সোমবার, ৬ জুলাই, ২০১৫ ০০:০০ টা

যোগদান বিতর্কে নাকাল রাজশাহী আওয়ামী লীগ

৫ জানুয়ারি নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে আগুন দেওয়া নেতারাও আছেন

যোগদান বিতর্কে নাকাল রাজশাহী আওয়ামী লীগ

রাজশাহীতে বিএনপি-জামায়াত থেকে দলে দলে যোগদান চলছে আওয়ামী লীগে। স্থানীয় সংসদ সদস্যরা তাদের যোগদান করাচ্ছেন। এদের মধ্যে ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে ও পরে নাশকতাকারী, ভোটকেন্দ্রে আগুন দেওয়া, পুলিশ হত্যা মামলার আসামিরাও আছেন। যোগদান চলছে নগরেও। মামলা থেকে রেহাই পেতে যোগদানের এ উৎসব চলছে বলে অভিযোগ ত্যাগী আওয়ামী লীগ নেতাদের। এ নিয়ে ক্ষোভ চলছে তৃণমূলেও। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ জানান, নাশকতাকারীরা দলে ঠাঁই পাওয়ার কথা নয়। কোথাও কোথাও নাশকতাকারীরা যোগদান করেছেন বলে তিনি শুনছেন। বিষয়টি কেন্দ্রকে মৌখিকভাবে জানানো হয়েছে। তৃণমূল থেকে লিখিত অভিযোগ পেলে ওই সংসদ সদস্য বা নেতার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের অনুষ্ঠানে জামায়াত নেতা জাহিদুল ইসলামকে আওয়ামী লীগে যোগদান করানোর মধ্য দিয়ে রাজশাহীতে এ ধারার সূচনা করেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী। জামায়াতের সমর্থনে জাহিদুল ইসলাম গোদাগাড়ী উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ওই জামায়াত নেতার যোগদানের পর থেকে স্থানীয় আওয়ামী লীগে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। ২২ মার্চ তানোর উপজেলার মুণ্ডুমালা পৌর যুবলীগের সম্মেলনে শতাধিক বিএনপি নেতা-কর্মী আওয়ামী লীগে যোগ দেন। এই যোগদানের নেতৃত্ব দেন উপজেলার বাধাইড় ইউনিয়ন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম। অভিযোগ আছে, নাশকতার মামলার আসামিরাও আছেন যোগদানের তালিকায়। এ অবস্থায় পুলিশ যোগদান করা ব্যক্তিদের নাম বাদ দিয়ে আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছে। ১০ এপ্রিল বাগমারায় যোগদান করেন উপজেলা জামায়াতের সাবেক সেক্রেটারি নুরুল ইসলাম। স্থানীয় সংসদ সদস্য এনামুল হকের মালিকানাধীন বঙ্গবন্ধু জাদুঘর কমপ্লেক্সে এ যোগদান অনুষ্ঠান হয়। জামায়াতের এই নেতার যোগদানের পেছনে আওয়ামী লীগ নেতাদের যুক্তি, ‘জামায়াতে অনেক ভালো লোক আছে’। বাগমারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি মতিউর রহমান টুকু বলেন, ‘জামায়াতে অনেক ভালো লোক আছেন। খোঁজখবর নিয়েই তাকে দলে নেওয়া হয়েছে।’
গত ৫ জানুয়ারি নির্বাচন করতে না দিতে চেয়ে ভোটকেন্দ্রে আগুন দেওয়া রাজশাহীর চারঘাটের বিএনপি নেতা মোখলেসুর রহমান ও জামায়াত কর্মী হুমায়ুন কবির ফুলের মালা গলায় দিয়ে আওয়ামী লীগে যোগদান করেছেন। গত ৪ জুলাই পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম তাদের বরণ করে নেন। একই অনুষ্ঠানে জামায়াতের এক কর্মীও সরকারি দলে যোগ দেন। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক দফতর সম্পাদক জালাল উদ্দিন বিশ্বাস বলেন, ‘যারা যোগ দিয়েছে তারা দলের ক্ষতি করবে। এতে নিবেদিত কর্মীরা মূল্যহীন হয়ে পড়বেন। যারা আগে আমাদের মারধর করেছে এখন তারা আমাদের নেতা হবে।’ এদিকে যোগদানের পর মোখলেছুর রহমান স্বীকার করেন, তার নামে ভোটকেন্দ্র পোড়ানো, ভোটের দিনে হামলা, ২০১২ সালে ১৪৪ ধারা ভঙ্গের মামলা আছে। এসব মামলা তুলে নেওয়ার শর্তে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি তারা (আওয়ামী লীগ নেতারা) দেখবেন বলে জানিয়েছেন।
জেলার মতো নগরীতেও চলছে যোগদান উৎসব। ইতিমধ্যে রাসিকের একাধিক বিএনপিপন্থি কাউন্সিলরকে যোগদান করানো হয়েছে। আরও নয়জনকে যোগদানের প্রক্রিয়া চলছে। গত ৬ জুন বিএনপিপন্থি কাউন্সিলররা আওয়ামী লীগে যোগ দিতে গভীর রাতে নগর আওয়ামী লীগ সভাপতি এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনের বাড়িতে বৈঠকও করেছেন। এসব কাউন্সিলর ও বিএনপি নেতাদের নামে পুলিশ কনস্টেবল সিদ্ধার্থ রায় হত্যা, নগরীতে নাশকতার একাধিক মামলা আছে। এ বিষয়ে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার জানান, যারা পেট্রলবোমায় মানুষ পুড়িয়েছে তাদের সুবিধা দেওয়ার জন্য আওয়ামী লীগে যোগদানের সুযোগ দেওয়া হবে না। এতে আওয়ামী লীগ সমর্থক কাউন্সিলরা আপত্তি জানিয়েছেন। তারা ভেবে-চিন্তে ভালো লোকদের দলে নেবেন।

সর্বশেষ খবর