রবিবার, ৩১ মে, ২০১৫ ০০:০০ টা
চাঞ্চল্যকর সেসব খুন (শেষ)

মাথা সিলেটে দেহ চট্টগ্রামে

মাথা সিলেটে দেহ চট্টগ্রামে

ঢাকা থেকে পাঠানো একটি পার্সেল থেকে মাথাবিহীন লাশ উদ্ধার করে চট্টগ্রাম কোতোয়ালি থানা পুলিশ। একই দিন ঢাকা থেকে সিলেটগামী একটি পরিত্যক্ত ব্যাগ থেকে উদ্ধার করা হয় খণ্ডিত মাথা। পুলিশি তদন্তে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। খণ্ডিত মস্তক ও মস্তকবিহীন দেহ একই ব্যক্তির। পরিচয় মিলে তার। তিনি হলেন ঢাকার তেল ব্যবসায়ী মতিউর রহমান। ১৯৮৪ সালে এই পার্সেলমোড়া খুনের ঘটনাটি তখন বেশ আলোড়ন তুলেছিল। পুলিশ খুনি চক্রকেও গ্রেফতার করতে সমর্থ হয়।
পুলিশ ও অন্য সূত্রগুলো জানিয়েছে, ১৯৮৪ সালের ডিসেম্বরে ঢাকা থেকে একটি কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে চট্টগ্রামে ট্রাঙ্কের পার্সেল পাঠানো হয়। চট্টগ্রাম কুরিয়ার সার্ভিসের অফিস থেকে ট্রাঙ্কটি নিয়ে বেরিয়ে যান এক কর্মী। রিয়াজউদ্দিন বাজারের এক ব্যবসায়ীর ঠিকানায় ঢাকা থেকে আসা কালো রঙের ওই ট্রাঙ্ক পৌঁছে দিতে তিনি অলিগলি চষে বেড়াচ্ছেন। কিন্তু কোথাও তিনি ঠিকানা খুঁজে পাচ্ছিলেন না। তাকে এলোপাতাড়ি ঘুরতে দেখে পুলিশের সন্দেহ হয়। ট্রাঙ্কসহ তাকে কোতোয়ালি থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। থানায় পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ উপস্থিত হন একজন ম্যাজিস্ট্রেট। ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে পুলিশ কর্মকর্তারা ট্রাঙ্কের তালা ভাঙেন। ট্রাঙ্কের ঢাকনা খুলতেই হতভম্ব সবাই। সবার দৃষ্টি স্থির। কয়েক মুহূর্তের জন্য প্রত্যেকের জবান যেন বন্ধ হয়ে যায়। ট্রাঙ্ক থেকে বের করা হলো মস্তকবিহীন এক পুরুষের লাশ। পার্সেলের ভিতর মস্তকবিহীন লাশ উদ্ধারের পর পুলিশ হতভাগ্য ব্যক্তির পরিচয়ের সন্ধানে মাঠে নামে। অপরদিকে একই দিন ঢাকা-সিলেটগামী একটি ট্রেনের সিটের নিচে একটি ব্যাগ দেখতে পান একজন যাত্রী। ট্রেনটি সিলেট পৌঁছার পর মালিকবিহীন ব্যাগটি ওই যাত্রী তুলে নেন। তিনি সেটি বাসায় নিয়ে যান। বাসায় ব্যাগটি খুলেই তিনি মানুষের খণ্ডিত মাথা দেখতে পান। ভীতসন্ত্রস্ত ওই ব্যক্তি তখনই পুলিশকে বিষয়টি জানান। পুলিশ পরে জানতে পারে চট্টগ্রামে দেহ আর সিলেটে উদ্ধার মস্তক একই ব্যক্তির। ঢাকা থেকে নিখোঁজ এক ব্যবসায়ীর পরিবার খোঁজ করে চট্টগ্রাম ও সিলেট পুলিশের সঙ্গে। তারা ছবি দেখে শনাক্ত করেন ওই লাশ তাদের স্বজনের। ঢাকার পুলিশ এ ঘটনার তদন্ত শুরু করে। অবশেষে গ্রেফতার হন তেল ব্যবসায়ীর বন্ধু শফিক। শফিক পুলিশকে জানিয়েছিলেন, মতিউর তার কাছে ২৫ হাজার টাকা পেতেন। ওই টাকার জন্য মতিউর তাকে চাপ দিচ্ছিল। যে কারণে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়।
পেরেক পদ্ধতি : ১৯৮৬ সালের ১ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জের বিশিষ্ট সুতা ব্যবসায়ী বাচ্চুকে মোহাম্মদপুরের এক বাড়িতে খুন করা হয়। ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের জের ধরে তাকে কৌশলে মোহাম্মদপুরের ওই বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর তার মাথায় পেরেক ঠুকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় পুলিশ বাচ্চুর বন্ধু শাহআলমকে গ্রেফতার করে। পরে অবশ্য তার সাজা হয়।  ১৯৯৯ সালে উত্তরায় ফ্রেন্ডস ক্লাবে দুর্বৃত্তরা গুলি করে হত্যা করে মমিনুল রহমান শিমুলকে। ওই ঘটনায় পরে থানায় মামলা হয়। অভিযুক্তদের একজন তিতাসকে ধরিয়ে দিতে উত্তরাতে পোস্টারও করা হয়েছিল সেই সময়ে।
খুন, আরও খুন : পুরান ঢাকার শাহাদাত কমিশনার, মতিঝিলের দর্পণ, পুরান ঢাকার আইনজীবী হাবিব মণ্ডল, ধানমন্ডিতে ফরিদপুরের আওয়ামী লীগ নেতা লিয়াকত হোসেন, আগারগাঁওয়ে এস আই হুমায়ুন কবির, ছাত্রলীগ নেতা তপন ও আঁখি হত্যা, ওয়ার্ড কমিশনার খালেদ ইমাম, আলীম, বিনয় কৃষ্ণ ও রাজু হত্যার ঘটনাটি আলোচনায় উঠে আসে। ২০০২ সালের ১৩ মে এমনি এক ঘটনায় হতবিহ্বল হয়ে পড়ে দেশের মানুষ। সবচেয়ে নিরাপদ  যে কোল, পিতার সেই কোলে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হয় উত্তর বাড্ডার শিশু মারিয়ান ইসলাম নওশিন। বিশ মাসের এই শিশুকে নিয়ে নিজ বাড়ির দরজায় দাঁড়িয়ে ছিলেন তার বাবা। এমন সময় সন্ত্রাসীদের দুই পক্ষের  গোলাগুলিতে লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে আসা গুলি লাগে শিশুটির  দেহে। বাবার কোলেই নিথর হয়ে যায় ছোট্ট দেহটি। এ ছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. আফতাব আহমাদ, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট খোরশেদ আলম বাচ্চু, গণতন্ত্রী পার্টি  নেতা নুরুল ইসলাম, গার্মেন্ট শ্রমিক নেতা আমিনুল ইসলাম, রংপুর কারমাইকেল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ছাত্র বিপ্লব হত্যা, ফিল্মী কায়দায় মিল্কী হত্যা, ফেনীর একরাম হত্যা সারা দেশে আলোচিত হয়ে ওঠে।
রাজধানীতে ছয় খুন, পাঁচ খুন, চার খুনের ঘটনা ঘটেছে একাধিকবার। আলোচিত হয় ঘটনাগুলো। ফলাও করে পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হয়। কিন্তু আলোচিত এসব খুনের ঘটনা ঢাকা পড়ে যায় নতুন কোনো আলোচিত ঘটনায়। 

সর্বশেষ খবর