রবিবার, ১২ জুলাই, ২০১৫ ০০:০০ টা

যুগান্তকারী পদক্ষেপ ঈদের পর

সাঈদ খোকন

যুগান্তকারী পদক্ষেপ ঈদের পর

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন বলেছেন, ‘জলাবদ্ধতা, যানজট নিরসন ও ভাঙাচোরা রাস্তাঘাট সংস্কারে ঈদের পর যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। এক বছরের মধ্যেই এর ফল ভোগ করবেন নগরবাসী। ময়লা-আবর্জনা যথাসময়ে ফেলা ও সঠিক সময়ে সরানোর কাজ ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। বাসযোগ্য নগরী গড়ে তোলা নগরবাসীর সহায়তা ছাড়া আমার একার পক্ষে সম্ভব নয়।’ বনানীতে নিজ বাসায় বাংলাদেশ প্রতিদিনের একান্ত আলাপচারিতায় গতকাল মেয়র এসব কথা বলেন। দায়িত্ব গ্রহণের দুই মাস কেমন কাটল, যানজট নিরসন, জলাবদ্ধতা দূরীকরণ, যথাসময়ে বর্জ্য সরানো, সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে কথা বলেন ঢাকার প্রথম নির্বাচিত প্রয়াত মেয়র মোহাম্মদ হানিফের ছেলে তরুণ মেয়র সাঈদ খোকন।
সাঈদ খোকন বলেন, ‘দায়িত্ব গ্রহণের দুই মাস পার করলাম। এর মধ্যে বেশ কিছু সমস্যার সমাধানে উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। তবে জটিলতা রয়েই গেছে। দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান সমস্যা যানজট ও জলাবদ্ধতা। এগুলো সরাসরি মেয়রের বা সিটি করপোরেশনের দায়িত্বে পড়ে না। যানজট নিরসনে কাজ করবে ট্রাফিক বিভাগ। জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ করবে ঢাকা ওয়াসা। তবে এগুলো সিটি করপোরেশন সমন্বয় করছে। আমার দায়িত্বভার গ্রহণের পরপরই যানজট নিরসনে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে শাহবাগ পর্যন্ত সঠিকভাবে যান চলাচলে এবং যানজট যেন সৃষ্টি না হয় সে জন্য কমিটি গঠন করেছি। এ রাস্তাটি দ্রুততম সময়ে পার হতে পারলে যানজট অনেকটা দূর করা সম্ভব। অন্যদিকে মগবাজার ফ্লাইওভার নির্মাণ এগিয়ে চলেছে। এটি সম্পন্ন হলে যানজট দূর হবে।’ তিনি বলেন, ‘এই মগবাজার এলাকায় রাস্তার ওপর ফ্লাইওভার নির্মাণাধীন প্রতিষ্ঠানের যন্ত্রপাতি পড়ে থাকায় যানজট সৃষ্টি হতো। আমি প্রতিষ্ঠানের প্রধানের সঙ্গে কথা বলেছি। সেগুলো রাস্তা থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ট্রাফিক বিভাগের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করে রাস্তার ওপর অবৈধ দখল ও দোকানপাট উচ্ছেদ করার ফলে যানজট কিছুটা কমেছে। তবে পুরোপুরি মুক্ত করতে সময় প্রয়োজন। যানজট নিরসন করতে সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হবে। এ ছাড়া এক গাড়িতে একজন মানুষ, এটি বন্ধ করতে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। কমপক্ষে তিনজন করে একটি গাড়িতে মানুষ থাকতে হবে, এমন একটি উদ্যোগ গ্রহণ করার পরিকল্পনা রয়েছে। নইলে যানজট সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হবে না। যানজট বিনিয়োগকারীদের জন্য নেতিবাচক বার্তা দিয়ে যাচ্ছে। বিনিয়োগকারীরা না এলে আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন হবে না।’ তিনি বলেন, ‘আমি সব জায়গায় হাত দিতে চাই না। নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় হাত দেব, যেখানে ইতিবাচক ফলাফল শিগগিরই ঢাকাবাসী উপভোগ করতে পারবেন।’
সাঈদ খোকন বলেন, ‘জলাবদ্ধতা নিরসনে ইতিমধ্যে ঢাকা ওয়াসাকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে। বৃষ্টি মৌসুমে আমি নিজেই শান্তিনগর এলাকায় পানির মধ্যে নেমে এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে দুঃখ-দুর্ভোগ বোঝার চেষ্টা করেছি। ঈদের পর এখানকার জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। আগামী বৃষ্টি মৌসুমের আগেই শান্তিনগরবাসী সুবার্তা পাবেন। আশা করি আর জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হবে না।’ তিনি বলেন, জলাবদ্ধতার পেছনে দুই ধরনের কথা প্রচলিত আছে। একটি হলো, নিুাঞ্চলে বালু ভরাট করে পানি নিষ্কাশনের রাস্তা বন্ধ করার ফলে এ অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। দুই. প্রশাসক দিয়ে সিটি করপোরেশন চালানোর কারণে দীর্ঘদিন ধরে ড্রেনেজ পরিষ্কার করা হয়নি। ফলে মানুষের দুর্ভোগ রয়ে গেছে। রাস্তাঘাট সংস্কার প্রসঙ্গে দক্ষিণের মেয়র বলেন, ‘সিটির অনেক রাস্তাঘাট ভাঙাচোরা ও খনাখন্দে ভরা। অর্থ না থাকায় এগুলো সংস্কার করতে পারছি না। তবে পরিকল্পনা বিভাগে প্রকল্প দেওয়া আছে। অনুমোদন হলেই কাজ শুরু হবে।’ তিনি জানান, রাস্তাঘাট উন্নয়নের জন্য এগুলো সিসি (সিমেন্ট ও কনক্রিট) দিয়ে তৈরি করা হবে, যাতে ১০ বছরেও নষ্ট না হয়। তিনি বলেন, ‘টেকসই উন্নয়ন করতে হবে। আজকে রাস্তাঘাট বানালাম, দুই মাস পর খনাখন্দে ভরে গেল, সেটি নয়। নগরবাতি শতভাগ নিশ্চিত করব। জলাবদ্ধতা নিয়ে ওয়াসার সঙ্গে কথা বলেছি। এই বৃষ্টি মৌসুম যাওয়ার পর স্পেশালি শান্তিনগরের জন্য একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করব। যানজট নিরসনে একবারে সব জায়গায় হাত দেব না। মূল জায়গা বিমানবন্দর থেকে শাহবাগ পর্যন্ত খুব সহজেই যাওয়া-আসার জন্য যা পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন তা নেব।’
বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে মেয়র বলেন, ‘আগের দিনে যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা পড়ে থাকত। এখন কিন্তু সে চিত্র নেই বললেই চলে। যথাসময়েই বর্জ্য অপসারণ করা হচ্ছে। সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে পলিথিন বিতরণ করা হচ্ছে। তবে পলিথিন বিতরণ করে শতভাগ পলিথিন রিটার্ন পাওয়া যায়নি। এর মানে, মানুষ ময়লা-আবর্জনা না ফেলে তা ঘরের কাজে ব্যবহার করছেন। ফলে আমাদের উদ্যোগ কাজে আসছে না। এ জন্য ওয়ার্ডভিত্তিক একটি পাইলট প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তা বিতরণ করতে বলা হয়েছে। কাউন্সিলররা সেভাবেই বিতরণ করছেন।’ তিনি বলেন, ‘আমার একার পক্ষে কোনো কিছুই সম্ভব নয়। বিশাল ঢাকায় মানুষ যদি নিজ নিজ দায়িত্ববোধটুকু বোঝেন এবং সঠিকভাবে তা পালন করেন, তাহলে সব সমস্যার অর্ধেক সমাধান হয়ে যাবে। বিশেষ করে অতিরিক্ত গাড়ি, যত্রতত্র ময়লা-আর্বজনা না ফেলা, রাস্তা দখল বন্ধ এবং পানি নিষ্কাশনের মুখ বন্ধ না করলেই ঢাকাবাসী সংকটমুক্ত হবে।’ নগর ভবনের সিন্ডিকেট প্রসঙ্গে সাঈদ খোকন বলেন, ‘দায়িত্বভার গ্রহণ করা পর্যন্ত সেই সিন্ডিকেট আমার চোখে পড়েনি। অন্যদিকে আমাদের (আওয়ামী লীগের) সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা এখনো কোনো আপত্তিকর ঘটনা ঘটাননি। তবে আমার দায়িত্বভার গ্রহণের আগে কিছু অনিয়ম ছিল। প্রতিটি জায়গায় বিশৃঙ্খলা ছিল। আমি এগুলো সমাধানের চেষ্টা করছি। নগর ভবনের সবাই সহযোগিতা করছেন।’ঢাকাবাসীর উদ্দেশে মেয়র বলেন, ‘আমার সবটুকু দিয়ে ঢাকাবাসীর জন্য কাজ করতে চাই। প্রধানমন্ত্রী আমাকে স্নেহ করেন। তার আশীর্বাদ আছে, দোয়া আছে, গাইডলাইন আছে, নিদের্শনা আছে। এই শহরের মানুষের জন্য আমি কাজ করব। বাবার মতো নগরবাসীর যেন সেবা করতে পারি, সে জন্য ঢাকাবাসীকে পাশে চাই। আসুন, আমরা সুন্দর বাসযোগ্য নগরী গড়ে তুলতে একসঙ্গে কাজ করি।’

সর্বশেষ খবর