মঙ্গলবার, ১৬ জুন, ২০১৫ ০০:০০ টা

থাইল্যান্ড থেকে ফিরলেন আরও ৫৭ বাংলাদেশি

মালয়েশিয়ায় অভিবাসন প্রত্যাশী ৪৭ জন বাংলাদেশি গতকাল সন্ধ্যায় থাইল্যান্ড থেকে দেশে ফিরেছেন। থাইল্যান্ডে অবস্থিত বাংলাদেশের দূতাবাস ও আন্তর্জাতিক অভিবাসী সংস্থার (আইওএম) সহযোগিতায় তাদের দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।
গতকাল সন্ধ্যা সাতটা ৩৫ মিনিটে ৪৭ জন বাংলাদেশিকে বহন করা বিমান হজরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতা  শেষে রাত সোয়া ৮টায় তারা বিমানবন্দরের বাইরে আসেন। সাম্প্রতিক সময়ে সমুদ্র পথে মালয়েশিয়া যাওয়ার পথে এই ৪৭ জন থাইল্যান্ডে আটক হন।
মালয়েশিয়ার শীর্ষ ব্যবসায়ীরা মানব পাচার করে আসছেন : প্রকাশ্যে তারা আমদানি ও রফতানি খাতের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী। কিন্তু মুখোশের আড়ালে আন্তর্জাতিক মানব পাচার চক্রের মালয়েশীয় সাম্রাজ্যের হর্তাকর্তা। এত দিন সেই মুখোশ লেগে ছিল। এবার তা খসে পড়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সামনে। তদন্ত চালিয়ে একটি আন্তর্জাতিক মানব পাচার চক্রের সঙ্গে দেশটির তিন শীর্ষ ব্যবসায়ীর সংশ্লিষ্টতার তথ্যপ্রমাণ পেয়েছে মালয়েশিয়ার প্রশাসন। এখন তৎপরতা চলছে ওই তিনজনের বিষয়ে তদন্ত করে গর্তে থাকা অপরাপর অপরাধীকে খুঁজে বের করার। মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরের বুকিত আমানের স্পেশাল টাস্কফোর্স অন অর্গানাইজড ক্রাইম (স্ট্যাফোক), স্পেশাল ট্যাকটিক্যাল ইন্টেলিজেন্স নারকোটিক্স গ্রুপ (স্টিং) ও স্পেশাল ব্রাঞ্চের সমন্বয়ে গঠিত বিশেষ একটি দল মানব পাচারে জড়িতদের বিচারের মুখোমুখি করতে এ নজিরবিহীন তৎপরতা চালাচ্ছে। বুকিত আমানের এ কার্যক্রমে ঘনিষ্ঠভাবে সহায়তা করছে কেদাহ পুলিশ।
সম্প্রতি মালয়েশিয়া-থাইল্যান্ড সীমান্ত ও সাগরে সৃষ্ট শরণার্থী বিপর্যয়ের পেছনে জড়িত ৭০ দালালকে আটক করার পর তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে এই তিন শীর্ষ ব্যবসায়ীকে চিহ্নিত করা হয়। পেনাং, পেরলিস ও কেদাহর এ তিন ব্যবসায়ীর ব্যাংক লেনদেনের ওপরও এখন তীক্ষ নজরদারি চলছে।
এ বিষয়ে কেদাহ পুলিশের চিফ সিনিয়র ডেপুটি কমান্ডার জামরি ইয়াহইয়া জানান, বিশেষ দলটি ইন্টারপোলের সহযোগিতায় মানব পাচারে জড়িত মালয়েশীয় দালালদের চিহ্নিত করার কাজ করছে। এ কার্যক্রম সফলও হতে চলেছে। মানব পাচারে জড়িতদের বিচারের মুখোমুখি করা এখন কেবলই সময়ের ব্যাপার বলে দাবি করেন জামরি ইয়াহইয়া। এ পুলিশ কর্মকর্তা জানান, মিয়ানমারের অধিকারবঞ্চিত রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশিদের পাচারে জড়িত ৭০ দালালের ?আটকাভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া গোয়েন্দা ও পুলিশ কর্মকর্তাদের তথ্য অনুযায়ী আন্তর্জাতিক পাচার চক্রের এই তিন ব্যবসায়ী সদস্যকে চিহ্নিত করা হয়েছে।
পাচারে জড়িত বেশ কজন পুলিশ কর্মকর্তাকে আটক এবং এই তিন শীর্ষ ব্যবসায়ীকে চিহ্নিত করলেও এখনই কারও পরিচয় প্রকাশ করা হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন জামরি। তিনি বলেন, ‘আমরা নিশ্চিত হয়েছি, এই তিন ব্যবসায়ী ব্যাংক নেগারায় লেনদেন করেন। এখন এদের সঙ্গে কেউ জড়িত কি না সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার জন্য তাদের অ্যাকাউন্টগুলোর ওপর নজরদারি রাখা হচ্ছে। এ কারণে ব্যাংক নেগারাসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।’ তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া অনুসরণ করে অপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি করা হবে বলে জানান বিশেষ দলের এ মুখপাত্র।
এদিকে মিয়ানমারে সংখ্যালঘু মুসলিম রাহিঙ্গাদের ওপর ‘গণহত্যা’ চলছে বলে অভিযোগ করেছেন মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ। তিনি বলেন, এটি বন্ধে মালয়েশিয়াসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার জোট আসিয়ানের সদস্য-দেশগুলোর হস্তক্ষেপ করা উচিত। শুক্রবার কুয়ালালামপুরে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে তিনি এ আহ্বান জানান। খবর দ্য মালয়মেইল অনলাইনের।
মিয়ানমার থেকে নারী-শিশুসহ হাজারো রোহিঙ্গা সম্প্রতি মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় করে মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডের দিকে পাড়ি জমায়। মানব পাচারকারীদের শিকার হওয়া ছাড়াও দমন-পীড়নের কারণে তারা দেশ ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে বলে অভিযোগ আছে।
মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডের গভীর জঙ্গলে সম্প্রতি অভিবাসন প্রত্যাশীদের বেশ কিছু কবরের সন্ধান পাওয়া গেলে সারা বিশ্বে হইচই পড়ে যায়। এরই প্রেক্ষাপটে ‘রোহিঙ্গাদের দুর্দশা-২ : মানবতাবিরোধী অপরাধ’ শিরোনামের ওই সম্মেলনে এ অঞ্চলের প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব মাহাথির বলেন, ‘এটি শুধু নৌকার সমস্যা নয়।’ কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ নয়-এমন বিবেচনায় আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর চুপ করে থাকার সমালোচনা করেন তিনি। মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর বৈষম্য ও ‘গণহত্যার’ বিষয়ে ইঙ্গিত করে মাহাথির বলেন, ‘হতে পারে এটি কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। কিন্তু জনগণের ওপর এমন নিষ্ঠুর অত্যাচার করার অধিকারও কোনো দেশের নেই।’ আধুনিক মালয়েশিয়ার রূপকার হিসেবে পরিচিত মাহাথির বলেন, ‘মালয়েশিয়া সরকারের উচিত হবে রোহিঙ্গাদের বিষয়টি আসিয়ানে তোলা। গণহত্যা চালায়, এমন কোনো দেশ আসিয়ানের সদস্য থাকুক, আমরা তা সমর্থন করতে পারি না। এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ আমাদের করতেই হবে।’ মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতনের বিষয়টি আসিয়ানের পক্ষ থেকে জাতিসংঘে তোলারও পরামর্শ দেন মাহাথির। তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আমরা জাতিসংঘে তুলতে পারি...। দেশটিকে (মিয়ানমার) একঘরে করা উচিত।’
জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত অন্তত ২৫ হাজার রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশিকে পাচারকারীরা নৌকায় করে মালয়েশিয়াসহ অন্যান্য দেশে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এদিকে নিউইয়র্ক টাইমসের এক খবরে বলা হয়েছে, মিয়ানমার সরকার বলছে, তারাও চায় না হাজার হাজার মানুষ মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে সাগর পাড়ি দিয়ে অন্য দেশে আশ্রয় নিক। তবে রোহিঙ্গাদের বিষয়ে তারা সরকারের নীতির কোনো পরিবর্তন করবে না। গেল সপ্তাহে মিয়ানমারের প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের উপমহাসচিব ইউ জাউ তাই এক সাক্ষাৎকারে বলেন, বাঙালিদের (রোহিঙ্গা) বিষয়ে সরকারের নীতির কোনো পরিবর্তন করা হবে না। মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি নেই। দেশটির সরকার তাদের ‘বাঙালি’ বা ‘বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী’ হিসেবে দাবি করে আসছে।

সর্বশেষ খবর