পদোন্নতির জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে দিতে ৭৭ লাখ টাকা ঘুষ সংগ্রহের অভিযোগে বরিশাল মহানগর পুলিশের (বিএমপি) ডেপুটি কমিশনার (উত্তর) জিল্লুুর রহমানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তাকে সিলেট রেঞ্জ ডিআইজির কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে। গতকাল বিকালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ-সংক্রান্ত আদেশ জারি করে। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গ, অসদাচরণ, দুর্নীতি এবং পুলিশ বিভাগের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অভিযোগে রয়েছে। পুলিশ সদর দফতরের তদন্তে এসব অভিযোগ প্রমাণিত হয়। পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজি) এ কে এম শহীদুল হক বলেন, "অপরাধীর বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান 'জিরো টলারেন্স'। কেউ কোনো ফৌজদারি অপরাধ, দুর্নীতি করলে তিনি পুলিশ হিসেবে গণ্য হবেন না। তাকে অপরাধী হিসেবে গণ্য করে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। এ ধরনের অপরাধীকে কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না। ভবিষ্যতেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে। যারা শৃঙ্খলাভঙ্গ বা অসদাচরণ করবেন তাদের বিরুদ্ধেও বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।" প্রসঙ্গত, পদোন্নতির জন্য ঘুষের টাকা সংগ্রহে বিএমপির নিম্ন পদের পুলিশ সদস্যদের প্রলুব্ধ বা উদ্বুদ্ধ করেছেন- এমন তথ্য পেয়েছিল পুলিশ সদর দফতর। 'ডিসিপ্লিন অ্যান্ড প্রফেশনাল স্ট্যান্ডার্ড' শাখা ওই বিষয়টিতে অনুসন্ধানে নামে। সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতেই জিল্লুর রহমানকে সাময়িক বরখাস্তের সুপারিশ করেছিলেন আইজিপি। আমাদের বরিশালের নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে দেওয়ার জন্য ২৩০ জন কনস্টেবলের কাছ থেকে ওই অর্থ আদায় করা হয়েছিল। সাময়িক বরখাস্ত জিল্লুর রহমানকে সিলেট রেঞ্জে সংযুক্ত করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব স্বাক্ষরিত এ-সংক্রান্ত ফ্যাঙ্ বার্তা গতকাল বিকালে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কার্যালয়ে এসে পেঁৗছেছে বলে টেলিফোনে নিশ্চিত করেন মেট্রো পুলিশের উপ-কমিশনার (সদর) শোয়েব আহাম্মদ। এ নিয়ে বিএমপিতে ঘুষ কেলেঙ্কারি ঘটনায় এ পর্যন্ত ১১ জনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো। এর আগে সোমবার বরখাস্ত হওয়া ১০ জন পুলিশ সদস্য সহকারী উপ-সহকারী পরিদর্শক (এএসআই) ও কনস্টেবল পদধারী। পুলিশ সদর দফতরের তদন্ত কমিটির নির্দেশে কনস্টেবলদের কাছ থেকে আদায় করা টাকা তাদের মাঝে ফেরত দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের বরিশাল শাখায় থাকা ১৭ লাখ টাকার পাশাপাশি গতকাল বরখাস্ত হওয়া উপ-কমিশনার জিল্লুর রহমান তার হেফাজতে থাকা ৫০ লাখ টাকা ফেরত দিয়ে গেছেন বলেও জানান উপ-কমিশনার (সদর) শোয়েব আহাম্মদ। এ টাকা দিয়েই আদায় করা সমুদয় টাকা ফেরত দেওয়া হচ্ছে। গত বছরের নভেম্বরে মেট্রোপলিটনে কর্মরত কনস্টেবল থেকে এএসআই পর্যন্ত প্রায় ৮০০ সদস্য পদোন্নতি পরীক্ষা দেন। এদের মধ্যে ৩৩২ জন পদোন্নতি পান; যার ২৩০ জনই কনস্টেবল। পদোন্নতি পেলেও তাদের পদায়নের কোনো জায়গা ছিল না। তাই পুলিশ সদর দফতরে প্রস্তাব আকারে পড়ে থাকা বরিশাল মেট্রোপলিটনের জনবল কাঠামো পাসের লক্ষ্যে মন্ত্রণালয়ে দেওয়ার জন্যই তারা এ ঘুষের তহবিল করেছিলেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। বর্তমানে মেট্রোপলিটন পুলিশে কমিশনার থেকে কনস্টেবল পর্যন্ত ১ হাজার ১৬৫ জন কর্মরত রয়েছেন। নতুন প্রস্তাবে এখানে সাড়ে ৫ হাজার পুলিশের পদ চাওয়া হয়েছে। এ প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে মঞ্জুর করানোর জন্যই ঘুষের তহবিল গঠন করেছিলেন এখানকার পুলিশের একদল সদস্য।
