সোমবার, ২২ জুন, ২০১৫ ০০:০০ টা

ছিটমহলে শিক্ষার আলো

নতুন নতুন স্কুল-কলেজ স্থাপনের উদ্যোগ

সন্তানদের শিক্ষার আলোয় আলোকিত করতে ছিটমহলবাসী নিজ উদ্যোগে গড়ে তুলছেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শুরু করে কলেজ পর্যন্ত গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছেন তারা। এমনকি ধর্মীয় শিক্ষার জন্য মাদ্রাসা-মক্তবও প্রতিষ্ঠা করছেন। এরই মধ্যে সাইনবোর্ড তুলে স্থানও নির্ধারণ করেছেন বাসিন্দারা। সরকার অনুমোদন দিলেই শিক্ষার কার্যক্রম শুরু হবে এসব প্রতিষ্ঠানে। সরেজমিন অনুসন্ধান চালাতে গিয়ে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন নিয়ে নানা দ্বন্দ্বের খবরও রয়েছে। ফলে অনেক ছিটমহলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নামে পাল্টাপাল্টি সাইনবোর্ড তোলার ঘটনা ঘটছে। বিশেষ করে কুড়িগ্রামের দাসিয়ারছড়া ছিটমহলে এ ঘটনা ঘটছে বেশি। বাসিন্দাদের মধ্যে গ্রুপিং শুরু হয়েছে। এক গ্রুপে রয়েছেন ছিটমহল সমন্বয় কমিটির সদস্যরা, অন্য গ্রুপে ইউনাইটেড কাউন্সিলের নেতারা। সমন্বয় কমিটির দাবি, ইউনাইটেড কাউন্সিলর বাংলাদেশ হওয়ার পক্ষে ছিল না। কিন্তু এখন নিজেদের আধিপত্য বিস্তারের জন্য পাল্টা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলছে। পঞ্চগড়ের গাড়াতি, কোটভাজনি, দোহলা খকড়াবাড়ী-১, নাটকটকা, শালবাড়ী কাজলদিঘী, পুটিমারী; লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার বাত্রিগাছী, হাতীবান্ধার গোতামারী, পাটগ্রামের ভোটবাড়ী, পানিশাল, লতামারী, বাঁশকাটা; কুড়িগ্রামের দাসিয়ারছড়া ও নীলফামারীর ২৮ বড়খানকিবাড়ী, ২৯ খানকিখারিজা, ৩০ গিদালদাহ, ৩১ নগরজিগাবাড়ী ছিটমহলে সরেজমিন ঘুরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নতুন নতুন সাইনবোর্ড দেখা গেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা বিভিন্ন শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের নাম প্রস্তাব করে ছিটমহলে সাইনবোর্ড তুলেছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় ছিটমহল দাসিয়ারছড়ায় সাইনবোর্ড উঠেছে বেশি। এখানে প্রস্তাবিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ২২টি সাইনবোর্ড রয়েছে। এর মধ্যে আছে মহাবিদ্যালয়, বালক ও বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, মাদ্রাসা এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়। এ ছাড়া মসজিদ-মক্তবও গড়ে তোলা হচ্ছে। দাসিয়ারছড়া ছিটমহলের বিভিন্ন অংশ ঘুরে যে সাইনবোর্ডগুলো চোখে পড়েছে সেগুলো হলো ইন্দিরা-মুজিব মহাবিদ্যালয়, ইন্দিরা-মুজিব বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়, দাসিয়ারছড়া দাখিল মাদ্রাসা, বালাটারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মধ্যপাড়া সমন্বয় উচ্চবিদ্যালয়, দাসিয়ারছড়া মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়, বটতলা প্রাথমিক বিদ্যালয়, পশ্চিমপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়, কামালপুর বড় কামাত প্রাথমিক বিদ্যালয়, ছোট কামাত প্রাথমিক বিদ্যালয়, ছোট কামাত বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, ছোলাটারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বানিয়াটারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এ ছাড়া ভূরুঙ্গামারীর সেউতি কুর্শা ছিটে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড উঠেছে দুটি। একটি সেউতি কুর্শা ইন্দিরা-মুজিব স্মৃতি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, অন্যটি সেউতি কুর্শা মাধ্যমিক বিদ্যালয়। দাসিয়ারছড়ার একমাত্র প্রাচীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কালিহাট প্রাথমিক বিদ্যালয় বাংলাদেশ স্বাধীনের পর থেকেই বন্ধ। ছিটমহলের কালিহাট বাজারে ১৯৩৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এ বিদ্যালয় আজও দাঁড়িয়ে আছে। বর্তমানে এ প্রতিষ্ঠানে রয়েছে টিনের বেড়া ও ছাউনি দেওয়া খানতিনেক জরাজীর্ণ পরিত্যক্ত ঘর। জানালা-কপাট নেই। মরচে ধরা টিনের সাইনবোর্ড ঝুলছে ঘরের সামনে। তবে এখন এ প্রতিষ্ঠানটি চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির দাসিয়ারছড়া শাখার সভাপতি আলতাফ হোসেন বলেন, ‘ছিটের প্রধান সমস্যা ছিল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না থাকা। আমরা নিজেরা উদ্যোগ নিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান করছি। কিন্তু আমাদের বিপক্ষ গ্রুপও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড লাগাচ্ছে। এ নিয়ে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। তবে আমরা কালিহাট প্রাথমিক বিদ্যালয় চালু করার উদ্যোগ নিয়েছি।’

সর্বশেষ খবর