বুধবার, ১৫ জুলাই, ২০১৫ ০০:০০ টা

চাঁদরাতে হাত রাঙাবে মেহেদি

চাঁদরাতে হাত রাঙাবে মেহেদি

ঈদ মানে খুশি। আর ঈদের খুশিতে সাজগোজ মানেই মেহেদিরাঙা হাত। শাওয়ালের আকাশে তাই ঈদের চাঁদ উঁকি দিলেই শুরু হয় হাত রাঙানোর পালা। আর সে কারণেই ঈদবাজারে প্রসাধনীর দোকানজুড়ে এখন মেহেদির রাজত্ব। ছোট-বড় সবার কেনাকাটার তালিকায় সবচেয়ে কমন আইটেমের নাম মেহেদি। রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গতবারের তুলনায় এবার মেহেদির রংঢং, দাম- সব কিছুতেই এসেছে বৈচিত্র্য। তবে নকলের ভিড়ে আসল মেহেদি পাওয়া নিয়ে কিছুটা শঙ্কায়ও রয়েছেন ক্রেতারা। বিশেষ করে গত বছর দেশের বিভিন্ন স্থানে মেহেদির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখে সচেতন ও সামর্থ্যবান ক্রেতারা কেবল নামিদামি ব্র্যান্ডের দিকেই ঝুঁকছেন।
গতকাল রাজধানীর বসুন্ধরা শপিং কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা গেছে দেশি-বিদেশি ব্র্যান্ডের প্রসাধনীর দোকানগুলোয় মেহেদি কেনার হিড়িক। দোকানিরা জানান, এবার দেশীয় কোম্পানির মেহেদির পাশাপাশি বিদেশি কোম্পানির মেহেদির কদর বেড়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে পাকিস্তানি ‘কোন মেহেদি’। এ ছাড়া নামিদামি ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে আলমাসের কদরও বেশ। সেই সঙ্গে আছে দেশি-বিদেশি গ্লিটার বা জরি মেহেদি। তবে দাম বিবেচনায় গড়পড়তায় দেশীয় কোম্পানির মেহেদিগুলোই বেশি বিক্রি হচ্ছে।
এবার মেহেদির রঙেও এসেছে বৈচিত্র্য। মেহেদি বলতে কেবল মেহেদি নয়, এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বাহারি রং। আধুনিক ফ্যাশন ও সাজগোজের অংশ হিসেবে লাল নীল সবুজ রঙেরও মেহেদি পাওয়া যাচ্ছে বাজারে। রাজধানীর ফুটপাথগুলোয় দেশীয় কোম্পানির তৈরি মেহেদির পসরা সাজিয়ে বসেছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। সেখানে নিু আয়ের লোকজনেরই ভিড় বেশি।
ফার্মগেট মোড়ের ফুটপাথে বসা দোকানে মেহেদি কিনতে আসা বৃষ্টি বলে, ‘মেহেদি ছাড়া ঈদ হয় নাকি? চাঁদরাতে বড় আপা আমাদের সব ভাই-বোনকে মেহেদি দিয়ে সাজিয়ে দেন, তাই দুইটা টিউব মেহেদি কিনলাম।’ বড় বড় শপিং মল, মধ্যমসারির দোকান ও ফুটপাথের খুচরা দোকানির সঙ্গে কথা বলে দেখা গেছে সবখানেই মেহেদির দাম মোটামুটি এক। তারা দ্রব্যের গায়ে কোম্পানির দেওয়া নির্ধারিত মূল্য মেনেই সেগুলো বিক্রি করছেন। তবে ফুটপাথের কিছুু দোকানে ৫-৭ টাকা বেশি রাখার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
দেশীয় কোম্পানির তৈরি মেহেদির দাম শুরু হচ্ছে ৩৫ টাকা থেকে। টিউব মেহেদির দাম মোটামুটি ৪৫ টাকার মধ্যেই। তবে একই কোম্পানির কোন মেহেদিগুলো বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭৫ টাকায়। পাকিস্তানি ও আলমাসের কোন মেহেদির দাম রাখা হচ্ছে ৭০ থেকে ১০০ টাকা। এর বাইরে ছোটদের পছন্দের তালিকায় থাকছে গ্লিটার। সাধারণত সোনালি ও রুপালি রঙের এ জরির গ্লিটারের দাম কোম্পানিভেদে ৪০ থেকে শুরু করে ১০০ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে।
মিরপুরে মুক্তিযোদ্ধা মার্কেটে ঈদের কেনাকাটা করতে আসা শারমিন রূপা বলেন, ‘গত বছর বহু জায়গায় শুনেছি মেহেদি লাগিয়ে হাতে ফোসকা পড়েছে বা স্কিন পুড়ে গেছে। ফেসবুকে এ রকম অনেক ছবিও দেখেছি। আর সে কারণে এবার একটু ভয় পাচ্ছি। তবুও ভালো ব্র্যান্ড দেখে একটি কিনে ফেললাম।’রমজান শুরু হতে না হতেই বিভিন্ন টেলিভিশন, পত্রিকায় বা গণমাধ্যমে শুরু হয় মেহেদির আকর্ষণীয় সব বিজ্ঞাপন। মূলত দেশীয় কোম্পানিই এ বিজ্ঞাপনগুলো বেশি দিয়ে থাকে। তারা কেউ বলে আসল রঙের কথা, কেউ দামের কথা, আবার কেউ বা ২-৫ মিনিটেই রঙের কথা বলে। চেষ্টা করে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করার। তবে দ্রুত রং হলেও অনেক ক্রেতার অভিযোগ, মেহেদি তৈরিতে ক্ষতিকর এসিড ব্যবহার করায় বাচ্চাদের স্কিনে অনেক সময় জ্বালাপোড়া সৃষ্টি করে। কেউ কেউ আবার অভিযোগ করে বলেন, বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে তৈরি আজকের মেহেদিগুলোয় আর সেই প্রাকৃতিক গাছের মেহেদির রং পাওয়া যায় না। অনেক সময় অতিরিক্ত লাল বা কালোর কারণে মেহেদির আসল রংই ঢাকা পড়ে যায়।

সর্বশেষ খবর