শুক্রবার, ৩ জুলাই, ২০১৫ ০০:০০ টা

নিজ দুর্গেই ভালো নেই বিএনপি

নিজ দুর্গেই ভালো নেই বিএনপি

বিএনপির দুর্গ হিসেবে পরিচিত বগুড়ায় ভালো যাচ্ছে না দলটির দিনকাল। রাজপথে মিছিল, মিটিং নেই, দলীয় কার্যালয়ে নেতা-কর্মীও নেই। এক কথায় ভালো নেই বিএনপি। মামলার ভারে জর্জরিত নেতা-কর্মীদের কেউ জেলহাজতে, কেউ মামলার হাজিরা আর বাকিরা গাঢাকা দিয়ে পিঠ বাঁচিয়ে চলছেন। দলীয় নেতা-কর্মীসহ সাবেক সংসদ সদস্যরাও মাঠে না থাকায় বিএনপির দুর্গ এখন অরক্ষিত ঘাঁটিতে পরিণত হতে যাচ্ছে। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত জিয়াউর রহমানের জন্মভূমি বগুড়া। এ কারণে বিএনপি সাংগঠনিকভাবে সব সময় শক্তিশালী ছিল এখানে। প্রথম থেকেই বগুড়াকে বিএনপির দুর্গ বা ঘাঁটি বলা হতো। সংসদ নির্বাচনে বগুড়ার সাতটি আসনেই বিএনপির জয়জয়কার ছিল। কিন্তু ওয়ান-ইলেভেনের পর বগুড়ায় বিএনপির নাজুক অবস্থা শুরু হয়। ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে জেলার দুটি আসন হাতছাড়া হয়ে যায়। বগুড়া-১ আসনে জয়ী হন আওয়ামী লীগের আবদুল মান্নান ও বগুড়া-৬ আসনে হাবিবুর রহমান। বাকি পাঁচ আসনে বিএনপির প্রার্থীরা বরাবরের মতো জয়ী হন। সেই নির্বাচনের সময় থেকেই অভ্যন্তরীণ কোন্দলে জড়িয়ে পড়ে তৃণমূল বিএনপি। পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন না হওয়ায় কাহালু, শাহজাহানপুর ও শিবগঞ্জ উপজেলায় দ্বন্দ্ব প্রকাশ পায়। এ কোন্দলের সঙ্গে রাজনৈতিক টানাপড়েন যোগ হয়ে আজ টালমাটাল দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম। ৫ জানুয়ারির পর জেলা বিএনপির প্রায় সব নেতা মামলায় জড়িয়ে পড়েন। মামলায় জড়িয়ে কেউ আছেন হাজতে, আবার কেউ পালিয়ে, কেউ বা পিঠ বাঁচিয়ে আদালতে হাজিরা দিয়ে চলেছেন। বিভিন্ন কর্মসূচিও শেষ হয় দায়সারা। ৫ জানুয়ারির পর ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, পেট্রলবোমা হামলাসহ নানা অভিযোগে মামলায় প্রায় ২ শতাধিক নেতা এজাহারভুক্ত আসামি; যাদের অধিকাংশই জেলা বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতা। এদের সঙ্গে ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাও রয়েছেন। মামলায় প্রায় অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মী গ্রেফতার হয়েছেন; যাদের অনেকেই কারাগারে। দলীয় কার্যালয়ের পিওন শুধু আলো জ্বালিয়ে রাখলেও নেতা-কর্মীরা থাকেন না। জেলা পুলিশ সূত্র জানায়, গত জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত ২০-দলীয় জোটের টানা হরতাল-অবরোধ চলাকালে বগুড়ায় ৬৭টি যানবাহনে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এতে দগ্ধ হয়ে পাঁচ ব্যক্তি নিহত ও ২৪ জন আহত হন। এসব ঘটনায় ৭৩টি মামলা হয়েছে বিএনপি ও জামায়াত নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। বিএনপি নেতাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মামলা দাঁড়িয়েছে জেলা যুবদল সভাপতি ও বগুড়া পৌরসভার কাউন্সিলর সিপার আল বখতিয়ার, শহর যুবদল সভাপতি কাউন্সিলর মাসুদ রানা মাসুদ এবং সদর উপজেলা সভাপতি মাফতুন আহমেদ খান রুবেলের বিরুদ্ধে। মাসুদের বিরুদ্ধে ৯২, সিপারের বিরুদ্ধে ২৬ আর রুবেলের বিরুদ্ধে ২৩টি মামলা রয়েছে। শহর যুবদল সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম রনির বিরুদ্ধে মামলা ১৯টি। জেলা বিএনপি ও তার অঙ্গ সংগঠনের বাইরে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের নামেও রয়েছে একাধিক মামলা। জেলা বিএনপির সভাপতি ভিপি সাইফুল ইসলাম জানান, মামলার কারণে নেতা-কর্মীরা অনেকে জেলে এবং পুলিশি হয়রানি থেকে বাঁচতে দূরত্ব বজায় রেখেছেন। তবে এ অবস্থা সাময়িক। তিনি বলেন, নিয়মিত কার্যক্রম চলছে, ঝিমিয়ে পড়েনি। দলীয় কার্যালয়ে নেতা-কর্মীরা ওঠাবসা করছেন। ঈদের পর সংগঠন গোছানোর কাজ শুরু হবে।

সর্বশেষ খবর