শনিবার, ২৩ মে, ২০১৫ ০০:০০ টা
কৃষি সংবাদ

আম রক্ষায় ফ্রুটব্যাগিং

আম রক্ষায় ফ্রুটব্যাগিং

রোগবালাই ও পোকার আক্রমণ থেকে আম রক্ষায় চাঁপাইনবাবগঞ্জে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চালু করা হয়েছে ফ্রুটব্যাগিং প্রযুক্তি। চাঁপাইনবাবগঞ্জ আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা নতুন এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে ব্যাপক সফলতা পাওয়ায় তা আম চাষিদের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছেন।

গবেষকরা বলছেন, এই প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে আম উৎপাদনে একদিকে যেমন ক্ষতিকারক রাসায়নিক কীটনাশকের ব্যবহার বন্ধ হবে, সেই সঙ্গে বিদেশের বাজারেও সুমিষ্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম রপ্তানির দ্বার উন্মোচিত হবে। সংশ্লিষ্টরা জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় ২৪ হাজার ২৬০ হেক্টর জমিতে আম বাগান রয়েছে। কিন্তু আমে মাছি, পোকা বা ফ্রুটফ্লাইয়ের আক্রমণ রোধে বর্তমানে কীটনাশক ব্যবহারের হার অনেক বেড়ে গেছে। অধিক ফলন পেতে ভালো-মন্দ বিচার না করেই মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহারের ফলে একদিকে যেমন পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে, অন্যদিকে আমের উৎপাদন ব্যয়ও বেড়েছে। এই অবস্থায় মাছি-পোকার আক্রমণসহ বিভিন্ন পোকা ও ছত্রাকের আক্রমণ থেকে আম রক্ষায় গত বছর নতুন প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণা করেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানী ড. সরফ উদ্দিন। বিভিন্ন দেশে ব্যবহার হওয়া ফ্রুটব্যাগ পদ্ধতি ব্যবহার করে বাংলাদেশে তার সম্ভাবনা যাচাই করেন তিনি। গত বছর চাঁপাইনবাবগঞ্জ আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের ১৮টি জাতের আম গাছে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে তিনি সাফল্য পান। ড. সরফ উদ্দীন জানান, ফ্রুটব্যাগিং প্রযুক্তিটি বাংলাদেশে একটি নতুন ও সম্ভাবনাময় প্রযুক্তি। ফ্রুটব্যাগিং বলতে ফল গাছে থাকা অবস্থায় বিশেষ ধরনের ব্যাগ দিয়ে ফলকে আবৃত করাকে বুঝায়। এরপর ফল সংগ্রহ করা পর্যন্ত গাছেই লাগানো থাকে ব্যাগটি। এই ব্যাগ বিভিন্ন ফলের জন্য বিভিন্ন রং এবং আকারের হয়ে থাকে। তবে আমের জন্য দুই ধরনের ব্যাগ ব্যবহার করা হয়। রঙিন আমের জন্য সাদা রঙ এবং অন্য সব জাতের আমের জন্য বাদামি রঙের ব্যাগ ব্যবহার হয়। তিনি আরও জানান, গবেষণায় দেখা গেছে ব্যাগিং করা আম দীর্ঘদিন ঘরে রেখে খাওয়া যায়। এই প্রযুক্তি ব্যবহারের কারণে আম সংরক্ষণ করতে ফরমালিন নামক বিষাক্ত রাসায়নিকের প্রয়োজন হয় না। এ ছাড়াও ফলকে বাইরের বিভিন্ন ধরনের আঘাত, পাখির আক্রমণ, প্রখর সূর্যালোক এবং রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে সহজেই রক্ষা করা সম্ভব। নির্দিষ্ট সময়ে ব্যাগিং করা গেলে কোনো স্প্রে ছাড়াই ক্ষতিকর পোকার হাত থেকে আম ফলকে রক্ষা করা সম্ভব। ফ্রুটব্যাগিং প্রযুক্তি ব্যবহার নিয়ে ফল বিজ্ঞানী ড. সরফ জানান, আমের ক্ষেত্রে ব্যাগিং করার উপযুক্ত সময় ৩৫-৪০ দিন বয়সের আমে। তবে এরপরেও ব্যাগিং করা যায়। ব্যাগিং করার আগে আম গাছে ২-৩ বার কীটনাশক ও ছত্রাকনাশক স্প্রে করা যেতে পরে। ভেজা অবস্থায় ব্যাগিং করা যাবে না। ব্যাগিং করার আগেই মরা মুকুল বা পুষ্পমঞ্জরির অংশবিশেষ, পত্র, উপপত্র ছিঁড়ে ফেলতে হবে এবং আমটিকে রাখতে হবে ব্যাগের মাঝ বরাবর। ব্যাগের উপরের প্রান্তটি ভালোভাবে মুড়িয়ে দিতে হবে- যেন পানি বা অন্যকিছু প্রবেশ করতে না পারে। তিনি বলেন, গতবছর পরীক্ষামূলকভাবে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে সফলতা পাওয়ায় এবার তা আমচাষিদের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশে উৎপাদন না হওয়ায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের একটি প্রতিষ্ঠান বিশেষ ধরনের এই ব্যাগটি চীন থেকে সরাসরি আমদানি করে কৃষকদের মধ্যে সরবরাহ করছেন। প্রতিটি ব্যাগ ৩-৪ টাকা দরে পাওয়া যাচ্ছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব ও গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শফিকুল ইসলাম বলেন, এই প্রযুক্তি ব্যবহার করলে ব্যাগিং করা আমে কোনো ধরনের দাগ থাকবে না। এ ছাড়া সব ধরনের রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে আমকে রক্ষা করা যাবে। এ ছাড়া এ পদ্ধতিতে যে কোনো জাতের আমকে রঙিন করা সম্ভব। এ প্রযুক্তিতে সারা দেশে আম উৎপাদন করা গেলে তা বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব হবে। কারণ ইউরোপে এ ধরনের আমের চাহিদা রয়েছে।

 

 

 

 

সর্বশেষ খবর