চালু করার টার্গেট হলো ২০২২ সালে। মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী বছরের শেষের দিকে বাংলাদেশ মূল প্রকল্পের নির্মাণ লাইসেন্স পাওয়ার পর পারমাণবিক ক্লাবের ৩৪তম সদস্য হবে। নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার পর ২০২২ সালে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে আনুমানিক ২ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। তৈরি হবে পরমাণু বিজ্ঞানে দক্ষ জনশক্তি। বিজ্ঞান শিক্ষায় এগিয়ে যাবে দেশ। অর্থনৈতিক প্রসারের সব সেক্টরে আসবে উন্নয়নের জোয়ার। জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। সেই সঙ্গে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হতে যেসব সূচকের ঊর্ধ্বমুখিতা দরকার বাংলাদেশ ২০১৮ সালেই তা অর্জন করতে সক্ষম হবে বলে প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীরা আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

আইএইএর শর্ত অনুযায়ী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত উদ্যোগে বাংলাদেশ পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র আইন ইতিমধ্যে মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত হয়েছে। আইনটি জাতীয় সংসদের আগামী অধিবেশনে পাস হবে। এ আইনটির ৩৬টি ধারা ও দুটি তফসিলে কোম্পানি প্রতিষ্ঠা, পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পরিচালন সংস্থা, মালিক সংস্থা নির্ধারণ, অনুমোদিত মূলধন এবং কোম্পানির কার্যক্রম সম্পর্কে বিস্তারিত উল্লেখ রয়েছে। আইনটি মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকল্পটির কাজে সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ করার জন্য রাশিয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তবে বাংলাদেশের মতো একটি দেশে এ ধরনের উচ্চমাত্রার একটি প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে কিন্তু এ প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের মেধাস্বত্ব এখনো সুরক্ষিত করা হয়নি। পৃথিবীর যেসব দেশে এ ধরনের অত্যাধুনিক প্রকল্প হয়েছে সেসব দেশে প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীদের বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখনো বাংলাদেশের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে বিষয়টি ভাবাই হচ্ছে না বলে জানা গেছে। প্রকল্পটির অগ্রগতি ও বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব খোন্দকার মো. আসাদুজ্জামান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি হবে বাংলাদেশের গর্ব। এমন একটি প্রকল্প দেশের ভাবমর্যাদা ঈর্ষণীয় পর্যায়ে নিয়ে যাবে। এখন পর্যন্ত প্রকল্পের কাজ অত্যন্ত সুষ্ঠু ও দ্রুতগতিতে আগাচ্ছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই প্রকল্পটি সম্পন্ন করা হবে। রূপপুর প্রকল্প সম্পর্কে প্রকল্প পরিচালক এবং দেশের বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী ড. মো. শৌকত আকবর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এ প্রকল্পটি বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে উন্নত করবে। দেশে একটি উন্নয়নের বিপ্লবের সূচনা হবে। এটি শুধু একটি সাধারণ প্রকল্প নয়। এটি হলো বাংলাদেশের পরমাণু স্বপ্নের বাস্তবায়ন। দেশ হবে উদ্বৃত্ত বিদ্যুতের দেশ। সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ প্রাপ্তির সুযোগে অনেক নতুন নতুন কলকারখানা হবে। কর্মসংস্থানের অবারিত সুযোগ সৃষ্টি হবে। প্রকল্পটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই শেষ হবে।

 

সর্বশেষ খবর