মঙ্গলবার, ১৬ জুন, ২০১৫ ০০:০০ টা

শিক্ষাবর্ষ শেষ না করেই পরীক্ষার আয়োজন!

শিক্ষাবর্ষ শেষ না করেই পরীক্ষার আয়োজন!

তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষা শেষ হয়েছে মাত্র ৯ মাস। নতুন বর্ষে ক্লাস হয়েছে আড়াই থেকে তিন মাস। কোর্সগুলোর প্রতিটির কলেজভেদে ক্লাস হয়েছে ৫ থেকে ৮টি। এ অবস্থায় ঘোষণা করা হয়েছে পরবর্তী বছরের জন্য চূড়ান্ত পরীক্ষার সময়সূচি। এমনই অভিযোগ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থীদের। সেশনজট কাটিয়ে ওঠার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন দৌড়ে রীতিমতো হাঁপিয়ে উঠছেন শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া শিক্ষাবর্ষ শেষ না করেই পরীক্ষা নেওয়ার আয়োজন করায় হতবাক শিক্ষার্থীরাও।  দেশের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীরা এর প্রতিবাদে আন্দোলনে নেমেছেন। তারা অভিযোগ করেছেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সেশনজটের কলঙ্ক দায় বর্তমান শিক্ষার্থীদের কাঁধে চাপিয়ে দিচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আগামী ২৫ জুন থেকে পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করলেও শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে এ সূচি পরিবর্তন করে ঘোষণা করেছে নতুন সূচি। নতুন সূচি অনুযায়ী আগামী ১১ জুলাই  থেকে এসব পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ, তথ্য ও পরামর্শ দফতরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ফয়জুল করিম এ তথ্য জানিয়েছেন।
শিক্ষাবর্ষ  শেষ না হতেই এসব পরীক্ষার আয়োজন করা হচ্ছে অভিযোগ করে শিক্ষার্থীরা এ পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। সারা দেশে বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন। চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ, রংপুর, বগুড়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরকারি কলেজগুলোতে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন। ঢাকা কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ইসমাইল হোসেন জানান, দেশের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে আগে পরীক্ষা হতো প্রায় দেড় বছর পর পর সেখানে যত দ্রুত হয় ততই শিক্ষার্থীদের জন্য মঙ্গলজনক। তবে এ পরীক্ষাসূচিতে পরীক্ষা দিতে গেলে যারা তৃতীয় বর্ষের মানোন্নয়ন দেবেন তারা বিপাকে পড়বেন। আন্দোলনকারীদের মধ্যে বৃহৎ অংশ মানোন্নয়নকারী রয়েছেন। বগুড়ার আজিজুল হক বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের রসায়ন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী প্রতাপ কুমার বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোটের হরতাল অবরোধে দুই মাসের বেশি সময় ধরে ক্লাস অনুষ্ঠিত হয়নি। তারপর ক্লাস শুরু হলেও এখন পর্যন্ত প্রতিটি কোর্সে মাত্র ৭-৮টি ক্লাস হয়েছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ক্রাশ প্রোগ্রামের নামে দ্রুত পরীক্ষা আয়োজন করেছে। কলা ও সামাজিক বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিতে পারলেও বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য কোর্স শেষ না করে পরীক্ষায় বসা একেবারেই অসম্ভব ব্যাপার। এভাবে পরীক্ষা নেওয়া হলে তাতে অবশ্যই ফলাফলে প্রভাব পড়বে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যর্থতার দায় আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এটা গ্রহণযোগ্য নয়। এদিকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাসূচিতে দেখা গেছে, আগামী ১০ জুন থেকে তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষা শুরু হতে যাচ্ছে। চতুর্থ বর্ষে পরীক্ষার্থীরা তৃতীয় বর্ষের মানোন্নয়ন দিতে বিপদের সম্মুখীন হবেন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, চতুর্থ বর্ষের যেসব পরীক্ষার্থী তৃতীয় বর্ষের মানোন্নয়ন পরীক্ষায় অংশ নেবেন তাদের কয়েকটি পরীক্ষা বিরতি ছাড়াই দিতে হবে। পরীক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে কর্তৃপক্ষ ২০১৩ সালের চতুর্থ বর্ষ অনার্স পরীক্ষা ২৫ জুনের পরিবর্তে ১১ জুলাই থেকে শুরুর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। ক্রাশ প্রোগ্রাম বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এ সময়সূচির আর কোনো পরিবর্তন করা হবে না।
 এ ছাড়া ক্রাশ প্রোগ্রাম অনুযায়ী সব পরীক্ষা নির্ধারিত সময়েই অনুষ্ঠিত হবে বলেও জানানো হয়। শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছেন, তড়িঘড়ি করে ক্রাশ প্রোগ্রাম কর্মসূচি বাস্তবায়নের নামে একসঙ্গে শিক্ষার্থীদের ওপর দুই পরীক্ষার বোঝা চাপিয়ে দিয়েছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এটি মেনে নেওয়া যায় না। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন অর রশীদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সেশনজটের অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে হলে ক্রাশ প্রোগ্রামের বিকল্প নেই। শিক্ষার্থীরা এখন কেন আন্দোলন করছে, পরীক্ষা কোন মাসে হবে এর আভাস আগেই দেওয়া হয়েছিল। হরতাল অবরোধে কলেজে ক্লাস পরীক্ষা দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল- এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে শুধু ক্লাসে পড়া নয়, ঘরে বসেও পড়া যায়। তা ছাড়া শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে ২৫ জুনের পরিবর্তে ১১ জুলাই থেকে পরীক্ষার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এরপরও যদি কেউ পরীক্ষা দিতে না চায় তবে সে পরবর্তী বছরে পরীক্ষা দেবে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন অযৌক্তিক বলেও তিনি জানান।

সর্বশেষ খবর