সারা দেশে রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকশিল্পে কর্মরত ১ হাজার ৩৭২টি কারখানার শ্রমিকরা এখনো তাদের বেতন-বোনাস পাননি বলে জানিয়েছেন খোদ মালিকরা। এর মধ্যে পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সদস্য ১০৫২টি এবং বিজিএমইএর সদস্য ৩২০টি কারখানা রয়েছে। যদিও সরকার ও মালিকপক্ষ আগেই ঘোষণা দিয়েছিল- সব শ্রমিকের বেতন ১০ জুলাই এবং ঈদ বোনাস আজ ১৪ জুলাইয়ের মধ্যে পরিশোধ করবেন তারা। প্রতিশ্র“তি মোতাবেক পোশাক মালিকরা শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধ না করায় কঠোর অবস্থানে রয়েছে সরকার। পুলিশি নজরদারিতে রয়েছেন শ্রমিক নেতারা।
১৩৭২টি পোশাক কারখানার শ্রমিকদের বেতন না দেওয়া প্রসঙ্গে শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু বাংলাদেশ প্রতিদিনকে গতকাল রাতে বলেন, সংখ্যাটা আমার কাছে নেই। তবে কিছু কারখানা সত্যি বেতন দেয়নি। আবার কিছু কারখানা মালিক-শ্রমিক সমঝোতার ভিত্তিতে বেতন-বোনাস দেয়নি। এ নিয়ে কোনো অভিযোগও নেই। তবে আমি আশা করি, ঈদের আগে শত ভাগ শ্রমিক তাদের বেতন-বোনাস পাবেন। আন্দোলনরত সোয়ান গার্মেন্টেসের শ্রমিকের বেতন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সোয়ানের মালিক মারা গেছেন। তাই আদালতের অনুমতি ছাড়া টাকা তোলা যাবে না। তাদের সমস্যা ঈদের আগে সমাধান করা যাবে না দাবি করে তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমি আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলেছি।
বিকেএমইএর তথ্যমতে, গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত তাদের ২ হাজার ১৯টি সদস্য কারখানার মধ্যে ১ হাজার ৫২টি কারখানার শ্রমিকরা বেতন-বোনাস পাননি। আর বিজিএমইএ’র তথ্যমতে, তাদের ৩ হাজার ২০০টি সদস্য কারখানার মধ্যে ১০ শতাংশ বা ৩২০টি কারখানার শ্রমিকরা গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত বেতন-বোনাস পাননি।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি আতিকুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সারা দেশে আমাদের ৩ হাজার ২০০টি কারখানার ৯০ শতাংশই ইতিমধ্যে বেতন দিয়েছে। ১০ শতাংশ কারখানার বেতন পরিশোধ বাকি আছে। বোনাস আইনে নেই। তবে ৬৫ শতাংশ কারখানা ভাতা দিয়েছে। বাকিরা ২ থেকে ৩ দিনের মধ্যে শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ করবে। বাংলাদেশ নীটওয়্যার প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিকেএমইএ) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সুলভ চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে গতকাল বলেন, আমাদের ২ হাজার ১৯টি সদস্য কারখানার মধ্যে বড় ও সক্রিয় ৯৬২টি পোশাক কারখানা তাদের শ্রমিকদের বেতন-বোনাস দিয়েছে। বাকিরা দু-একদিনের মধ্যেই পরিশোধ করবেন। বিকেএমইএ’র কর্মকর্তার বক্তব্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত তাদের ১ হাজার ৫২টি কারখানার শ্রমিকরা বেতন-বোনাস পাননি। এ প্রসঙ্গে গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্টের সভাপতি মোশরেফা মিশু নিজের হাতিরপুলের সার্কুলার রোডের বাসায় গৃহবন্দী দাবি করে গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমাকে দুই দিন যাবৎ গৃহবন্দী করে রেখেছে পুলিশ। তারা বলেছে, আমি যেন বাসা থেকে বের না হই। এ অবস্থায় পোশাক শ্রমিকদের খোঁজ-খবর নিয়ে জানতে পেরেছি, ৪০ শতাংশ গার্মেন্টস এখনো বেতন-বোনাস দেয়নি।
সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি নাজমা আক্তার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, মালিকরা কিছু বেতন দিয়েছে। কিন্তু কিছু জায়গায় শ্রমিকরা পায়নি। কিছু বেতন দেওয়া হলেও, বোনাস দেওয়া শুরু হয়নি। তবে দু-একটা কারখানা বোনাস দিয়েছে। গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার গত দুদিন যাবৎ সোয়ান গার্মেন্টেসের শ্রমিকদের নিয়ে প্রেসক্লাবে অবস্থান করছেন উল্লেখ করে তিনি গতকাল রাতে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সোয়ান গার্মেন্টেসের ১৩শ শ্রমিক গত ৩ মাসেও বেতন পায়নি। পুলিশি নির্যাতন ও নজরদারির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এবার ঈদকে সামনে রেখে বিজিএমইএ-বিকেএমইএ ও সরকার কথা রাখেনি শ্রমিকদের সঙ্গে। ৫০ শতাংশেরও কম কারখানা বেতন-বোনাস দিয়েছে। বাকিরা দেয়নি। জানা গেছে, রাজধানীর দক্ষিণখানের সোয়ান গার্মেন্টের শ্রমিকরা গত তিন মাসের বেতন পাননি। কারখানায় প্রায় ১৩শ শ্রমিক বেতন আদায়ে বিজিএমইএ ও শ্রম মন্ত্রণালয় ঘেরাও করেন পাওনা টাকা হাতে পাননি। এখন তারা প্রেসক্লাবের সামনে দুই দিন যাবৎ অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন। ঢাকার বাইরে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা শিল্পাঞ্চলের বেশ কয়েকটি পোশাক কারখানাতেও শ্রমিক অসন্তোষের আশঙ্কা করা হচ্ছে। সেই এলাকার শ্রমিকদের নেতৃত্ব দেওয়া সংগঠন গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র জানিয়েছে, ফতুল্লার অনেকগুলো কারখানায় দীর্ঘদিন ধরে বেতন-বোনাস নিয়ে অসন্তোষ চলছে। বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতারা জানিয়েছেন, যদি কোনো পোশাক মালিক ঈদের আগে বেতন দিতে ব্যর্থ হন তবে ঈদের দিন তারা সংশ্লিষ্ট কারখানায় অবস্থান করবেন।
চট্টগ্রামে পোশাক শ্রমিকদের বিক্ষোভ : বকেয়া বেতনের দাবিতে নগরীর আন্দরকিল্লায় মাসুদা ফেব্রিক্স প্রাইভেট লিমিটেড নামের একটি পোশাক কারখানায় বিক্ষোভ করছে শ্রমিকরা। গতকাল সকাল থেকে কারখানার সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন তারা।