রবিবার, ২৪ মে, ২০১৫ ০০:০০ টা

পোশাকশিল্পে বিদেশি ষড়যন্ত্র

দুই বছরে ৩২ কারখানা বন্ধ, বেকার ২০ হাজার শ্রমিক

পোশাকশিল্পে বিদেশি ষড়যন্ত্র

বিশ্বের দ্বিতীয় পোশাক পণ্য রপ্তানিকারক হিসেবে বাংলাদেশ এখন এক নম্বর স্থান দখলের চেষ্টা করছে। এরসঙ্গে টার্গেট- বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী ২০২১ সালে ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পোশাক রপ্তানি। এমন সাহসী উদ্যোগ নিয়ে যখন এগোচ্ছে বাংলাদেশ, তখন পোশাকশিল্প নিয়ে ক্রেতাদের দুটি জোট অ্যাকর্ড-অ্যালায়েন্স ষড়যন্ত্র করছে। এই অভিযোগ সরকার, মালিক ও শ্রমিক-এই তিন পক্ষেরই। পোশাকশিল্পের নিরাপত্তার নামে অ্যাকর্ড-অ্যালায়েন্সের অন্য কোনো স্বার্থ আছে বলেও মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
শ্রমিকদের নিরাপত্তা ইস্যুতে বিদেশি ক্রেতাদের কারখানা পরিদর্শনের প্রভাবে দেশের রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকশিল্পের ৩২টি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে প্রায় ২০ হাজার শ্রমিক বেকার হয়েছে বলে জানিয়েছে বিজিএমইএ-বিকেএমইএ। এখনো ছাঁটাই আতঙ্কে ভুগছে শ্রমিকরা। বাংলাদেশি পোশাক পণ্যের ক্রেতা জোট অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের তৎপরতায় ইতিমধ্যে পোশাকশিল্প মালিকদের প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের। তথ্যমতে, রানা প্লাজা ধসের পর বাংলাদেশি শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও নৈতিক ফ্যাশন এবং নৈতিক বাণিজ্যের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে পোশাক পণ্যের ইউরোপীয় ক্রেতাদের জোট ‘অ্যাকর্ড অন ফায়ার অ্যান্ড বিল্ডিং সেফটি ইন বাংলাদেশ (অ্যাকর্ড) ও উত্তর আমেরিকার ক্রেতা জোট ‘অ্যালায়েন্স ফর ওয়ার্কার্স সেফটি ইন বাংলাদেশের (অ্যালায়েন্স)’ তৎপরতা শুরু হয়। পোশাক শ্রমিকদের উন্নত কর্ম-পরিবেশ ও নিরাপত্তার বিষয়টি অগ্রাধিকার বিবেচনা করে অ্যাকর্ড-অ্যালায়েন্স দেশের বিভিন্ন কারখানা পরির্দশন করে। কিন্তু তাতেই বাধে বিপত্তি। কর্ম-পরিবেশ ও নিরাপত্তা ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে অ্যাকর্ড-অ্যালায়েন্স হঠাৎ করে পোশাকশিল্প কারখানা বন্ধ করে দেওয়া শুরু করে। সংস্থা দুটি বেশ কিছু কারখানা বন্ধ ঘোষণার পর শ্রমিকদের মাঝে শুরু হয় ছাঁটাই আতঙ্ক। মালিকদের মধ্যে দেখা দেয় বিনিয়োগে নিরাপত্তাহীনতা।
এ প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ সম্প্রতি বলেছেন, অ্যাকর্ড-অ্যালায়েন্স আমাদের সবক দিচ্ছে। এখানে গভীর ষড়যন্ত্র আছে। কারখানা বন্ধ হলে শ্রম অসন্তোষ হবে বলে আশঙ্কা করছেন তিনি। এর অর্থ হচ্ছে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে লবি কাজ করছে। যাতে বাংলাদেশের রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হয়।
একাধিক পোশাকশিল্প কারখানার মালিক ও শ্রমিক সংগঠনগুলোর নেতারা জানিয়েছেন, শুরুতে অ্যাকর্ড-অ্যালায়েন্স কিছু না বুঝেই বেশ কয়েকটি কারখানা বন্ধ করে দিয়েছে। পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ-বিকেএমইএ এবং অ্যাকর্ড-অ্যালায়েন্স একে-অপরকে ভুল বোঝাবুঝি ও দোষারোপের দিকে ঠেলে দিয়েছে। দুই পক্ষই নিজেদের অবস্থানে থাকার কারণে পোশাকশিল্পে একটা জটিলতাও তৈরি হয়েছে।অ্যাকর্ড-অ্যালায়েন্সের তৎপড়তার প্রভাব সম্পর্কে পোশাক শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে আন্দোলনরত গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফোরামের সভাপতি মোশরেফা মিশু বলেন, এদেশের পোশাকশিল্পের উন্নয়নে অ্যাকর্ড-অ্যালায়েন্সের কোনো অবদান দেখছি না। আমাদের প্রশ্ন- সরকার ও বিজিএমইএ কেন অ্যাকর্ড-অ্যালায়েন্সকে অনুমতি দিল। তাদের সঙ্গে চুক্তি করল। আসলে চোরকে ঘরে ডুকতে দিয়ে বলা হচ্ছে, সে চোর। এই চোর যখন সব কিছু নিয়ে পালাচ্ছে, তখন বলা হচ্ছে, সে চুরি করছে। অ্যাকর্ড-অ্যালায়েন্স যাত্রার পর গত দুই বছর তাদের পর্যবেক্ষণ করার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে এ শ্রমিক নেত্রী আরও বলেন, সরকার, বুয়েট ও বিজিএমইএ আন্তরিক হলে পোশাকশিল্পে নিরাপদ কর্মপরিবেশ তৈরি করা যেত। কিন্তু এখনো তা হয়নি। এরা কেউ আমাদের কথা শোনেনি। বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার বলেন, অ্যাকর্ড-অ্যালায়েন্সের এ তৎপরতায় কিছুটা নেতিবাচক ফল তৈরি হয়েছে। তাদের অহেতুক হস্তক্ষেপের কারণে শ্রমিক অসন্তোষও তৈরি হয়েছে। আমাদের পোশাকশিল্পের নিরাপত্তার জন্য কলকারখানা অধিদফতরই যথেষ্ট, যদি তারা দায়িত্বশীল হন। এ প্রসঙ্গে পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ-এর সহসভাপতি শহিদুল্লাহ আজিম বলেন, অ্যাকর্ড-অ্যালায়েন্সের এজেন্ডা ছিল শ্রমিকদের নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিয়ে। কিন্তু এখন তারা দেশের প্রচলিত আইনের ওপর হাত দিতে চায়। তারা শ্রমিক অসন্তোষে উসকানি দিচ্ছি। তাদের হয়তো অন্য কোনো স্বার্থ আছে। গত দুই বছরে ৩২টি কারখানা তাদের অপতৎপরতায় বন্ধ হয়েছে। এতে ১৮ থেকে ২০ হাজার শ্রমিক বেকার হয়েছে। এরপরও তারা নতুন নতুন সমস্যা তৈরি করেছে।

সর্বশেষ খবর