বুধবার, ৮ জুলাই, ২০১৫ ০০:০০ টা

তৃতীয় ও চতুর্থ মেধাতালিকা ‘শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতারণা’

হতাশ মেধাবীরা ভিকারুননিসায় বিক্ষোভ

তৃতীয় ও চতুর্থ মেধাতালিকা ‘শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতারণা’

রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে মনোনীত মাইগ্রেট ৪৪ ছাত্রীকে ভর্তি না করানোর প্রতিবাদে গতকাল তারা কলেজের সামনে বিক্ষোভ করে -বাংলাদেশ প্রতিদিন

একাদশে ভর্তির ক্ষেত্রে তৃতীয় ও চতুর্থ মেধাতালিকা ‘শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতারণা’ ছাড়া কিছুই নয়- এমন মন্তব্য করেছেন অনেক অভিভাবক। কারণ দ্বিতীয় মেধাতালিকায় যারা সুযোগ পাবে না, তাদের জন্য তৃতীয় ও চতুর্থ মেধাতালিকা প্রকাশ করা হবে বলে বোর্ড কর্তৃপক্ষ যে ঘোষণা দিয়েছিল, প্রকৃতপক্ষে এমন কোনো মেধাতালিকা নেই। এতে প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ দ্বিতীয় মেধাতালিকায় বাদ পড়া শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা। এদিকে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির জন্য দুই দফা মেধাতালিকা প্রকাশ করা হলেও এতে স্থান পায়নি অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী। এসএসসিতে সর্বোচ্চ ভালো ফলাফল বা জিপিএ-৫ পেয়েও মেধাতালিকায় নাম না আসায় একেবারেই ভেঙে পড়েছে তারা। সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিনাতিপাত করছেন তাদের অভিভাবকরা। অন্যদিকে গতকাল ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ রাজধানীর বড় বড় কলেজের সামনে ভর্তির দাবি নিয়ে ভিড় করতে দেখা যায় ভর্তিপ্রার্থী শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের। একই সঙ্গে মাইগ্রেশনের মাধ্যমে পছন্দের কলেজে ভর্তি হতে না পেরে গতকাল ঢাকা শিক্ষা বোর্ডেও ভিড় জমায় শিক্ষার্থীরা। ভুক্তভোগীরা বলছে, কর্তৃপক্ষের ভুলে ভর্তি-নৈরাজ্য সৃষ্টি হলে অতিরিক্ত আরও যে দুটি মেধাতালিকা প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, এমন কোনো মেধাতালিকা প্রকাশ করা হচ্ছে না। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রথম ও দ্বিতীয় মেধাতালিকায় সুযোগ পেয়ে যেসব শিক্ষার্থী ভর্তি হয়ে গেছে কিন্তু পছন্দের কলেজ না পেয়ে মাইগ্রেশনের জন্য আবেদন করবে, তাদের জন্য এবং যারা এ দুই মেধাতালিকায় নির্বাচিত হয়নি তাদের রিলিজ স্লিপের মাধ্যমে আবেদনের সুযোগ থাকছে। সেখানে ভর্তি না হওয়া শিক্ষার্থীদের নতুন করে পছন্দের কলেজে ভর্তি হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এর আগে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু বক্কর সিদ্দিক ঘোষণা দিয়েছিলেন, যেসব শিক্ষার্থী প্রথম ও দ্বিতীয় মেধাতালিকায় মনোনীত না হবে, তাদের জন্য তৃতীয় ও চতুর্থ মেধাতালিকা প্রকাশ করা হবে। এতে কোনো শিক্ষার্থীকে নতুন করে আবেদন করতে হবে না। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, তৃতীয় ও চতুর্থ মেধাতালিকা বলতে কোনো মেধাতালিকাই প্রকাশ করা হচ্ছে না। অনেক অভিভাবক ঢাকা বোর্ড প্রধানের এহেন অযাচিত ও বিবেচনাহীন মন্তব্যকে ‘শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতারণা’ বলে উল্লেখ করেছেন। এ বিষয়ে জানতে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু বক্কর সিদ্দিকের সঙ্গে কয়েক দফা যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এদিকে সোমবার প্রকাশিত দ্বিতীয় মেধাতালিকায় ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে ভর্তিপ্রার্থীদের মনোনয়ন দেওয়া হলেও গতকাল তাদের ঢুকতে দেয়নি প্রতিষ্ঠানটি। সকাল থেকেই ভর্তির দাবিতে কলেজটির সামনে অবস্থান নেয় মনোনয়নপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা। কলেজের পক্ষ থেকে তাদের জানানো হয়, ভর্তির জন্য নির্ধারিত আসন শেষ হয়ে গেছে, এখন আর ভর্তি নেওয়া হবে না। এতে ভর্তিপ্রার্থী শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে স্কুল-সংলগ্ন বেইলি রোডে অবস্থান নেয়। এ সময় তারা রাস্তা অবরোধের চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের সরিয়ে দেয়। এ খবর শিক্ষা সচিব নজরুল ইসলাম খান এবং ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু বক্কর ছিদ্দিকের কাছেও পৌঁছায়। পরে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান কলেজ অধ্যক্ষকে এ বিষয়ে ফোনে ছাত্রীদের ভর্তির নির্দেশ দেন। এরপর এক জরুরি বৈঠক শেষে কলেজ কর্তৃপক্ষ মনোনীতদের ভর্তির সিদ্ধান্ত নেন।
সন্ধ্যায় ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ সুফিয়া খাতুন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা শিক্ষা বোর্ডের সঙ্গে আনুগত্য প্রকাশ করে মনোনীত ছাত্রীদের ভর্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আগামীকাল তাদের আসার কথাও বলেছি।’ আসন না থাকা সত্ত্বেও কীভাবে ভর্তি করবেন, জানাতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘বোর্ড যেহেতু আমাদের ওপর সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিয়েছে, তাই আমরা তাদের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে বাধ্য হচ্ছি। তবে কীভাবে সবাইকে ভর্তি করব তা এখনো নিশ্চিত হতে পারিনি।’ বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা অভিযোগ করে জানান, সোমবার ওয়েবসাইটে ফলাফল প্রকাশের পর তারা মোবাইল ফোনেও মেসেজ পান। সে অনুযায়ী পছন্দের এই কলেজে (ভিকারুননিসা) ভর্তি হতে এসে এমন কথা শোনেন। দোটানায় পড়া এই শিক্ষার্থীরা আদৌ ভর্তি হতে পারবে কি না তা নিয়ে সৃষ্টি হয় সংশয়। এর আগে প্রথম মেধাতালিকা প্রকাশের পর ভিকারুননিসা থেকে পাস করা অনেক শিক্ষার্থীর নাম না এলেও কলেজের অধ্যক্ষ তার নিজ বিচারে ওইসব ‘মেধাবীদের’ ভর্তি করিয়ে নেন। সবশেষে ১৩টি আসন শূন্য থাকলেও দ্বিতীয় মেধাতালিকায় ৪৪ জনকে মনোনীত করে ভর্তি কমিটি। গতকাল রাজধানীর বহু শিক্ষার্থীই এভাবে বাংলাদেশ প্রতিদিনের কাছে তাদের অভিযোগ জানিয়েছেন। মনিপুর স্কুল থেকে পাস করা এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক জানান, তার একমাত্র সন্তান এসএসসিতে একটি ছাড়া সব বিষয়েই জিপিএ-৫ পেয়েছে। অথচ দুই দফা মেধাতালিকায় তার নাম আসেনি। এ নিয়ে শিক্ষার্থীর সঙ্গে সঙ্গে ভেঙে পড়েছে তার পরিবারও। শিক্ষা বোর্ডের সামনে কথা হয় ভর্তিপ্রার্থী মুজাহিদুল ইসলামের সঙ্গে। সে জানায়, ‘প্রথম মেধাতালিকা প্রকাশিত হওয়ার পর দ্বিতীয় তালিকার জন্য আশায় বুক বেঁধে ছিলাম। শিক্ষামন্ত্রী বলেছিলেন, কোনো মেধাবীই পছন্দের কলেজে ভর্তি হওয়া থেকে বঞ্চিত হবে না। কিন্তু জিপিএ-৫ অর্জন করেও আমি কোনো কলেজে ভর্তির জন্য নির্বাচিত হইনি। আমি এখন দুই চোখে অন্ধকার দেখছি।’ একাদশে ভর্তির জন্য মোট ১১ লাখ ৫৬ হাজার ২৫৩ জন শিক্ষার্থী আবেদন করেছিল। সেখান থেকে যাচাই-বাছাই করে প্রথম দফায় প্রকাশিত মেধাতালিকায় মনোনীত করা হয় ১০ লাখ ৯৩ হাজার জনকে। এতে অনেকে সুযোগ না পাওয়া, পছন্দের কলেজ না পাওয়া, ভুল তথ্য পাওয়াসহ অনলাইনে ভর্তি নিয়ে নানা নৈরাজ্য তৈরি হলে শিক্ষামন্ত্রী দুঃখ প্রকাশ করেন। একই সঙ্গে শিক্ষা সচিবসহ সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষ অতিরিক্ত দুটি মেধাতালিকা প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেন। তারা বলেন, ‘কিছুটা ভুল’ হলেও সব শিক্ষার্থীই তাদের মেধা অনুযায়ী পছন্দের কলেজে ভর্তির সুযোগ পাবে।
প্রথম মেধাতালিকা প্রকাশের পর ভর্তির সুযোগ না পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৬২ হাজার ৮৫০ জন। সোমবার প্রকাশিত দ্বিতীয় মেধাতালিকায় ভর্তির জন্য মনোনীত করা হয় ১০ হাজার ৭২৬ জনকে। একই সঙ্গে মাইগ্রেশনের মাধ্যমে উত্তীর্ণ করা হয় আরও ৬ হাজার ৯২১ জনকে। সব মিলিয়ে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির জন্য দ্বিতীয় মেধাতালিকা প্রকাশের পরও সারা দেশের ৫২ হাজার ১২৪ জন ভর্তিপ্রার্থী শিক্ষার্থী কোনো কলেজে ভর্তির জন্য মনোনীত হয়নি।

সর্বশেষ খবর